নরসিংদীতে ৬ খুন: ভাড়াটে সন্ত্রাসী আসে নিলক্ষা থেকে

২৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৫ পিএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১২ এএম


নরসিংদীতে ৬ খুন: ভাড়াটে সন্ত্রাসী আসে নিলক্ষা থেকে

রাকিবুল ইসলাম:
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল শ্রীনগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে থেমে থেমে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত মোট ৬ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া, দিনব্যাপী এই ঘটনায় টেটা,গুলি ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়। আহতরা নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং নিহতদের মরদেহ শুক্রবার ( ২৩ আগস্ট) বিকেলে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

 

 

একদিনে ৬ জন নিহতের পরই চরাঞ্চলসহ পুরো উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ সেই সাথে চলছে নানাবিধ আলোচনা সমালোচনা। এলাকাবাসী ও স্থানীয় সাবেক জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যের ওপর ভর করলে রায়পুরার শ্রীনগরের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঝগড়ার মূল হোতা হিসেবে একাধিকবার একটি নাম বারবার সামনে আসছে শ্রীনগরের সায়দাবাদ গ্রামের আবু হানিফ জাকরিয়া ওরফে হানিফ মাস্টার। যার দলবলের আঘাতে গতকাল মারা গেছে নারী ও কিশোরসহ ৬ জন। এছাড়া, গত ১৫ বছরে হানিফ মাস্টারের নেতৃত্বে প্রায় ২০ বার রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগরে টেটাযুদ্ধ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সাংবাদিক,ব্যবসায়ী ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা।

 

জানা গেছে, রায়পুরা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক হানিফ মাস্টার প্রায় ৪ দশক ধরে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হাত করে রায়পুরার চরাঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন৷ বিএনপি জোট সরকারের আমলে তৎকালীন বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে সুসসম্পর্ক রেখে ভারি করেন তার আধিপত্যের পাল্লা। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে আ:লীগের নেতাকর্মীদের সাথে সখ্যতা রেখে গড়ে তুলেন নিজম্ব লাঠিয়াল বাহিনী৷ নরসিংদী ৫ রায়পুরা আসনের সদ্য সাবেক সাংসদ রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর একনিষ্ঠ কর্মী ও শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান ( সদ্য সাবেক) নিয়াজ মোর্শেদ খান রাসেলের সাথে ২ মাস আগেও হানিফ মাস্টারের সখ্যতা ছিলো চোখে পড়ার মতো। আ:লীগ সরকার সরকারের দায়িত্ব থেকে সরার পরই চেহারা পাল্টে ফেলেন হানিফ মাস্টার৷ সায়দাবাদ বাজার দখলকে কেন্দ্র করে গত ৬ তারিখ দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এরপর, পার্শবর্তী ইউনিয়ন নিলক্ষা থেকে ভারা করে আনা হয় ২০ জন সন্ত্রাসীকে। যারা টেটাযুদ্ধের পাশাপাশি গুলি চালাতে সক্ষম। অস্ত্র ও গুলিসহ ২০ জনকে ১০ লাখ টাকায় হানিফ মাস্টার ভাড়া করে এনেছে এমনটাই জানায় একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, নিলক্ষা ইউনিয়নের একটি দল ৬ জন নিহতের ২ দিন আগে হানিফ মাস্টারের সাথে হাত মেলায় ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে। পুরো টাকা অগ্রিম দিয়েছে কি না এবিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছেনা । তবে ২০ জন সন্ত্রাসী প্রায় ১০ লাখ টাকা চুক্তিতে গিয়েছেন।

 

আহসান উল্লাহ নামে স্থানীয় একজন বলেন, আমাদের চরাঞ্চলে শতবছর বছর ধরে টেটাযুদ্ধ চলে আসছে। কিন্তু যারা মারা গেছে প্রায় সকলেই গুলির আঘাতে৷ নিলক্ষা থেকে আসা সন্ত্রাসীরা মূলত গুলি করেছে। হানিফ মাস্টার সবকিছুর মূল হোতা।

 

১০ লাখ টাকায় সন্ত্রাসী ভাড়া করে ৬ জন হত্যার বিষয়ে অভিযুক্ত হানিফ মাস্টারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি । তিনি বলেন, এলাকায় এসে খোঁজ খবর নেন। ফোনে কথা বুঝা যাচ্ছেনা বলে তিনি ফোন কেটে দেন ।

 

 

বিকেলে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাফায়েত হোসেন পলাশকে ঘটনার বিষয়ে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। থানার সেকেন্ডে অফিসার মো. হালিম মুঠোফোনে বলেন, নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। মামলা হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ছবিতে: অভিযুক্ত হানিফ মাস্টার 

 

প্রসঙ্গত, রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগরের সায়দাবাদ বাজার দখলকে কেন্দ্র করে গত ২ মাস ধরে একই এলাকার হানিফ মাস্টার গ্রুপ এবং সাবমিয়া গ্রুপের মধ্যে অন্তদ্বন্দ্ব চলে আসছিল। গত ৬ তারিখ থেকে সেটি তীব্র আকার ধারন করে। সেই দ্বন্দ্বের জেরে বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। বুধবার দিবাগত রাতে সেটি টেঁটাযুদ্ধে রূপ নেয়। বৃহস্পতিবার ভোরে ৪ জন নিহত হন। এরপর দুপুরের পর আবার সংঘর্ষ শুরু হলে গুরুতর আহত অবস্থায় আরও ২ জনকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। নেয়ার পথে মারা যায় একজন এবং মেডিকেলে নেয়ার পর রাতে মারা যায় আরও একজন।

 

 

নিহতরা হলেন, সায়দাবাদ গ্রামের ইসমাইল বেপারীর ছেলে আমির হোসেন (৬৫) ও বাদল মিয়া(৪৫), শাহীন মিয়ার ছেলে জুনায়েদ (১৬), বাঘাইকান্দি গ্রামের সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৩৫), আব্বাস আলীর ছেলে আনিস মিয়া (৩০) এবং একই এলাকার আসাবউদ্দিনের ছেলে সিদ্দিক (২৮)। এরমধ্যে বাদল মিয়া(৪৫) এবং সিদ্দিক (২৮) ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে মারা যায়। নিহতরা সবাই ওই এলাকার সাহেব বাড়ির অর্থাৎ সাবমিয়া গ্রুপের লোক।

 



এই বিভাগের আরও