কিভাবে দেশে আসবেন অবৈধ সৌদি প্রবাসীরা

২১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৫:৪০ এএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫০ পিএম


কিভাবে দেশে আসবেন অবৈধ  সৌদি প্রবাসীরা
অনলাইন ডেস্ক সৌদি আরবে অবৈধভাবে অবস্থারত প্রবাসীদের ধরতে চালু হওয়া বিশেষ অভিযানের কারণে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলা থেকে সৌদিতে যাওয়া হাজার হাজার পরিবার। সম্প্রতি সেই দেশে অবস্থানরত বিদেশীদের দেশে ফেরত ও আটকের সংবাদ গণমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রকাশিত হলে কক্সবাজার জেলা জুড়ে সৃষ্টি হয় এ অবস্থা। জানা গেছে, স্বাধীনতার আগে ও পরে এই দেশের বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলা থেকে হাজার হাজার লোক জীবন ও জীবিকার সন্ধানে সৌদি আরব যান। তৎমধ্যে অনেকের আকামা থাকলেও আবার অনেকেই রয়েছেন অবৈধভাবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীমান্ত জেলা হওয়ায় কক্সবাজারের পাসপোর্ট নিয়ে অনেক রোহিঙ্গারাও দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে অবস্থান করছে। তাদের কেউ কেউ সেদেশে মানবিক আশ্রয় পেলেও বাংলাদেশী পরিচয়ে যারা থেকে গেছেন তারাও এখন চরম বেকায়দায় পড়েছে। সৌদি আরব থেকে সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে এক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে জানান, বিদেশীদের মধ্যে বিশেষ করে বাংলাদেশীদের ব্যাপারে সৌদি সরকার ইতিপূর্বে অনেক বার কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই পদক্ষেপ গুলো এবারের মতো এত কড়াকড়ি ছিলনা। বর্তমানে সৌদিতে অবস্থানরত লাখ লাখ বাংলাদেশীদের মধ্যে যাদের বৈধ ভিসা-আকামা রয়েছে, তারাও চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে। সৌদি আরবে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীরা কোনো ধরনের জেল জরিমানা ছাড়াই আগামীকাল ২৯ মার্চ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত দেশে ফেরার সুযোগ পাবে। দেশটির সরকার এই ঘোষণা দিয়েছে। সৌদি সরকার ঘোষিত তিন মাসের সাধারণ ক্ষমায় কোনো ধরনের জেল-জরিমানা ছাড়াই স্বেচ্ছায় সৌদি আরব ত্যাগের জন্য কয়েকটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। যেকোনো ধরনের মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা এই ক্ষমার আওতামুক্ত থাকবেন। জানা যায়, তিন ধরনের অবৈধ অভিবাসীদের জন্য আলাদা আলাদা ধাপ অনুসরণ করে তাদের দেশে ফিরতে হবে। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের আইন সহায়তাকারী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে যা জানতে পেরেছি তাতে বলা হয়েছে, প্রথমত যারা সৌদি কাজের ভিসা নিয়ে সৌদি আরব আসার পর ইকামার (রেসিডেন্ট পারমিট) মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর নবায়ন করেনি; নিয়োগকর্তা পলাতক দেখিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে; কাজের ভিসায় এসে কোনো কারণে সব কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেছে, ইমিগ্রেশনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই; অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সৌদি আরব প্রবেশ করেছে; তাছরিহ (অনুমতি পত্র) ছাড়া হজ করতে গিয়ে মামলা হওয়ায় ইকামা নবায়ন করেনি; কারো ডিপেনডেন্ট হিসেবে থাকার পর এখন অবৈধ অথবা সৌদি শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে মামলা হয়েছে; তাদের তিন মাসের মধ্যে সৌদি আরব ত্যাগ করতে হবে। এজন্য যেসব অভিবাসীর মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্ট, পাসপোর্ট না থাকলে দূতাবাস থেকে আউটপাস (বিশেষ ট্রাভেল পাস) সংগ্রহ করে সেটা নিয়ে নিকটস্থ ইমিগ্রেশন অফিস, সফরজেল অথবা ডিপোটেশন সেন্টারে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে এক্সিট ভিসা সংগ্রহ করার পর বিমান টিকেট কিনে দেশে ফেরত যেতে পারবে।’ ফয়সাল আহমেদ আরো বলেন, দ্বিতীয়ত যারা হজ, ওমরাহ, ট্রানজিট ভিসায় সৌদি আরবে প্রবেশ করেছে এবং ইমিগ্রেশন বা পাসপোর্ট অধিদপ্তরে ফিঙ্গারপ্রিন্ট আছে, তবে বর্তমানে কোনো কাগজপত্র সঙ্গে নেই এমন প্রবাসীরাও দূতাবাস থেকে আউটপাস সংগ্রহ করে সেটা নিয়ে নিকটস্থ তারহিল, সফরজেল অথবা ডিপোটেশন সেন্টারে যোগাযোগ করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে ট্রাভেল রেকর্ড/বর্ডার নাম্বার সংগ্রহ করে, সেটা নিয়ে টিকেট করে দেশে ফিরতে পারবে। তৃতীয়ত হজ, ওমরাহ অথবা ট্রানজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছে এবং সব প্রমাণাদি (ভিসা নম্বর, বর্ডার নম্বর, ভিসার কপি) সঙ্গে আছে এমন প্রবাসীরা বিমান টিকেট নিয়ে সরাসরি বিমানবন্দরে গিয়ে সেখানে ইমিগ্রেশনের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে দেশে ফিরতে পারবে। এদিকে সৌদি আরবকে অবৈধ অভিবাসীমুক্ত করতে ১৯টি রাষ্ট্রীয় সংস্থার সমন্বয়ে একটি ট্রান্সফোর্স গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এই ট্রান্সফোর্স প্রচারাভিযানে মাঠে নামবে। এ লক্ষ্যে সৌদি আরবে বেশকিছু ডিটেনশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রিয়াদে ১৩টি, পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে ছয়টি, মক্কায় চারটি, আল কাছিমে তিনটি, মদিনায় তিনটি, আসিরে তিনটি, তাবুকে তিনটি, আল বাহা দুটি, আল জৌফে দুটি, উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে দুটি, জিজানে একটি, নাজরানে একটি ও হাইলে একটি।


এই বিভাগের আরও