নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৫:০৭ পিএম | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০১ পিএম


নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা

তৌহিদুর রহমান:
নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে স্থবিরতা বিরাজ করছে। প্রায় পাচঁ বছরেও জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় এ অবস্থা বিরাজ করছে। এতে দলীয় কর্মসূচী পালন ব্যাহত হওয়াসহ নিয়মিত কার্যক্রম করতে পারছে না জেলা ছাত্রলীগ।
এছাড়া বিভিন্ন শাখা ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি অনুমোদনকে ঘিরে জেলা ছাত্রলীগ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমনের বিরুদ্ধে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ তুলেছে জেলা কমিটির অন্তুর্ভুক্ত ১০ টি শাখা কমিটি। এ বিষয়ে গত ১০ জানুয়ারি কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছে তারা। জেলা ছাত্রলীগের এমন স্থবির অবস্থা দূর করতে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।


কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর নরসিংদীর ১০ টি শাখা/ইউনিট কর্তৃক দেয়া লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমন বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলনে বিভিন্ন পদপ্রার্থীদের নিকট হতে টাকা আদায় করেন। এছাড়া তার বড় ভাই শফিউল্লাহ রুজদী মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যকালাপের সাথে জড়িত। এসব কারণে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে রিমনকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য দাবী জানানো হয় অভিযোগে।
নরসিংদী সদর, নরসিংদী শহর, বেলাব, পলাশ, শিবপুর উপজেলা, ঘোড়াশাল শহর, নরসিংদী সরকারী কলেজ, নরসিংদী পলিটেকনিক একাডেমি, সরকারী শহিদ আসাদ কলেজ, পলাশ শিল্পাঞ্চল কলেজ এর সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সশরীরে উপস্থিত থেকে এ অভিযোগ কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে জমা দেন। তাদের দাবী সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমনের সংগঠন বিরোধী কার্যক্রমের কারণেই জেলা ছাত্রলীগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।


ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, নরসিংদীর সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমনের বিতর্কিত অবস্থানের পর থেকেই জেলা ছাত্রলীগে কোন্দল প্রকাশ্য রূপ ধারন করেছে। সে ঘটনার পর রিমন কে অব্যাহতি দেয়ার জন্য জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূঁইয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। রাজনৈতিক টানাপোড়েনে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসহাক খলিল বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমন এর কমিটি পূর্ণাঙ্গতা পায়নি। এ অবস্থায় কোন্দল ও বিভিন্ন ইউনিটের পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন নিয়ে বিতর্কের জেরে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় ইসহাক খলিল বাবুকে।

পরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসিবুল আলম মিন্টু। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক রিমনের বৈরিতার কারণে স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি ছাত্রলীগ। এদিকে দীর্ঘদিনের স্থবিরতার ফলে বয়স পার হয়ে যাওয়ায় ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিত হয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। সংগঠনের জন্য দিনরাত কাজ করলেও কোন পদ না পাওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে জেলা ছাত্রলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে।


জেলা ছাত্রলীগের সদস্য মোজাম্মেল পাঠান বলেন, আমরা যারা শাহ আলম-শামীম নেওয়াজ কমিটির সদস্য ছিলাম, তারা পরবর্তী কমিটিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতাম, কিন্তু জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় পদ বঞ্চিত হতে হচ্ছে। সংগঠন ও দলের জন্য দিনরাত কাজ করে ত্যাগ স্বীকার করেও পদ বঞ্চিত হওয়ার হতাশা এখন অনেকের মধ্যেই। আমরা ছাত্রলীগের স্থবিরতার অবসান চাই।


নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ বলেন, গত পাঁচ বছরেও জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় বর্তমানে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আমরা আশা করি অতি শীঘ্রই নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগ পূর্নাঙ্গ কমিটি নিয়ে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করবে। এ ব্যাপারে আমি নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের জোরালো ভূমিকার আশা রাখি।


জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমন ছাত্রলীগের স্থবিরতার কথা স্বীকার করে বলেন, জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব কে দূর্বল করতে ষড়যন্ত্র করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বাধা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির বৈরিভাবের কারণে জেলার পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা যাচ্ছে না। এজন্য সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এছাড়া সম্মেলনে প্রার্থীদের নিকট থেকে আমার বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগটি সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট।


জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসিবুল আলম মিন্টু বলেন, সংগঠনের সংকটময় পরিস্থিতিতে আমি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছি। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে জেলা ছাত্রলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়া সাধারণ সম্পাদকের সাথে আমার কোন বিরোধ নেই।



এই বিভাগের আরও