কী জানি কী হয় এই নিয়ে জনমনে আতঙ্ক

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০১:১৬ এএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৫ এএম


কী জানি কী হয় এই নিয়ে জনমনে আতঙ্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় হবে আজ। বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বুধবার বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি টহলে নেমেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিস। ঢাকার প্রবেশপথসহ সড়ক ও রেলপথে পদে পদে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘সন্দেহভাজন ও মামলার আসামি’ হিসেবে বুধবার গ্রেফতার হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীসহ ১৩ শতাধিক। গত নয় দিনে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার। সম্পদ রক্ষায় বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশনগুলোয় পুলিশের পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিকরা অবস্থান নিয়েছে। রায় ঘিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। রায়কে আইনি ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি মুখোমুখি অবস্থান নেয়ায় সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। রায় কেন্দ্র করে পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে বুধবার বিকালে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, ভীত হবেন না, স্বাভাবিক থাকুন। ৮ ফেব্রুয়ারি কিছু হবে না। কোনো গোষ্ঠী জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার অবনতির অপচেষ্টা করলে তা আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে। কোনো ধরনের গুজবে কান না দেয়ারও অনুরোধ জানান আইজিপি। এদিকে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, নিরাপত্তার প্রশ্নে বিন্দুমাত্র ছাড় নয়। রায়কে ঘিরে যাতে জনজীবন ও জনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন না ঘটে, সেজন্য পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা গত দু’দিন দফায় দফায় বৈঠক করে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। নাশকতার আশঙ্কায় সন্দেহভাজন, গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত, তদন্তাধীন ও বিচারাধীন মামলার আসামিদের গ্রেফতারে সারা দেশের থানা ও গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটকে নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। ঢাকার প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসিয়ে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ ও র‌্যাব। এদিকে দেশবাসীর নিরাপত্তায় বুধবার থেকে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় টহলে নেমেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা। ঢাকায় বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন থাকবে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মহসিন রেজা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া সিরাজগঞ্জে ৩ প্লাটুন, বগুড়ায় ৩ প্লাটুন, নারায়ণগঞ্জে ৩ প্লাটুন, নোয়াখালীতে ১ প্লাটুন, লক্ষ্মীপুরে ১ প্লাটুন এবং চাঁদপুরে ১ প্লাটুন, কিশোরগঞ্জে ১, ফেনী ২, বরিশাল ১, পিরোজপুর ১, সাতক্ষীরা ২, বাগেরহাট ১, নাটোর ১, রংপুরে ৫ প্লাটুন, রাজশাহীতে ৪ প্লাটুন, পাবনা ২সহ মোট ৭৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকাসহ ২০ জেলার জন্য ৫৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঢাকায় বিএনপি সমর্থকদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জমান মিয়া। তিনি বলেন, পুলিশের ওপর হামলাকারী ও যারা অতীতে জ্বালাও-পোড়াও করেছে ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এটা গণগ্রেফতার নয়। রাজধানীর পথে পথে তল্লাশি : রাজধানীর প্রবেশপথগুলোসহ বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। কোথাও কোথাও গাড়িতে উঠে যাত্রীদের ব্যাগ ও লাগেজ চেক করা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে শরীর ও ব্যাগ মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে চেকপোস্টের সংখ্যাও। পাশাপাশি রাজধানীর টার্মিনাল ও মহাসড়কে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। নাশকতার আশঙ্কায় বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিকেরা অবস্থান নিয়েছে। বুধবার সকালে রাজধানীর সড়কগুলোতে যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক দেখা গেছে। বিকালের দিকে কমতে থাকে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। নৌপথে যাত্রীসংখ্যা কম দেখা গেছে। সরেজমিনে এসব চিত্র দেখা গেছে। যাত্রীরা জানিয়েছেন, শুধু ঢাকায় নয়, মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দূরপাল্লার গাড়ি থামিয়ে চেক করা হয়েছে। এতে সিরাজগঞ্জ, সাইনবোর্ড, টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি সমর্থকরা জড়ো হয়ে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীতে নিরাপত্তা চৌকির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। অপরদিকে পরিবহন মালিকেরা জানান, রায় নিয়ে নানামুখী চাপে রয়েছেন তারা। একদিকে হামলা আশঙ্কা ও অন্যদিকে পথে পথে হয়রানি। কয়েকজন পরিবহন মালিক জানান, পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে আজ বৃহস্পতিবার দূরপাল্লার রুটে গাড়ি নামাবেন না। দেখা গেছে, গাবতলী টার্মিনালে গাড়ি থেকে যাত্রী নামার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ ও শরীর মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে চেক করা হয়েছে। রংপুর থেকে আসা হানিফ পরিবহনের যাত্রী আবদুল কুদ্দুস বলেন, সিরাজগঞ্জেও গাড়ি চেক করা হয়েছে। ঢাকার প্রবেশমুখেও চেক করা হল। তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জে চেক করার কারণে সেখানে যানজট সৃষ্টি হয়। একই অভিযোগ পরিবহন শ্রমিকদেরও। তারা বলেন, চেকপোস্টের কারণে মহাসড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঢাকায় ঢুকতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি লেগেছে। দারুসসালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, রায় ঘিরে তারা গাবতলী এলাকায় বাড়তি জনবল নিয়োজিত করেছেন। সন্দেহ হলে যে কোনো বাস, ট্রাক বা পথচারীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসা আরেক যাত্রী মো. ইমরান হোসেন জানান, তাদের গাড়ি সাইনবোর্ড ও যাত্রাবাড়ীতে তল্লাশি করা হয়েছে। পুলিশ গাড়িতে উঠে যাত্রীদের পরিচয়পত্র ও ঢাকায় আসার কারণ জানতে চেয়েছেন। যাদের সন্দেহ হয়েছে তাদের দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে পড়ব তা বুঝতে পারিনি। এতে ভয় লাগছে। আগে জানলে ঢাকায় আসতাম না। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ কয়েকটি জেলার গাড়ি টঙ্গী ও আশুলিয়া হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। এসব গাড়ি তল্লাশি করতে উত্তরায় চেকপোস্ট বসানো হয়। ওই চেকপোস্টে সন্দেহভাজন গাড়ি থামিয়ে চেক করা হয়েছে। বিশেষ করে হেঁটে চলা যাত্রীদের বেশি চেক করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জেও বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে পুলিশ। সন্দেহ হলেই যানবাহনে চালানো হয় তল্লাশি। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে বুধবার রাতে পাহারা দেন পরিবহন শ্রমিকেরা। এসব টার্মিনালে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোকে পাহারা দেয়ার জন্য আগ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। তারা পুলিশের পাশাপাশি টার্মিনালগুলোতে অবস্থান নেন। এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম যুগান্তরকে বলেন, বাস আমাদের সম্পদ, আমাদের রুটি-রোজগারের মাধ্যম। এ বাস পাহারা দেয়ার জন্য পুলিশের পাশাপাশি আমরাও রয়েছি। রেলপথে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা : রেলওয়েতে স্মরণকালের সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি রেলস্টেশন ও রেলওয়ে ব্রিজ এবং রেললাইনে কঠোর নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়। ঢাকার কমলাপুর, বিমানবন্দর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। স্টেশন ও ট্রেনের ভেতরে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেনের ইঞ্জিন ও গার্ডরুমে অস্ত্রধারী পুলিশ প্রহরা নিশ্চিত করা হয়েছে। রেলওয়ে ওয়ার্কশপসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে। যাত্রীদের জীবন ও রেলের সম্পদ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রয়োজনে গুলির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রেলওয়ে শ্রমিক লীগের ৬০টি শাখার নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে বলে জানা গেছে। বুধবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পুরো স্টেশন এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্টেশনের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে টিকিট কাউন্টার, প্লাটফর্মসহ ওয়ার্কশপ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম থেকে শুরু করে স্টেশন মাস্টার, বুকিং ও সিগন্যালিং রুমগুলোর সামনে অস্ত্রধারী পুলিশ প্রহরা দিচ্ছে। রেলওয়ে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ট্রেনগুলোর ইঞ্জিন ও গার্ডরুমে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। একই সঙ্গে কমলাপুর থেকে যেসব ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে সেসব ট্রেনের ইঞ্জিন, গার্ডরুম ও ট্রেনে অস্ত্রধারী রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা সতর্কাবস্থায় থাকতে দেখা গেছে। সাধারণ গেট দিয়ে ট্রেন যাত্রীদের প্রবেশ ও বের হতে দেখা গেছে। ব্যাগ, মালামাল বহনকারী যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি তল্লাশির কবলে পড়তে হয়। দুপুরের পর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ নিজেদের দখলে নেয় র‌্যাব। স্টেশন এলাকাও হকারমুক্ত করা হয়েছে। বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী আকবর জানান, তিন দিন ধরে এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি মো. ইয়াসিন ফারুকী যুগান্তরকে জানান, কমলাপুর ও বিমানবন্দরসহ ঢাকা রেঞ্জের সব ক’টি রেলওয়ে স্টেশন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে। বাংকারে সতর্কাবস্থায় রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। তিনি বলেন, আগে নাশকতাকারীরা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন ও ইঞ্জিনে অগ্নিসংযোগ করেছিল। এবার পুরো স্টেশন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা রয়েছে- যে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে, যাত্রীদের জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে প্রয়োজেন গুলি চালানোও হবে। এ বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন যুগান্তরকে জানান, রেল সরকারি সম্পদ, জনগণের সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষা করতে যা যা প্রয়োজন তাই করা হবে। সাময়িক সময়ের জন্য সাধারণ যাত্রীদের কষ্ট কিংবা দুর্ভোগ হচ্ছে স্বীকার করে তিনি বলেন, যাত্রীদের জানমাল রক্ষা করতেই এমন অবস্থানে যেতে হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে গ্রেফতার : বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামকে তার বাসাবোর বাসা থেকে আটক করে পুলিশ। বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু যুগান্তরকে এ তথ্য জানান। আলালের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আলালকে না পেয়ে তার পরিবারের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশের পথে বুধবার বিকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ব্যক্তিগত সহকারী ইউনুস আলীকে আটক করে ১ ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয় ডিবি পুলিশ। এদিকে বুধবার বিকাল পর্যন্ত ৪৫ জেলায় বিএনপির ১৩৬৩ জনকে গ্রেফতারের তথ্য পাওয়া গেছে। যুগান্তর রিপোর্ট, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- রাজশাহী, বাঘা ও চারঘাট : মঙ্গলবার রাতে নগরীতে ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা ১২ জন, রাজপাড়া থানা ১৫ জন, মতিহার থানা সাতজন, শাহমখদুম থানা পাঁচজন এবং মহানগর ডিবি পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে এক ছাত্রদল নেতাকে দুটি ককটেলসহ আটক করা হয়েছে। হবিগঞ্জ ও বাহুবল : জেলা জাসাস সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী, ছাত্রদল আহ্বায়ক আবদুল আহাদ কাজল ও যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল আহমেদসহ বিএনপির ২৯ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত তাদের আটক করে পুলিশ। ঝিনাইদহ : রাতভর অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীসহ ৭৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় ২২টি হাতবোমা উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ। কুমিল্লা, দেবিদ্বার, লাকসাম ও দাউদকান্দি : মঙ্গলবার রাত থেকে জেলার ১৭ থানা এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ৭৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়। মেহেরপুর : মুজিবনগরে পুলিশের পিকআপ ভ্যান লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত ৪টি বোমা উদ্ধার ও বিএনপি-জামায়াতের ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। নওগাঁ ও নিয়ামতপুর : বিএনপি-জামায়াতের ৫৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলার ১১টি উপজেলা থেকে তাদের আটক করা হয়। এর মধ্যে বিএনপির ৩৪ জন এবং জামায়াতের ২১ জন। শ্রীপুর (গাজীপুর) : বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকারকে বুধবার কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনিসহ চারজনকে টঙ্গীর আহসান উল্লাহ সরকার ইসলামিক কমপ্লেক্স থেকে আটক করে পুলিশ। হাসান উদ্দিন সরকারসহ আসামিদের বুধবার দুপুরে গাজীপুর আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক ১১ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন। রাজবাড়ী ও বালিয়াকান্দি : বিএনপির ৪২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। টাঙ্গাইল : জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদ তালুকদার, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুমন, শহর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সখীপুর পৌর ছাত্রদলের সভাপতি মোর্শেদ আলম সুমনসহ ৪৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। নীলফামারী, কিশোরগঞ্জ ও ডোমার : বিএনপি-জামায়াতের ২৪ নেতাকর্মীসহ ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জয়পুরহাট ও কালাই : জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলা থেকে বিএনপি ও শিবিরের ২০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে ১৮ জন বিএনপি ও ২ জন শিবিরের নেতাকর্মী। কুড়িগ্রাম, রৌমারী, নাগেশ্বরী, রাজারহাট ও ভুরুঙ্গামারী : জেলার বিএনপি-জামায়াতের ২৩ নেতাকর্মীসহ ৫৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পাবনা, চাটমোহর : জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তোতা, জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন ও সুজানগরের সাবেক ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেনসহ ২৫ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নবীনগর : ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির ৫৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বগুড়া : ২৪ ঘণ্টায় জেলার ১০ উপজেলা থেকে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৪৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ : বিএনপি-জামায়াতের ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ৩২ ও মৌলভীবাজারে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রংপুর : জেলার ৮ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ১৪ নেতাকর্মীসহ মোট ৮৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম, হাটহাজারী ও চন্দনাইশ : বিএনপি, জামায়াত ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে চালানো হচ্ছে তল্লাশি। চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ২৯০ জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী। নেত্রকোনা, কেন্দুয়া ও মদন : বিএনপি-জামায়েতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে জেলার ১০ থানায় ২০টি মামলা হয়েছে। বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে এসব মামলা করা হয়। ৩৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মানিকগঞ্জ ও সাটুরিয়া : মঙ্গলবার রাত ও বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিএনপির ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ : বিএনপি-জামায়াতের ৪৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি আটকরা বিভিন্ন মামলার আসামি। ধামরাই ও আশুলিয়া (ঢাকা) : যুবদলের সভাপতি প্রার্থীসহ বিএনপির ১১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে ধামরাই থানা পুলিশ। নরসিংদী ও পলাশ : মতিঝিল থানা যুবদলের সভাপতি তারিকুল হক অপুসহ জেলার বিভিন্ন থানায় ৩০ বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ) : বিএনপি নেতাকর্মীদের গোপন বৈঠক থেকে ৬ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বৈঠক থেকে পালিয়ে যায় শতাধিক নেতাকর্মী। শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : শিবগঞ্জ পৌর ছাত্রদেলর সেক্রেটারিসহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আরও বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতার : এছাড়া নাটোরের সিংড়ায় ৪ নেতাকর্মী, ফরিদপুরের নগরকান্দায় ৮, জামালপুরের মাদারগঞ্জে ৯, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও শ্রীনগরে ৬, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ৩, লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ১৩, মহেশখালীতে ৯, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ৩, মাদারীপুরের কালকিনিতে ৩, যশোরের কেশবপুরে ৩, খুলনার ডুমুরিয়ায় ২, কেরানীগঞ্জে ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


এই বিভাগের আরও