শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতায় বসে ৭ ঘন্টা অবরুদ্ধ তাঁতবোর্ড চেয়ারম্যানসহ ১৫ কর্মকর্তা

০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৪ পিএম | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম


শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতায় বসে ৭ ঘন্টা অবরুদ্ধ তাঁতবোর্ড চেয়ারম্যানসহ ১৫ কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদী তাত বোর্ডের চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং অধ্যক্ষ সহ ১৫ জন কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর ২ টা  থেকে রাত পৌণে নয়টা পর্যন্ত নরসিংদী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একটি কক্ষে তারা অবরুদ্ধ ছিলেন।

এর আগে দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করতে আসেন কর্মকর্তারা।

অবরুদ্ধরা হলেন, তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু আহমদ ছিদ্দীকী (এনডিসি), সদস্য (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (প্রশাসন) (অ:দা:) আকরামুজ্জামান, প্রধান হিসাব রক্ষক এবং প্রকল্প পরিচালক (অ:দা:) সুকুমার চন্দ্র সাহা, প্রকল্প পরিচালক (অ:দা:), মোঃ আইয়ুব আলী, ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো: মনজুরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক (রক্ষণাবেক্ষণ) মোঃ সাইফুল হক, নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফারজানা আলম, নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা জাহান সরকার, নরসিংদী টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুল হক সহ ১৫ জন।


শিক্ষার্থীদের দাবি, তাঁতবোর্ডের অধীন থেকে বস্ত্র অধিদপ্তরের আওতায় কলেজ স্থানান্তরিত করার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন করে আসছেন তারা। এরই অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকবার ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সভা সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন। ফলশ্রুতিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি বাস্তবায়ন করার জন্য একাধিকবার আশ্বাস দিয়েও তা পূরণ না হওয়ায় তারা কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনড় থাকবেন বলে জানান।

নরসিংদী তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সামি বলেন, "আমরা তাঁতবোর্ডের অধীনে হওয়ায় নানা জটিলতায় ভুগছি। যেমন ভর্তি জটিলতা, সেশন ফি বেশি, নিয়মিত শিক্ষক না থাকাসহ নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দাবি এক দফা দাবি হচ্ছে তাঁত বোর্ডের অধীন থেকে বস্ত্র অধিদপ্তরে স্থানান্তর করে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া।"

 

শিক্ষার্থী হাসিব আল ইসলাম বলেন, "আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছি কিন্তু আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জনসহ আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলমান থাকবে।

অবরুদ্ধ হওয়া কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি। কিন্তু শিক্ষার্থীরারা যেভাবে চাইছেন এখনই সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়াটা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

অবরুদ্ধ অবস্থায় তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, "একটি প্রতিষ্ঠানকে অন্য প্রতিষ্ঠানের অধীনে নিয়ে যেতে একটি আইনী প্রক্রিয়া আছে। সেটি অনুসরণ করে তাঁত বোর্ডের অধীন থেকে বস্ত্র অধিদপ্তরে স্থানান্তর করা সম্ভব। আমি আমাদের সচিবকে জানিয়েছি, দরকার হলে আমাদের উপদেষ্টাকে জানাবো। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটা নিয়ে কাজ করবো। কিন্তু আমাদের সময় না দিয়ে অবরুদ্ধ করে সাথে সাথে দাবি আদায় করা সম্ভব হবে না।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে বুঝানোর চেষ্টা করছি, তারা যেন আজকের কর্মসূচি অব্যাহতি দেয়। তাদের আন্দোলন যৌক্তিক, তবে, আমাদেরকে সময় দিতে হবে এবং ইতিমধ্যে তাদের অনেকগুলো দাবি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।"

“আগামী ১৩ জানুয়ারি সোমবারের মধ্যে নরসিংদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবীর বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব এবং স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে জরুরী সভা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হবে। উল্লেখ্য, প্রধান দাবী নরসিংদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বস্ত্র অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত হবে।”

এমন লিখিত শর্তে প্রায় ৭ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রাত ৯টায় কর্মসূচী তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। পরে অবরুদ্ধ কর্মকর্তারা ঢাকায় ফিরে যান বলে জানান, নরসিংদীর পুলিশ সুপার মো: আব্দুল হান্নান।

উল্লেখ্য, এর আগে শিক্ষার্থীরা বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টার সঙ্গে দাবির বিষয়ে দেখা করেছিলেন। ওই ধাপের অংশ হিসেবে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌছাতে সোমবার ক্যাম্পাসে এসেছিলেন কর্মকর্তারা।