জেলার হাজারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা

১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:৪৫ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৪ পিএম


জেলার হাজারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা

টাইমস ডেস্ক:

দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর নরসিংদীর ৬ উপজেলার ১,১৯৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে পাঠদান। দীর্ঘদিন পর সহপাঠী ও শিক্ষকদের সাথে একে অপরের দেখা হওয়ায় বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে স্কুল কলেজগুলোতে।

সরেজমিন সদর উপজেলার নরসিংদী ইনডিপেনডেন্ট কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ফুল, চকলেট দিয়ে বরণের পাশাপাশি শারীরিক তাপমাত্রা মেপে মাস্ক, হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেয়া হয়। পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শুরু হয় পাঠদান। অনেকদিন পর প্রিয় প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে এসে শিক্ষক ও বন্ধুদের সাথে মিশতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরাও। এই প্রতিষ্ঠানটিতে মোট ৭২৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯৭ ভাগ উপস্থিত হয় বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

সদর উপজেলার চৈতাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় প্রধান শিক্ষক মল্লিকা সাহাসহ অন্যান্য শিক্ষকরা ফুল দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বরণ করছেন। মল্লিকা সাহা জানান, বিদ্যালয়টির মোট ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম দিন ৭০ জনের উপস্থিতি ছিল। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিফটিং সিস্টেমে সকল শ্রেণির পাঠদান করা হবে। অনেক দিন বন্ধ থাকার পর স্কুল খোলায় খুশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। একইভাবে সদর উপজেলার সকল সরকারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয় পাঠদান।

নরসিংদী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর ঠিকমতো ক্লাসেই বসতে পারিনি। অবশেষে ক্লাস শুরু হওয়া ও সহপাঠীদের সাথে দেখা ও পরিচয় হওয়ায় আনন্দ লাগছে।

নরসিংদী স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নরসিংদী ইনডিপেনডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ মশিউর রহমান মৃধা বলেন, দীর্ঘ ১৯ মাস যেন দেহে প্রাণ ছিল না। আমার মা-বাবাদের (শিক্ষার্থী) কাছে পেয়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছি। গত দেড় বছরে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার পাশাপাশি মাদক, অনলাইন আসক্তি বেড়েছে। এখন থেকে নিয়মিত ক্লাস চালু হওয়ায় এসব সমস্যা থেকে শিক্ষার্থীরা মুক্তি পাবেন বলে প্রত্যাশা করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই জাতি মেধাশূন্য হওয়ার আগেই স্কুল-কলেজগুলো খুলে দিয়েছেন।

মনোহরদী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলুন দিয়ে বিদ্যালয় সাজিয়ে, গান গেয়ে ফুল ছিটিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাগতম জানানো হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, দীর্ঘ বিরতির পর বিদ্যালয় খোলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা যাতে আনন্দ চিত্তে ক্লাসে মনোযোগী হয় সেদিক লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ এড়াতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।

মনোহরদী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। অনেকদিন পর প্রিয় বিদ্যাপিঠে আসতে পেরে, প্রিয় সহপাঠীদের সাথে সাক্ষাৎ যেন ঈদের মতই আনন্দ।

মনোহরদী সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম ফারুক জানান, করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ বিরতির পর কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই অনেক খুশি। আমরা চেষ্টা করব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যে ঘাটতি হয়েছে তা পূরণ করার জন্য।

বেলাবতে ক্লাস শুরুর প্রথমদিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল সাজ সাজ রব। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিয়েছেন ফুল দিয়ে। এসময় সন্তানদের সাথে অনেক অভিভাবকরাও আসেন স্কুলে। দীর্ঘদিন পর প্রিয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের পেয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দে মেতে উঠে।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নজিব উদ্দিন খান কলেজের প্রভাষক রবিউল আলম জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখা গেছে। এতে যেন প্রাণ ফিরেছে প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রথম দিন ক্লাস করা হয়।

রায়পুরার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সকাল ৯টার আগেই শিক্ষার্থীরা নতুন স্কুল ড্রেস পরে বই খাতা নিয়ে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। রুটিন অনুযায়ী, আজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিষয়টি না জেনে অনেক অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও স্কুলে চলে আসতে দেখা গেছে। তাদের স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারাও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন।

পলাশ উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসময় শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করছেন পলাশ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা আফসানা চৌধুরী।