সাক্ষাৎকার: বই পড়তে আনন্দ পাই বই পড়াতে আনন্দ পাই: অছিউদ্দীন আহমদ
২৫ মার্চ ২০১৯, ০৩:৩২ পিএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৫ পিএম
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার সিরাজনগর (নয়াচর) গ্রামের একটি প্রাচীন গ্রন্থাগারের নাম “জাগরণী পাঠাগার”। বর্তমানে পেশায় শিক্ষক ও হোমিও চিকিৎসক অছিউদ্দীন আহমদ ১৯৬৮ সালে ছাত্রাবস্থায় বই পড়ার আগ্রহ থেকেই নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেন পাঠাগারটি। নিজস্ব অর্থায়নে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলা এ পাঠাগারের পেছনে ছাত্রজীবন থেকে এখনও পর্যন্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন অছিউদ্দীন আহমদ।
পাঠাগারটিতে রয়েছে বিশ হাজারের অধিক বই ও পত্র পত্রিকার বিপুল সমাহার। গবেষকদের জন্য রয়েছে দূর্লভ জ্ঞানগর্ভ তথ্য-উপাত্ত ভান্ডার। বই পড়তে আনন্দ পাওয়া, বই পড়াতে আনন্দ পাওয়া থেকেই ৫০ বছর ধরে গ্রামীণ জনপদে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর কাজ করছেন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অছিউদ্দীন আহমদ। সম্প্রতি নরসিংদী টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন জাগরণী পাঠাগারের আদ্যোপান্ত.....
নরসিংদী টাইমস: কেমন আছেন?
অছিউদ্দীন: আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তাআলা ভাল রেখেছেন।
নরসিংদী টাইমস: জাগরণী পাঠাগার কবে, কীভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল?
অছিউদ্দীন: সে ১৯৬৪ সালের কথা। বয়সে আমি মাত্র কিশোর। আমার পিতা হাজী ইলিয়াস মাস্টার ছিলেন একজন বই পড়–য়া মানুষ। তিনি রাতদিন বই পড়তেন। পিতার সেই বইপড়া দেখা থেকেই আমার মনে বই পড়ার শখ জাগে। তাই শৈশবে খেলাধুলায় মগ্ন না হয়ে আমি বই পড়তে গিয়েই বই সংগ্রহে নেমে পড়ি। নানাভাবে বই জোগাড় করে একটি কাঠের বাক্সে জমা করে পড়তে থাকি। আর আমার বন্ধুদেরকেও বই পড়তে উৎসাহিত করি। এভাবেই একটি পাঠাগারের সূচনা ঘটে। প্রথমে এর নাম দেই কিশোর সমিতি। এভাবে চার বছর চলার পরে ১৯৬৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর এটিকে ‘জাগরণী সমিতি’ নাম দেওয়া হয়। ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট এটি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে রেজিষ্ট্রেশন লাভ করে। পরে ২০১১ সালে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর থেকে নরসিংদী জেলা সরকারী গণগ্রন্থাগারের মাধ্যমে ‘জাগরণী পাঠাগার’ নামে পরিচিতি ও সনদ লাভ করে।

নরসিংদী টাইমস: পাঠাগারটির অগ্রযাত্রা সম্পর্কে যদি বলেন ?
অছিউদ্দীন: আমার পিতা ছিলেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক। তিনি নিজে পাঠাগারের সদস্য হয়ে আমাকে অনুপ্রাণিত করেন। ছোট ভাই ইমামুদ্দিন ও কফিল উদ্দীন এবং বড় ভাই শাহাবুদ্দিন আমাকে সহযোগিতা করেন। উনিশশত ষাটের দশকে আমি ঢাকায় ফরিদাবাদ মাদরাসার ছাত্র ছিলাম। তখন প্রায় দিনই বিকেলে হাঁটতে গিয়ে ঢাকার বাংলাবাজারে ফুটপাতের বইয়ের দোকান থেকে পুরনো ভালো বই খোঁজে কিনতাম। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে তা দিয়েই বই কিনে নিতাম। তখন এক/দুই টাকা দিয়ে পুরনো ভালো ভালো বই কেনা যেতো। এভাবেই আমার বই সংগ্রহ বাড়তে থাকে। পরে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মাধ্যমে অনুদানের বই পেয়ে ক্রমশ: পাঠাগারকে সমৃদ্ধ করে তুলি। আমার নিজের উপহার হিসেবে পাওয়া সব বই পাঠাগারে দান করে দিয়েছি।
নরসিংদী টাইমস : ‘জাগরণ ম্যাগাজিনের’ প্রকাশনা কবে থেকে?
অছিউদ্দীন : ডা. অছিউদ্দীন ও মোঃ নূরুল ইসলাম এর যৌথ সম্পাদনায় ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ সালে ‘জাগরণ’ এর প্রথম সংখ্যা বের হয়। এযাবৎ এর ১৬টি সংখ্যা আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে। সাথে সম্পাদনা সহযোগী ছিলেন শেখ ম.আ. খালিদ ও মাজেদুল ইসলাম। নিরেট গ্রাম থেকে প্রকাশিত এই সাহিত্যবার্ষিকী সুধী মহলে ও পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক সাড়া জাগায়। জাগরণের প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ শিল্পী ছিলেন স্থানীয় শেরপুর গ্রামের মোস্তফা কামাল। শুরু থেকেই লেখক হাবিবুল্লাহ পাঠান, সরকার আবুল কালাম, ড. মনিরুজ্জামান প্রমুখ সুধীজনেরা লেখা দিয়ে ‘জাগরণ’ প্রকাশনায় সহযোগিতা করে আসছেন।
নরসিংদী টাইমস : ‘জাগরণ’ প্রকাশনার লক্ষ্য কী?
অছিউদ্দীন : মূলত: নিজেদের সাহিত্যচর্চার মাধ্যম হিসেবেই এর প্রকাশনা শুরু হয়। পরে পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদেরকে এখানে সম্পৃক্ত করা হয়। শিক্ষার্থীদেরকে কবিতা ছড়া ইত্যাদি লেখায় উদ্বুদ্ধ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে থাকে। এ পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী ১৫/২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহু কচিকাঁচা শিক্ষার্থীর লেখা ‘জাগরণে’ ছাপা হয়। যদিও অর্থ সংকটের কারণে ‘জাগরণ’ একটি অনিয়মিত প্রকাশনা।
নরসিংদী টাইমস : পাঠাগারে অনুষ্ঠিত সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে কিছু বলুন।
অছিউদ্দীন : জাগরণ ম্যাগাজিনের প্রতিটি সংখ্যা প্রকাশনা উপলক্ষে সুধী সমাবেশ, সেমিনার, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বইপাঠ প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ইত্যাদি বরাবরই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এসব অনুষ্ঠানে শত শত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকমন্ডলী, কবি সাহিত্যিক, সাংবাদিকগণ উপস্থিত থাকেন।
নরসিংদী টাইমস : পাঠাগারে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বইপাঠ প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জানতে চাই।
অছিউদ্দীন : এ যাবৎ এখানে বহু বইপাঠ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তন্মধ্যে ১৯৯৬ সালে শতাধিক প্রতিযোগী অংশ নেয়। বিজয়ী ৫০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এর প্রথম পুরস্কারটি ছিল মূল্যবান স্বর্ণালংকার। ২০১২ সালের বইপাঠ প্রতিযোগিতায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কার ছিল যথাক্রমে ৫০,০০০ টাকা দামের দুটি কম্পিউটারসহ অনেক মূল্যবান উপহার সামগ্রী।
নরসিংদী টাইমস : যুবসমাজের উন্নয়নে অত্র পাঠাগারের ভূমিকা কী? কারা পাঠাগারের ভোক্তা ?
অছিউদ্দীন : আজকের যুবসমাজ সীমাহীন অনৈতিকতার দিকে ধাবিত। মাদক, পর্ণোছবি ও ইন্টারনেট আসক্তিতে যুব সমাজ নিমগ্ন। এই যুবশক্তিকে ভালো বই পড়ায় উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ধ্বংসমুখী জীবনকে রক্ষা করাই অত্র পাঠাগারের লক্ষ্য। যে কোনো বয়সী নারী-পুরুষকে অবাধে বিনা টাকায় পাঠাগারে বসে পড়ার সুযোগ রয়েছে। বই বাড়ি নিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে সদস্যভুক্ত হতে হয়।

নরসিংদী টাইমস : সুদীর্ঘ ৫০ বছরে পাঠাগারটির শ্রেষ্ঠ অর্জন কী?
অছিউদ্দীন : আমার মনে হয় এই প্রশ্নের সঠিক জবাব রয়েছে স্থানীয় সাধারণ মানুষের কাছে। আমরা শুধু বলতে পারি- এখানে বিগত ৫০ বছরে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে ২০ হাজার বই ও পত্র পত্রিকা নিয়ে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। এর রয়েছে অনেক পাঠক। পাঠাগারের জন্ম থেকে নিয়ে কোনোদিন এর কার্যক্রম থেমে থাকেনি। আমার অব্যাহত চিন্তা ও শ্রমে পাঠাগারে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি দূর্লভ ও দূষ্প্রাপ্য পত্র-পত্রিকার বিষয়ভিত্তিক ফিচার ও কাটিং ফাইলের এক বিশাল সমাহার ঘটাতে। যা জ্ঞান পিপাসু পাঠকদের জন্য এক অনুপম তথ্য উপাত্ত ভান্ডার।
নরসিংদী টাইমস : উল্লেখযোগ্য কেউ কী পাঠাগারটি পরিদর্শনে এসেছেন?
অছিউদ্দীন : বিগত ৫০ বছরে যারা এখানে এসেছেন তন্মধ্যে বিশেষ উল্লেখ্য- লন্ডনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইংরেজ কবি ড. উইলিয়ম রাদিচে, ব্রিটেনের পর্যটক দম্পতি টনি এন্ড মিলা, অষ্ট্রেলিয়ান ক্যানভেরা ইউনিভার্র্সিটির অধ্যাপক ড. রইসউদ্দিন, নরসিংদীর সাবেক জেলা প্রশাসক যথাক্রমে কাজী আখতার হোসেন, জিল্লার রহমান, কামাল উদ্দিন, এ.ডি.সি বিজন কান্তি সরকার, ঢাকাস্থ সৌদি এম্বেসির অনুবাদক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
নরসিংদী টাইমস : পাঠাগার থেকে কী পেলেন বলে মনে করেন?
অছিউদ্দীন : পাঠাগার আমাকে নতুন জীবনের দিশা দিয়েছে। জ্ঞানের পথে জীবন বিলিয়ে দিতে প্রেরণা জুগিয়েছে। সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ করেছে। মানবকল্যাণে চিন্তার পথ দেখিয়েছে। মনকে বড় করেছে। সুন্দর জীবন বিনির্মাণে চেতনাকে শানিত করেছে। সর্বোপরি কুরআনের প্রথম বাণী, ‘পড়- তোমার প্রভুর নামে’ এ কথার বাস্তবায়নে আমার জীবনকে বহুদূর এগিয়ে নিয়েছে।
নরসিংদী টাইমস : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অছিউদ্দীন : নরসিংদী টাইমসকেও ধন্যবাদ।
বিভাগ : নরসিংদীর তথ্যবই
- শিবপুরে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় গণ মোনাজাত
- শিবপুরে জামায়াতের গণমিছিল অনুষ্ঠিত
- বেগম জিয়া অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি : ড. আব্দুল মঈন খান
- পলাশে জামায়াতের সভায় হামলার প্রতিবাদে ৫ দলের প্রার্থীর যৌথ প্রতিবাদ
- শেখেরচরে জামায়াতের নির্বাচনী সভায় হামলা, অভিযোগ বিএনপির বিরুদ্ধে
- রায়পুরায় জুয়েলারী ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা
- পলাশে গুলি ও ইয়াবাসহ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার
- শিবপুরে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ৫ শতাধিক হাফেজ নিয়ে দোয়া
- ধানের শীষে ভোট দেয়ার কারণে মহিলাদের ধর্ষণ করেছিল যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা :খায়রুল কবির খোকন
- রায়পুরায় অটোরিকশা নিয়ে বের হওয়া কিশোরের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
- শিবপুরে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় গণ মোনাজাত
- শিবপুরে জামায়াতের গণমিছিল অনুষ্ঠিত
- বেগম জিয়া অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি : ড. আব্দুল মঈন খান
- পলাশে জামায়াতের সভায় হামলার প্রতিবাদে ৫ দলের প্রার্থীর যৌথ প্রতিবাদ
- শেখেরচরে জামায়াতের নির্বাচনী সভায় হামলা, অভিযোগ বিএনপির বিরুদ্ধে
- রায়পুরায় জুয়েলারী ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা
- পলাশে গুলি ও ইয়াবাসহ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার
- শিবপুরে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ৫ শতাধিক হাফেজ নিয়ে দোয়া
- ধানের শীষে ভোট দেয়ার কারণে মহিলাদের ধর্ষণ করেছিল যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা :খায়রুল কবির খোকন
- রায়পুরায় অটোরিকশা নিয়ে বের হওয়া কিশোরের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার