হজের জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে

১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:১৮ পিএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২০ এএম


হজের জন্য নিবন্ধন করবেন যেভাবে

জীবনযাপন ডেস্ক:

হজ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সম্মেলন এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৌদি আরবের মক্কা গমনকারীদের বৃহৎ মিলনায়তনে শামিল হন বাংলাদেশের মুসলমানরাও। করোনার প্রকোপে ২০২০ থেকে এই আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সম্মেলনটি শুধুমাত্র সৌদির হজপালনকারীদের জন্য সীমাবদ্ধ করায় বিশ্বের অন্যান্য তীর্থযাত্রীদের ন্যায় বাংলাদেশিরাও বঞ্চিত হয়েছেন হজে অংশগ্রহণ থেকে। এ বছর যথাযথ সতর্কতা মেনে সৌদি হজ কর্তৃপক্ষের প্রণীত নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে হজের জন্য প্রস্তুতি নেয়া যাবে। চলুন জেনে নিই ২০২২ সালে কিভাবে হজের জন্য নিবন্ধন করবেন।

হজের নিবন্ধন পদ্ধতি:
বাংলাদেশে প্রতি বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের নিবন্ধন নেয়া হয়। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়া হজ যাত্রীর সংখ্যা মোট হজ যাত্রীর মাত্র ৫ শতাংশ। সরকারি-বেসকারি উভয় ক্ষেত্রেই যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো প্রাক-নিবন্ধন।

হজের জন্য সৌদি আরবের হজ ও উমরাহ কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর পৃথিবীর সকল দেশের একটি নির্দিষ্ট কোটা নির্ধারণ করেন দেয়। মক্কা-মদীনায় থাকা-খাওয়া সংক্রান্ত জরুরি সেবা প্রদানের জন্য ধারণ ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে এই কোটা বরাদ্দ হয়ে থাকে।

এরপরেও প্রতি বছর এই কোটার বাইরেও বহু সংখ্যক আবেদন জমা পড়ে। আর এই জন্যই বাংলাদেশের হজ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সৌদি ই-হজ সিস্টেমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রাক-নিবন্ধন পদ্ধতির অবতারণা। প্রাক-নিবন্ধিত লোকদের ভেতর থেকে প্রতি বছর কোটা অনুসারে হজে পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে অপেক্ষমান যাত্রীদের পরের বছরে হজে যেতে হয়।

হজের প্রাক-নিবন্ধন পদ্ধতি:
প্রার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অন্তর্গত হজ যাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেম থেকে প্রাক-নিবন্ধন করতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজনীয় ধাপগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

→ সরকারি তত্ত্বাবধানে হজ যাত্রায় প্রাক-নিবন্ধনের জন্য নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদন করা যাবে।
১। ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র (ইউডিসি)
২। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়
৩। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়
৪। পরিচালক, হজ অফিস, আশকোনা, ঢাকা

বেসরকারি ভাবে প্রাক-নিবন্ধনের জন্য যেতে হবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত বৈধ হজ এজেন্সিগুলোতে।
→ আবেদন করার জন্য প্রথমে জিমেইল আইডি দিয়ে লগ-ইন করতে হবে।
→ লগ-ইন করার পর প্রার্থীর তথ্য প্রদানের পালা। একাধিক আবেদনের ক্ষেত্রে ‘নতুন আবেদন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে । তথ্যগুলো অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্রের অনুরূপ হতে হবে। অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্যানুসারে ফরম পূরণ করতে হবে।
→ এবার ‘পেমেন্ট আবেদন’ বাটনে ক্লিক করে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ব্যাংক-এর তথ্য প্রদান করতে হবে।
→ অতঃপর ‘ভাউচারের জন্য আবেদন করুন’ অপশনে যেতে হবে।
→ ভাউচার তৈরি হয়ে গেলে প্রার্থীর জিমেইলে একটি মেইল যাবে এবং প্রদানকৃত মোবাইল নাম্বারে একটি এসএমএস যাবে। ভাউচার ডাউনলোড করার জন্য জিমেইল থেকে অথবা প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমে লগ-ইন করে পেমেন্ট আবেদন লিস্ট থেকে ‘পেমেন্ট ভাউচার ডাউনলোড করুন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
→ অবশেষে ভাউচারটি প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে প্রাক-নিবন্ধন ফি জমা দিতে হবে। টাকা জমা হওয়ার পর ব্যাংক থেকে সিরিয়াল নাম্বার সহ প্রাক-নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হবে। সেই সাথে মোবাইল নাম্বারে একটি পেমেন্ট নিশ্চিতকরণ ম্যাসেজ যাবে। এমনকি জাতীয় হজ নীতিমালা অনুযায়ী প্রার্থীর প্রাক-নিবন্ধন নম্বর চলতি বছর হজ গমনের জন্য নির্বাচিত হলে তা জানিয়ে প্রার্থীর মোবাইল এবং জিমেইলে ম্যাসেজ দেয়া হবে।
→ হজ গমনের জন্য নির্বাচিত হলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে হবে।
→ তারপর হজ অফিস বা সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সি পরিশোধ নিশ্চিত করলে হজ্জযাত্রীর জন্য একটি অপরিবর্তনযোগ্য পিলগ্রিম আইডি (পিআইডি) তৈরি হবে, যা হজযাত্রীর মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। এই পিআইডি প্রাপ্তির মাধ্যমেই হজ নিবন্ধন চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হয়। প্রাক-নিবন্ধনে প্রাপ্ত তথ্যাবলি পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে যাচাই করা হয়ে থাকে।

এছাড়া প্রাক-নিবন্ধন সম্বন্ধে আরও তথ্য জানার জন্য যোগাযোগের ঠিকানা: হজ তথ্য সেবা কেন্দ্রে, ফোন নাম্বার- +৮৮০৯৬০২৬৬৬৭০৭, স্কাইপে- hajjcallcenter, ই-মেইল- prp@hajj.gov.bd।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
১। প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র (অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে প্রাক নিবন্ধন করা যাবে)।
২। মহিলাদের ক্ষেত্রে মাহরেমের জাতীয় পরিচয় পত্র সংযোজন করতে হবে।
৩। চূড়ান্তভাবে হজের জন্য সৌদি আরব গমনে অনুমতির ক্ষেত্রে করোনা টিকা সনদপত্র নিতে হবে।

আনুষঙ্গিক খরচসমূহ:
২০২০ ও ২০২১ এ সৌদি আরবে স্বল্প পরিসরে হজযাত্রার অনুমতি থাকায় ২০২০-এর পর বাংলাদেশ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে হজ প্যাকেজে কোন পরিবর্তন আসেনি। ২০২০ এর ২৪ ফেব্রুয়ারি সরকারিভাবে হজ পালনে তিনটি প্যাকেজের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছিল।

প্যাকেজ-১: চার লাখ ২৫ হাজার টাকা
প্যাকেজ-২: তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা
প্যাকেজ-৩: ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা

তার কয়েকদিন বাদে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করে বেসরকা‌রি তত্ত্বাবধানে দু‌টি হজের প‌্যাকেজ- সাধারণ এবং ই‌কোন‌মি।

সাধারণ: তিন লাখ ৬১ হাজার ৮ শত টাকা
ইকোনমি: তিন লাখ ১৭ হাজার টাকা

সরকারি তত্ত্বাবধানে প্রাক-নিবন্ধনের সময় জমা দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। এখানে প্রাক-নিবন্ধন ফি ২০০০ টাকা আর বাকি ২৮০০ টাকা সরকারি ব্যবস্থাপনার হজ প্যাকেজের সাথে সমন্বয় হয়।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রাক-নিবন্ধনের সময় জমা দিতে হয় ৩০,৭৫২ টাকা। এর মধ্যে হজ সংক্রান্ত বিভিন্ন খরচ বাবদ ৪৩৮৭ টাকা কেটে অবশিষ্ট ২৬,৩৬৫ টাকা হজ এজেন্সির সাথে হজযাত্রীর চুক্তি অনুসারে হজ প্যাকেজের সাথে সমন্বয় হয়।

শেষাংশ:
করোনার প্রাদুর্ভাবের নেতিবাচক প্রভাব থেকে ধর্মীয় কার্যকলাপগুলোও মুক্ত নয়। সেদিকে খেয়াল রেখেই হজযাত্রী ও স্থানীয়দের সুস্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য এই নীতিমালার অবতারণা। অবশ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হজের জন্য নিবন্ধন থেকে শুরু করে হজে যাওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতির সম্পাদন হজযাত্রার প্রাথমিক কার্যক্রমকে আরও ঝামেলামুক্ত করবে। এতে করে যারা প্রথমবারের মত হজে যাচ্ছেন তাদের প্রস্তুতি নেয়ার পথ আরও সুগম হবে।


বিভাগ : জীবনযাপন


এই বিভাগের আরও