কোটার বাধ্যবাধকতা থাকছে না ৩য়-৪র্থ শ্রেণির সরকারি চাকরিতে

১৪ মে ২০১৯, ০৮:৩০ পিএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৮ পিএম


কোটার বাধ্যবাধকতা থাকছে না ৩য়-৪র্থ শ্রেণির সরকারি চাকরিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পর, এবার কোটা সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে। এই দুই স্তরে কোটা বহাল রাখার কথা বলা হলেও পরিপত্র জারি করে সুষ্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, কোটার প্রার্থী যদি না পাওয়া যায় তাহলে সাধারণ প্রার্থীদের মধ্যে মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারীদের দিয়ে তা পূরণ করা হবে।

অর্থাৎ কোটার প্রার্থী না পাওয়া গেলে পদ সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না। মোট কথা সরকারি চাকরিতে জেলা, নারী, মুক্তিযোদ্ধা, এতিম, শারীরিক প্রতিবন্ধী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ কোটার যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে ওই পদগুলো আর শূন্য রাখা হবে না। এখন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে তা পূরণ করা হবে, সাধারণ প্রার্থীদের মধ্য থেকেই।

জানা যায়, গত ৭ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একপত্রে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা আদেশে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এবং করপোরেশনের চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ করা সম্ভব না হলে ওই পদগুলো খালি রাখতে হবে। অর্থাৎ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। ওই নির্দেশনা জারির পর থেকে পুলিশের কনস্টেবল পদে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটার যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় পদগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ হিসেবে অনুযায়ী পুলিশ কনস্টেবল পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যোগ্য কোনো প্রার্থী না পাওয়ায় সাত হাজার ৩৭৪টি পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই পদের সঙ্গে নতুন করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হলে একই ক্যাটাগরির প্রার্থীর সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়।

এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পরামর্শ চেয়ে বলা হয়েছে, যদি এখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং কোটার প্রার্থী না পাওয়া যায় তাহলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে?

বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের যুগ্মসচিব আবুল কাশেম মো: মহিউদ্দিন বলেন, এখন আর কোনো পদ সংরক্ষণ করার দরকার পড়বে না। আগে বলা হয়েছিলো কোটার প্রার্থী না পাওয়া গেলে ওই পদে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে শূন্য রাখার জন্য। কোনোভাবেই অন্য প্রার্থী দিয়ে তা পূরণ করা যাবে না।

কিন্তু ২০১৮ সালের ৫ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদসমূহে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ কোটার (মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য) যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হলে এসব পদসমূহ জেলার প্রাপ্যতা অনুসারে স্ব স্ব জেলার সাধারণ প্রার্থীদের মধ্যে যারা মেধা তালিকার শীর্ষে রয়েছেন তাদের মধ্যে থেকে পূরণ করতে হবে।

যুগ্মসচিব আরো বলেন, আগে নিয়ম ছিলো কোটার পদে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে পদ শূন্য রাখতে হবে। এখন আমরা পরিপত্র জারি করে স্পষ্ট করে দিয়েছি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগে প্রথমে দেখতে হবে কোটার কোনো প্রার্থী পাওয়া যায় কী না। যদি কোটার কোনো যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায় এবং সেই কারণে পদ শূন্য থাকার বা পদ পূরণ করা সম্ভব না হয়, সেই ক্ষেত্রে ওই সব পদে জেলার জন্য বরাদ্দ করা পদের মেধাতালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী সাধারণ প্রার্থীদের মধ্যে থেকে পূরণ করতে পারবে। কোন পদ শূন্য রাখা বা পদ সংরক্ষণের আর দরকার হবে না।

তিনি আরো বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ওই পরিপত্র দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং করপোরেশনে নিয়োগের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হবে।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিলো। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ। কিন্তু ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সব ধরনের কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলন চলাকালে একই বছরের ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরের ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বলেন, কোটা নিয়ে যেহেতু এত কিছু, সেহেতু কোনো কোটাই আর রাখা হবে না। কোটা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথাও ওই দিন বলেন প্রধানমন্ত্রী। পরদিন কয়েকটি দাবি রেখে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদের সকল কোটাই বিলুপ্ত করা হয়। বাদ ছিলো তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদ। সেই পদগুলো পূরণের ক্ষেত্রে কোটার প্রার্থীর অভাব হলে জেলার জন্য বরাদ্দকৃত পদের সাধারণ মেধাবীদের মধ্যে যারা মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থান করবেন তাদের থেকে পূরণের নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়।


বিভাগ : চাকরি


এই বিভাগের আরও