শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য: মহসিন খোন্দকার
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৫:৪০ পিএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ পিএম
শিক্ষার সর্বত্র নৈরাজ্য চলছে। এটি যেনো এক সার্কাস! এই সার্কাস নিয়ন্ত্রণ করার যেনো কেউ নেই! খোদ নরসিংদী শহরে একটি কলেজে শুধু ভর্তি বাবদ নেওয়া হচ্ছে ২৫০০০ টাকা।এই শহরেই একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে প্লে'র ছাত্রের ভর্তি বাবদ নেওয়া হচ্ছে ৪৮০০০ টাকা। প্রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ভর্তি ফি নিচ্ছে ১০০০০, ১২০০০, ১৫০০০ টাকা।এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জিজ্ঞেস করবে কে আপনারা এতো টাকা নিচ্ছেন কেনো? কীভাবে নিচ্ছেন? এ যেনো রীতিমতো জুয়ার আসর! শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কতো টাকা নিবে, কতো টাকা নিবে না, সবই নির্ভর করে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের মেজাজ মর্জির উপর। কিছু কিছু স্কুল আছে যেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই বই খাতা কিনতে হয়, তাদের নির্দেশিত দর্জির কাছ থেকেই পোষাক বানাতে হয়, এমনকী তাদের নির্ধারণ করে দেওয়া দোকান থেকে টিফিন টুকুও কিনতে হয়। বাংলাদেশের কোনো গরুর বাজারেও বোধ হয় এমন সিন্ডিকেট থাকে না।এ যেনো এক শৃঙ্খল সংস্কৃতি অথবা ঔপনিবেশিক শোষণ সংস্কৃতি!
ভোগবাদী এ সমাজে লেখাপড়া সম্পূর্ণ অর্থ নির্ভর। অর্থাৎ নিরেট পণ্য।
বিদ্যার সব কিছুই এখন চড়া দামে কিনতে হয়। ভালো শিক্ষক, ভালো বিদ্যালয়, ভালো পড়াশুনা, ভালো পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে এখন মোটা অর্থের বিনিময়ে। বর্তমান পুঁজিবাদী বিদ্যাব্যবস্থার গ্যাঁড়াকলে পড়ে আমাদের অভিভাকদের অবস্থা মাড়াইযন্ত্রের মধ্যেপড়া ইক্ষু দন্ডের মতো, যেখানে নিংড়ে নিংড়ে রস নেওয়া হচ্ছে রস থাকা অব্দি।
অন্যদিকে অর্থের বিনিময়ে কিছু চালাক বিদ্যাব্যবসায়ী কচি শিক্ষার্থীর মস্তিষ্ক নিয়ে খেলে যাচ্ছেন যতো সব নোংরা খেলা। শ্রেণিকক্ষ এখন আর পাঠদানের স্থান নয়, এটি হলো কতিপয় শিক্ষক কোথায় প্রাইভেট পড়াবেন, কোথায় কোচিং করাবেন এসবের যোগাযোগ কেন্দ্র বা কন্টাক্ট রুম। কল্পনা করা যায় না ঢাকার একটি নামকরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শুধুমাত্র এক বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কোচিং ফি উঠেছে প্রায় দেড় কোটি টাকা! কিছু কিছু শিক্ষক বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করেন তাদের মূল উদ্দেশ্যই যেনো প্রাইভেট কোচিং ঠিক রাখা, চুটিয়ে বিদ্যা ব্যবসা করা। অনেক শিক্ষক আছেন যাদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে, ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ না রাখলে কোনভাবেই পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যায় না। এই দেশে এমন জঘন্য শিক্ষকও আছেন, যে ছাত্রছাত্রী তাকে এড়িয়ে চলবে, যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়বে না, অথবা তোষামোদ করবে না সেসব ছাত্রছাত্রীদের গণিত পরীক্ষার খাতায় মাইনাস চিহ্নকে প্লাস চিহ্ন বানিয়ে ফেল করিয়ে দিয়ে নিজের মানসিক কাঙালিপনাকে অতি নোংরাভাবে প্রকাশ করতেও দ্বিধা করেন না। যতো ভালো ছাত্রই হোক এসব শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে, খাতির না রাখলে তাদের কোপানলে মুহূর্তে ভস্ম হয়ে যাবে ছাত্রছাত্রীরা। তাই বর্তমানে এ দেশে অযথা শিক্ষক তোষণ এক নোংরা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। তাই আজকাল অভিভাবকরা নানা ভাবে, ছলে-বলে, কলে-কৌশলে, উপহার-উপঢৌকনে শিক্ষক তুষ্ট করার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।
অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দুই ভাগে বিভক্ত। বিত্তবানদের শিক্ষা, গরীবদের শিক্ষা। প্রায় সব বিত্তবানরাই এখন শহর কেন্দ্রীক হয়ে অতি ব্যয়বহুল বিদ্যাব্যবস্থর স্বাদ আস্বাদ গ্রহণ করতে মরিয়া। চকচকে বাচ্চা যাচ্ছে চকচকে স্কুলে চকচকে স্যারের কাছ থেকে চকচকে বিদ্যা গ্রহণ করার জন্যে।
অন্যদিকে গ্রামে গ্রামে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত এক হতদরিদ্র শিক্ষা চলছে গরীবের সন্তানদের জন্যে, যেখানে প্রায়শ অপরিস্কার জামাকাপড় পরে, প্রায় সবাই খালি পায়ে অনেকটা অভুক্ত বাচ্চারা যাচ্ছে ভারাক্রান্ত দু:শ্চিন্তাগ্রস্ত স্যারের কাছে বিদ্যা আনতে। যেখানে অধিকাংশ শিক্ষকই অদক্ষ, ব্যর্থ, ফাঁকিবাজ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। আর গ্রামের অধিকাংশ অভিভাবকরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় তাদের সন্তানদের জন্যে তারা বিশেষ অর্থ বরাদ্দ করতে পারছেন না বিশেষ পড়াশুনার জন্যে। কেমন করে পারবেন গ্রামের সরকারি প্রাথমিক স্কুলের (আমি যে স্কুলটির সভাপতি) পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া এক মেয়ের গরীব পিতা আমার কাছে তিনবার এসেছেন বার্ষিক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের ১০০ টাকা মওকুফের জন্যে। আর শহরে একটি স্কুলের একজন ছাত্র প্রতিদিন টিফিন খরচই করে ফেলে ১০০/১৫০ টাকা। তাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা স্পষ্ট বিভাজিত।
অন্যদিকে ভৌগলিকভাবেও আমাদের শিক্ষা বিভাজিত। যেহেতু কোচিং প্রাইভেট এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা শহরেই বেশি তাই ভালো শিক্ষকরা সবাই শহরমুখী। গ্রামে আর ভালো অভিজ্ঞ দক্ষরা থাকতে চান না। তাই গ্রামের স্কুল-কলেজগুলো ভালো শিক্ষকের পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শহরের উন্নত জীবনবোধ, উন্নত যোগাযোগ, ভালো পরিবেশ, আধুনিকতার নানা উপাত্ত তাদেরকে ক্রমশ শহরমুখী করছে। তাই ভৌগলিকভাবে গ্রাম সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বর্তমানে আমাদের জাতীয় শিক্ষা এক কঠিন ক্যান্সারের রোগী। সে ক্যান্সারের নাম, নকল। যেনোতেনো ভাবে ছাত্রছাত্রী পাশ করানোর এক ঘৃণ্য তৎপরতা আমাদের জাতীয় শিক্ষাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। তবে বর্তমানে নকল বা দুর্নীতির জন্যে ছাত্রছাত্রীরা নয়, মূলত দায়ী শিক্ষকরাই। তাই একটি কথা বর্তমানে বাতাসে খুব ভেসে বেড়াচ্ছে, ছাত্রছাত্রীরা নকল করে না, নকল করে শিক্ষকরা। আমাদের সরকার বাহাদুর প্রায় সময়ই চাপ দিয়ে থাকেন পাবলিক পরীক্ষার ভালো ফলাফলের জন্যে। শিক্ষক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে নিজেরাই নানা ফন্দিফিকির বের করেন প্রতিষ্ঠানের ভালো ফলাফলের জন্যে। তাই তারা প্রায়শ পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই প্রশ্ন দেখে উত্তর তৈরি করে ফেলেন পরীক্ষার্থীদের জন্যে, যে বিষয়ের পরীক্ষা সে বিষয়ের শিক্ষককে পরীক্ষার হলে দায়িত্ব দেন কক্ষপরিদর্শকের যাতে সে শিক্ষক সরাসরি সহযোগিতা করতে পারেন পরীক্ষার্থীদেরকে, পরীক্ষার হলে গিয়ে শিক্ষকরা নৈব্যর্তিক প্রশ্নের উত্তর বলে দেন, পরীক্ষা শেষে গোপনে পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র আবার সঠিকভাবে লেখার ব্যবস্থা করেন, এসবের পরও পাশ করানোর জন্যে বহু কীর্তিকলাপ করে থাকেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসাধু শিক্ষকরা। এসব করে করে আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদেরকে ধবংসের শেষ কিনারায় নেওয়া হয়েছে। এখনই সময় শিক্ষার ভেতর থেকে নকল নামক এই ক্যান্সার দূর করা ও সকল নৈরাজ্য বন্ধ করা।
লেখক: কবি ও লেখক ।
বিভাগ : মতামত
- রেডি টু কুক মৎস্যপণ্য উৎপাদন গবেষণা আরও জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- নরসিংদীতে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটি গঠন
- নরসিংদীতে সততা চর্চার অভ্যাস গড়তে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা
- বেলাবতে অনুপস্থিতিসহ দুর্নীতির অভিযোগে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি
- মাধবদীতে জুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩
- এক দফার আন্দোলন শুধু দুই মাসের নয়, ১৬ বছরের আন্দোলন: খায়রুল কবির খোকন
- নরসিংদীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলা বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি
- স্ত্রীর সঙ্গে কলহের জেরে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে স্বামীর আত্মহত্যা
- যক্ষ্মারোগ নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময়
- আওয়ামী লীগ ভেবেছিল তারা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে: খায়রুল কবির খোকন
- রেডি টু কুক মৎস্যপণ্য উৎপাদন গবেষণা আরও জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- নরসিংদীতে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটি গঠন
- নরসিংদীতে সততা চর্চার অভ্যাস গড়তে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা
- বেলাবতে অনুপস্থিতিসহ দুর্নীতির অভিযোগে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি
- মাধবদীতে জুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩
- এক দফার আন্দোলন শুধু দুই মাসের নয়, ১৬ বছরের আন্দোলন: খায়রুল কবির খোকন
- নরসিংদীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলা বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি
- স্ত্রীর সঙ্গে কলহের জেরে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে স্বামীর আত্মহত্যা
- যক্ষ্মারোগ নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময়
- আওয়ামী লীগ ভেবেছিল তারা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে: খায়রুল কবির খোকন