পলাশে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এতিমখানার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

১১ জুলাই ২০২০, ০৬:৫৫ পিএম | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৩ এএম


পলাশে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এতিমখানার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

আল-আমিন মিয়া:
নরসিংদীর পলাশে এতিমখানার বিভিন্ন আয়-ব্যয়ে ভূয়া ভাউচার ও হিসাব বিবরণী দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ইছাখালী দারুল মাছাকীন ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠানের কার্যকারী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইছাখালী ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ.ক.ম রেজাউল করীমের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এতিমখানার সভাপতি ও কার্যকারী সদস্যরা।

অভিযোগ সূত্রে ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ.ক.ম রেজাউল করীম বিভিন্ন অপ-কৌশলে এতিমখানার নামে-বেনামে দোকান ঘর নির্মাণে অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। তাছাড়া এতিমখানার সোনালী ব্যাংক পলাশ শাখা থেকে সরকারি বরাদ্দের ২ লাখ ৪১ হাজার টাকা উত্তেলনকৃত সমুদয় টাকা ইসলামী ব্যাংকে জমা না দিয়ে ৪১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ব্যাংক স্ট্যাটমেন্টের মাধ্যমে গত সভায় তার সত্যতা যাচাই হয়েছে বলেও জানান পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।


অভিযোগে আরও বলা হয়, এতিমখানার বিভিন্ন অনুদানের টাকা গোপন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। আয়-ব্যয়ের ভূয়া ভাউচার ও হিসাব বিবরণী দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া নিয়েছে অধ্যক্ষ। শুধু তাই নয়, এতিমখানার নির্মাণাধীন দোকান ভাড়া মাদ্রাসার রশিদের মাধ্যমে টাকা আদায় করে গোপন রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ আ.ক.ম রেজাউল করীম। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুকে) ব্যাপক তোলপাড় ও এতিমখানা কার্যকারী কমিটির একাংশ এবং এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বইছে প্রতিবাদের ঝড়।


জানতে চাইলে এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সদস্য এসএম আলমগীর হোসেন ও আলমগীর মিয়া জানান, এতিমখানার দোকান নির্মাণ হিসাব বিবরণীতে বাস্তবের সাথে প্রচুর গড়মিল রয়েছে। যার মধ্যে রাজ মিস্ত্রি বাবদ চুক্তিকৃত টাকার চেয়ে অনেক বেশি টাকার ভাউচার দেখানো, নির্মাণ কাজে ব্যয়কৃত সিমেন্ট পরিমাপ অস্বাভাবিক ও বস্তার সাথে টাকার গড়মিল। মালামালসহ ওয়ারিং খরচ বেশি ধরা, নির্মাণ কাজে বালুর হিসাব গড়মিল, মাটি ভরাট চুক্তি চেয়ে বেশি ব্যয় দেখানোসহ সোনালী ব্যাংক পলাশ শাখা থেকে সরকারি বরাদ্দের ২ লাখ ৪১ হাজার টাকা উত্তেলনকৃত সমুদয় টাকা ইসলামী ব্যাংকে জমা না দিয়ে ৪১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে। যার কোনো সঠিক হিসাব অধ্যক্ষ দিতে পারেননি।


এ ঘটনায় এতিমখানার সভাপতি সোহরাব হোসেন ও কার্যকারী সদস্য রহিম পাঠান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ সমাজ সেবা কার্যালয় বরাবর দায়ের করেন। এছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার দোকান ভাড়ার নামে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার অনিয়মের অভিযোগ করেন আনিসুর রহমান নামে এক ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর আগে অধ্যক্ষ রেজাউল করিম আমার কাছে দোকান ভাড়া দিবে বলে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু কোন রশিদ দেননি। এমনকি এখনো পর্যন্ত দোকান ও বুঝিয়ে দেয়নি।


তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইছাখালী দারুল মাছাকীন ইসলামিয়া এতিমখানার কার্যকারী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইছাখালী ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ.ক.ম রেজাউল করিম। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ গুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এতিমখানা কমিটিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বচ্ছভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন বলেও দাবি করেন তিনি।


এ ব্যাপারে পলাশ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, অর্থ আত্মসাৎতের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি এমপি স্যার ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নলেজে আছে। তদন্তের পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



এই বিভাগের আরও