নরসিংদীতে বেড়ে চলেছে নিবন্ধনহীন কিন্ডারগার্টেন স্কুল বাণিজ্য

০৯ মে ২০১৮, ১০:৪৭ এএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৭ পিএম


নরসিংদীতে বেড়ে চলেছে  নিবন্ধনহীন কিন্ডারগার্টেন স্কুল বাণিজ্য
অনলাইন ডেস্ক [caption id="attachment_2397" align="alignnone" width="510"] ছবিঃ সংগৃহীত[/caption] নরসিংদীর অলিতে-গলিতে কিছুদিন পরপরই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল। বাদ নেই ইউনিয়ন, গ্রাম, চরাঞ্চল পর্যন্তও। একইভাবে বাড়ছে অনুমোদনহীন ব্যক্তি পর্যায়ে পরিচালিত বিদ্যালয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দূরত্বের বিধান থাকলেও ৫০ গজের মধ্যেই রয়েছে একাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল। ভর্তি ফি, টিউশন ফিসহ কোন ধরনের ফি আদায়ের ক্ষেত্রে একটির সাথে অন্যটির মিল নেই। নীতিমালা না থাকায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কিংবা মালিকের ইচ্ছে মাফিক অর্থ আদায় করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। নীতিমালা এবং তদারকি ছাড়াই নরসিংদীতে পরিচালিত হচ্ছে ১ হাজারের মতো কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও ব্যক্তি পর্যায়ে পরিচালিত বিদ্যালয়। [caption id="attachment_2399" align="alignnone" width="600"] ছবিঃ সংগৃহীত[/caption] শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চ হারে অর্থ আদায় করলেও এসব স্কুলে শিক্ষার তেমন কোন পরিবেশ নেই। নেই পর্যাপ্ত ক্লাস রুম, খেলার মাঠ। ছোট একটি বাসা কিংবা দু’-তিনটি রুম ভাড়া করেই চলছে এর শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষকদেরও নেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ। বড় শহরগুলোতে শিক্ষকদের বেতন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিলেও জেলা ও উপজেলা শহরের কিন্ডারগার্টেনের স্কুলে শিক্ষকরা বেতন পায় ৩ থেকে ৮ হাজার টাকা। বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে কোচিং কিংবা প্রাইভেটেই ভরসা করেন তারা। এছাড়া মূল ধারার সাথে মিল নেই এসব স্কুলের পাঠ্যপুস্তকেও। নরসিংদীতে শিক্ষার্থীরা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করলেও তাদের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস না পড়িয়ে পড়ানো হয় বিদেশিদের ইতিহাস। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদানের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন আগ্রহই নেই। আপত্তি রয়েছে সরকারি নীতিমালা মানতেও। সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে নীতিমালার আওতায় আনার কথা বললেও তা বক্তব্যের পর্যায়েই রয়ে গেছে। এসব বিদ্যালয়কে মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে একই পাঠ্যক্রমের আওতায় আনলে দূরত্বসহ অন্যান্য অনিয়ম কমে আসবে। নরসিংদীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোথাও দু’টি রুম, কোথাওবা তার বেশি রুম নিয়ে নরসিংদীর অলিগলিতে গড়ে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল। প্রতি বছরই বাড়ছে এমন স্কুলের সংখ্যা। তথাকথিত উচ্চ শিক্ষার বাসনা নিয়ে অভিভাবকরাও এসব স্কুলে তাদের সন্তানদের ভর্তি করছেন। অথচ এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই নেই কোন নিবন্ধন। পাঠদান ও শিক্ষা কার্যক্রম পদ্ধতিও পরিচালিত হয় নিজেদের মন মতো। দেশীয় শিক্ষাক্রমের চেয়ে বিদেশী শিক্ষাক্রম অনুসরণেই আগ্রহী তারা। [caption id="attachment_2398" align="alignnone" width="600"] ছবিঃ সংগৃহীত[/caption] অথচ কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার গত ২০১২ সালে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। নীতিমালা অনুযায়ী সে বছর জুন মাসের মধ্যে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর নিবন্ধন করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্ত বেঁধে দেয়া সময় তো দূরের কথা, এখন পর্যন্ত নিবন্ধনে আগ্রহী হয়নি অধিকাংশ স্কুল। পরবর্তীতে ২০১৪ সালেও কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্ত সেবারও কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশই এতে আগ্রহ দেখায়নি। নাম প্রকাশ এ অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক জানায়, আমাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে কোচিংয়ের নাম করে ৩০০ থেকে প্রায় ৬০০ টাকা আদায় করা হয় যা গরীব শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন,নরসিংদীর আনাচকানাচে গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন ও ব্যক্তি পর্যায়ে পরিচালিত বিদ্যালয়ের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ছাত্রশূন্য হয়ে পড়ছে। শিগগিরই এসব বিদ্যালয়কে তদারকির আওতায় আনা হবে।  


এই বিভাগের আরও