নরসিংদীতে অধ্যক্ষের পেটে এতিমের কোটি টাকা!

২৩ এপ্রিল ২০১৮, ০৮:৫০ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ পিএম


নরসিংদীতে অধ্যক্ষের পেটে এতিমের কোটি টাকা!
অনলাইন ডেস্ক [caption id="attachment_2284" align="alignnone" width="500"] Collected[/caption] নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার একটি এতিমখানার প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানেরই খোদ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। আর এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন মাদরাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠাতার মেয়ে মোছলেমা খাতুন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঐহিত্যবাহী ইসলামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কুমরাদী দারুল উলুম সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা ও কুমরাদী দারুল উলুম এতিমখানা। প্রতিষ্ঠান দুটির প্রতিষ্ঠাতা জেলার শিবপুর উপজেলার কুমরাদী গ্রামের আবদুল আজিজ। তিনি ১৯২৭ সালে মাদরাসা ও ১৯৩৩ সালে এতিমখানাটি ৬৫০ শতাংশ জমির ওপর এলাকাবাসীর সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সময় আবদুল আজিজ এতিমখানার দুস্থ এতিমদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২ হাজার ৭৮৯ শতাংশ (৮০ বিঘা) জমি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ওয়াক্ফ করে দেন। কিন্তু এসব সম্পত্তি মাদরাসার অধ্যক্ষ আবদুল জলিলসহ স্থানীয় ৪/৫ জন নিজেরা ভোগ দখল করে প্রায় ২ কোটি ৫৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকাসহ ওয়াক্ফ করা সম্পত্তি ভোগদখল করে খাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সম্পত্তির ওপর নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনাসহ পলাশের ইছাখালী মৌজায় ২২ বিঘা জমির ওপর বিশাল পুকুরের ইজারার টাকাও রয়েছে। তা সত্ত্বেও এতিমদের প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়ার পর এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজের মেয়ে মোছলেমা খাতুন শিবপুরের ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটি এসব অভিযোগের সত্যতা পায়। হাজারো এতিমদের প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এখন ৪৪ জনে নেমে এসেছে বলে জানা গেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান সরেজমিন তদন্ত করে এর সত্যতা পান। এই অভিযোগ দায়েরে ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যক্ষ আবদুল জলিল এতিম ছাত্রদের বের করে দেয়ার নতুন অভিযোগ উঠেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে ছাত্রীসংখ্যা ১৭ থাকলেও বর্তমানে কোনো ছাত্র নেই বললেই চলে। এ ঘটনায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন ইউএনও। ওই কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের অনুরোধ করা হলেও রহস্যজনক কারণে তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে স্থানীয় মো. ওয়ালি উল্লাহকে সভাপতি ও মো. আবুল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৪১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। তারা এতিমখানার আয় ব্যয়ের হিসাব চাইলেই দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। এ ব্যাপারে কুমরাদী দারুল উলুম এতিমখানার সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, ‘আবদুল জলিল মূলত রাজাকার পরিবারের সদস্য। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভাই বাতেন ছিলেন রাজাকারদের প্রধান। যার কারণে যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধারা তার ভাইকে হত্যা করেন। সেই রাজাকারের ভাইয়ের কাছে এ ধরনের লুটপাট অনিয়ম ছাড়া আর কী আশা করা যেতে পারে?’ এতিমখানা প্রতিষ্ঠাতার মেয়ে মোছলেমা খাতুন বলেন, ‘আবদুল জলিলের অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ছিল অবৈধ। অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে যে অভিজ্ঞতার দরকার ছিল তার কোনো কাগজপত্র তিনি আজও জমা দেননি। অবৈধ এই অধ্যক্ষ লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছেন।’ এ ব্যাপারে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আবদুল জলিল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য।’ শিবপুরের ইউএনও শীলু রায় বলেন, ‘তদন্ত কমিটি দু’পক্ষকেই ডেকেছিল। কোনো পক্ষই আসেনি। বিষয়টি আরো খোঁজ নেয়া হচ্ছে।’