নরসিংদীর আড়িয়াল, ব্রহ্মপুত্র নদীগুলো এখন নাব্যতা হারিয়ে ফসলের মাঠ

২২ এপ্রিল ২০১৮, ০২:৫৮ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১০ এএম


নরসিংদীর আড়িয়াল, ব্রহ্মপুত্র নদীগুলো এখন নাব্যতা হারিয়ে ফসলের মাঠ
অনলাইন ডেস্ক নরসিংদী জেলা বেলাব উপজেলার সাথেই কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব উপজেলার`ই মধ্যে আড়িয়াল খাঁ নদী। এখন বাদম,মরিচ,লাল শাক,কড়লা,মিষ্টি আলো,আলো,টমেটো,পেয়াজ,রসুন ধানসহ আরো অনেক কিছুই চাষাবাদ হয় এই আড়িয়াল খাঁ নদীতে। বিন্নাবাইদ গ্রামের বাদাম চাষি পাগলা সাংবাদিকদের জানান,আগে আমার দাদা এই নদী থেকে মাছ দরতো, আর আমি এখন এই নদীতে বাদম চাষ করি।এখন পানিও নেই, মাছও আর তেমন নেই। আগে মাছ দরে খেয়েছি এখন কিনে খাই। পোড়াদীয়ার মনছুর,আবুল মিয়া,আঃরশিদ বলেন,আগের দিন আমরা নদীতে গোসল করতাম কত ভালো লাগতো।কোথায় গেল সেই দিন। বেলাব গ্রামের মিয়া চাঁন,সুরুজ আলী বলেন,এই আড়িয়াল খাঁর নদীতে গোসল করিলে মাছ পড়তো পায়ের নিচে,সেই মাছ দরে বাড়িত নিয়ে মায়রে দিতাম রান্না করার জন্যে।মায়ের হাতের সেই রান্না করা মাছ খাইতাম। কোথায় গেল সেই মাছ আর এত পানি। [caption id="attachment_2279" align="alignnone" width="476"] Collected[/caption] বেলাব উপজেলা বাসী আরো বলেন,মানুষ আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ের মাটি বিক্রি, পাড় কেটে ফসলি জমি বানানো,নদী ভরাট এই কারনে হুমকির মুখে মৎস্যসম্পদ।জেলার মনোহরদী উপজেলা ও পার্শপর্তী গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলা। দুই উপজেলাকে ভাগ করে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র শাখা নদী নাব্যতা হারিয়ে এখন কাল ও ধানের ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার কৃষিসেচ, জীববৈচিত্র্য ও মৎস্যসম্পদ।দীর্ঘ দিন ধরে নদী খনন না করায়, নদীতে বিভিন্ন বাজারের ময়লা ফেলা, নদীরপাড় কেটে ভাটায় মাটি বিক্রি করা,মাটি নিচে নামিয়ে ফসলের চাষ উপযোগী করে তোলাই এ নদীর নাব্যতা হারানোর মূল কারণ।মনোহরদী উপজেলার স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানান, একসময় এই নদীতে ইঞ্জিনচালিত ও পালের নৌকা চলত।এখন পালের নৌকা তো দূরের কথা কলা গাছের বেলাও চলেনা এই নদীতে। এবং ছোট্ট বেলা দেখতাম সনমানিয়া ঘাট থেকে শুরু হতো নারান্দী ঘাটে এসে নৌকা বাইছ শেষ হতো,সেসময় নদীতে পানি আর পানি থাকতো।হাজার হাজার মানুষ আসতো এই নৌকা বাইছ দেখতে। পানিও নেই আর এত বড় নৌকাও দেখিনা।ব্রহ্মপুত্র নদীতে ডেলা,কাকিয়া,চাপিলা,বাতাসি,বেড়া,চিংড়ি,কাটারিয়া,কাকিয়া,গোজি,বড় বড় বোয়াল,সোল,চিতল ছোট বড় বছরের পুরনো অনেক মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু কোথায় হারিয়ে গেল বছরের পুরনো সময়ের ছোট বড় অনেক মাছ। এখন সেটি গল্পের মতো হয়ে গিয়েছে।সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নাব্যতা হারানো নদটিতে কৃষকের কলা বাগান সাক সবজি ও রোপণ করা ধানের চারাগুলো সবুজ হয়ে উঠেছে।অল্প কিছু দিন পরেই ধান বেরিয়ে আসবে।যত দূর চোখ যায় সবুজ ধানের সমারোহ দেখে বিশ্বাসই হয় না এটা একসময় পূর্ণ যৌবনা নদী ছিল।লেবুতলা ইউনিয়ন শিমুলতলী গ্রামের কৃষক মান্নান,সবুজ মিয়া,আব্দুল বাতেন,শুকুন্দী ইউনিয়ন নারান্দী গ্রামের বাতেন মিয়া,দিঘাকান্দী গ্রামের শিমু বেগম বলেন, শুষ্ক মওসুমে এই নদী থেকে পানি উঠিয়ে বিভিন্ন সবজির চাষ করতাম। যেমন মরিচ, পটল,লাল শাক,লাউ, ডাটা,শিম ইত্যাদী কিন্তু এখন সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। এতে সবজি উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেছে।একদুরীয়া ইউনিয়ন,হাতিরদীয়ার কৃষক বুলবুল হোসেন দুঃখ করে বলেন,ব্রহ্মপুত্র নদী হাতিরদীয়া কলা বাজার ও গরু বাজার ঘাট থেকে কত যে মাছ ধরে খেয়েছি তা আল্লাহ ই জানে, কিন্তু এখন নদীর এমন পরিবেশ হয়েছে যে মনে হয় না আর সেই সুযোগ আর আমার জীবনে পাব। মনোহরদী ও বেলাব উপজেলার সচেতন মহল বলেন, আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীগুলো যদি দিন দিন নাব্যতা হারিয়ে ভড়াট হয়ে যায় তবে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন।