নরসিংদীর উয়ারি-বটেশ্বরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে “উয়ারি দুর্গ নগর উন্মুক্ত জাদুঘর”
০৪ এপ্রিল ২০১৮, ০২:৪২ এএম | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ এএম
স্টাফ রিপোর্টার,নরসিংদীঃ
তিন থেকে চার হাজার বছর আগের বাংলাদেশের প্রাচীনতম মানুষের গর্ত বসতিসহ (বাড়িঘর সংস্কৃতি) প্রাচীন মহাজনপদ সম্পর্কে জানতে ঘুরে আসতে পারেন নরসিংদীর উয়ারী বটেশ্বর দুর্গ নগর উন্মুক্ত জাদুঘর থেকে।
নরসিংদীর বেলাবো ও শিবপুর উপজেলার বেশকিছু এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মাটিচাপা পড়ে থাকা এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান দেখতে গিয়ে অনেকটা বিমুখ হয়ে ফিরতে হতো পর্যটকদের। পর্যটকদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে উয়ারী বটেশ্বর দুর্গ নগর উন্মুক্ত জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষনা কেন্দ্র ‘ঐতিহ্য অন্বেষন।’ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বেলাবো উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের উয়ারী এলাকায় উদ্বোধন করা হলো বাংলাদেশের প্রথম এ উন্মুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের।
নরসিংদী জেলা সদরের ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বেলাবো উপজেলার দুটি গ্রামের নাম উয়ারী-বটেশ্বর। যেখানে পাওয়া গেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন। ১৯৩৩ সালে সাপ্তাহিক মোহাম্মদী পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক হানিফ পাঠান এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি সুধী সমাজের গোচরে এনেছিলেন। পরবর্তীতে তার ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠান স্থানটির গুরুত্ব উল্লেখ করে ধারাবাহিকভাবে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৮৯ ইং সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার চক্রবর্তী উয়ারী-বটেশ্বর পরির্দশনে এসে সভ্যতার অনুমান করেছিলেন।
২০০০ ইং সালে বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্চার আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তায় সর্বপ্রথম উয়ারীতে পদ্ধতিগত প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয়। ২০০০ সাল থেকে ঐহিত্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের তত্বাবধানে পর্যায়ক্রমে খনন কাজের ফলে এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে উপ-মহাদেশের প্রাচীনতম জনবসতির একটি দূর্গ। আড়াই হাজার বছরের পুরনো ইট-সুরকির নির্মিত রাস্তা, আর্য আমলের লৌহ কুঠার, ১৫ সের ওজনের লৌহার হাতুড়ি, ছোটদের ব্যবহার্য মিনি লৌহ কুঠার, ধনুকের গোলক (স্প্রিং বল), পুরা মাটির শিবলিঙ্গ, পুরা মাটির স্ত্রী লিঙ্গ, নকশি প্রস্তুর গুটিকার মালাসহ নানা নিদর্শন।
সর্বশেষ প্রত্ন অঞ্চল টঙ্গিরটেকে ধারাবাহিক উৎখননে নান্দনিক অলঙ্করণ সমৃদ্ধ বৌদ্ধ মন্দির, গর্ভগৃহ, সীমানা প্রাচীরের সন্ধান পাওয়া গেছে। অলঙ্কৃত বিস্তৃত প্রবেশ পথ ছাড়াও মন্দির কমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত তিনটি স্তুপের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা ১২শ বছর আগের বলে ধারনা করা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রত্নসংগ্রাহক হানিফ পাঠানের ছেলে প্রত্নসংগ্রাহক হাবিবুল্লাহ পাঠান বলেন, উয়ারী বটেশ্বর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন মহাজনপদ, রাজধানী ও একটি দুর্গ নগর। ধাপে ধাপে ৫০ টি প্রত্নস্থানে উৎখননে এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা, উত্তরাঞ্চলীয় কালো মসৃণ মৃৎপাত্র, রোলেটেড মৃৎপাত্র, নবযুক্ত মৃৎপাত্র, ধাতব নিদর্শন, স্বল্প মূল্যবান পাথর ও কাঁচের পুতি, পোড়ামাটি ও পাথরের শিল্পবস্ত, বাটখাড়াসহ নানা অমূল্য প্রত্নবস্তু।
এছাড়া চুন-সুরকি নির্মিত রাস্তা, বৌদ্ধ পদ্ম মন্দির, বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ বিহারিকার পাশাপাশি ইটনির্মিত একটি বিশেষ অদ্বিতীয় স্থাপত্য বৌদ্ধ কুন্ড/ পুকুনিয়া আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু প্রতিবছর উৎখনন শেষে প্রত্নস্থান ও প্রত্নবস্তু দর্শনার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অর্থাভাবে স্থায়ী সংরক্ষণের পূর্ব পর্যন্ত প্রত্মস্থানসমূহ অস্থায়ীভাবে মাটি চাপা দিয়ে ঢেকে রাখা হয় এবং গবেষণার জন্য প্রত্নবস্তু ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। গবেষণা শেষে তা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়। তাই সারা বছর অনেক দেশি বিদেশি পর্যটক উয়ারী বটেশ্বর পরিদর্শনে এসে কিছুই দেখতে পেতেন না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটকদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্থায়ীভাবে উয়ারী বটেশ্বর দুর্গ নগর উন্মুক্ত জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষনা কেন্দ্র ‘ঐতিহ্য অন্বেষন।’এরই ধারাবাহিকতায় উন্মুক্ত জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। উয়ারী বটেশ্বর দুর্গ নগর উন্মুক্ত জাদুঘরে স্থান পেয়েছে ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ টি প্রত্নস্থানে উৎখননে প্রাপ্ত তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্নবস্তু। উপস্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন প্রত্নবস্তু ও মডেল, রেপ্লিকা, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রত্নবস্তুর আলোকচিত্র, বিবরণ, বিশ্লেষণ।
এ ধরনের প্রত্ন জাদুঘর বাংলাদেশে এই প্রথম উল্লেখ করে ঐহিত্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উয়ারী বটেশ্বরে এসে পর্যটকদের এখন আর বিমুখ হয়ে ফিরতে হবে না। পর্যটকরা মডেল গর্ত-বসতিতে নেমে ৩ থেকে ৪ হাজার বছর আগের বাংলাদেশ কেমন ছিল তা দেখতে পারবেন। শিশু কিশোররা প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করার অভিজ্ঞতা নিতে পারবে। সেই সাথে প্রতিঘন্টায় উয়ারী বটেশ্বর ডকুমেন্টারি ও ধারণকৃত প্রত্ন নাটক প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশের কোনও প্রত্নস্থানে পর্যটকদের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা এটাই প্রথম। উদ্বোধনের পর থেকে এখানে পর্যায়ক্রমে বাড়ছে দর্শনার্থীর উপস্থিতি।
বিভাগ : নরসিংদীর খবর
- মৎস্য অধিদপ্তরের জন্য ৮২টি নতুন পদ সৃজন
- আলোকবালীতে সেতু বাস্তবায়নে আন্দোলন কমিটি গঠন
- আমিরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন চালুর দাবিতে মানববন্ধন
- রেডি টু কুক মৎস্যপণ্য উৎপাদন গবেষণা আরও জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- নরসিংদীতে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটি গঠন
- নরসিংদীতে সততা চর্চার অভ্যাস গড়তে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা
- বেলাবতে অনুপস্থিতিসহ দুর্নীতির অভিযোগে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি
- মাধবদীতে জুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩
- এক দফার আন্দোলন শুধু দুই মাসের নয়, ১৬ বছরের আন্দোলন: খায়রুল কবির খোকন
- নরসিংদীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলা বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি
- মৎস্য অধিদপ্তরের জন্য ৮২টি নতুন পদ সৃজন
- আলোকবালীতে সেতু বাস্তবায়নে আন্দোলন কমিটি গঠন
- আমিরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন চালুর দাবিতে মানববন্ধন
- রেডি টু কুক মৎস্যপণ্য উৎপাদন গবেষণা আরও জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- নরসিংদীতে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটি গঠন
- নরসিংদীতে সততা চর্চার অভ্যাস গড়তে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা
- বেলাবতে অনুপস্থিতিসহ দুর্নীতির অভিযোগে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি
- মাধবদীতে জুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩
- এক দফার আন্দোলন শুধু দুই মাসের নয়, ১৬ বছরের আন্দোলন: খায়রুল কবির খোকন
- নরসিংদীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলা বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি