নরসিংদীর ১১ ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন

২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫:১৮ পিএম | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৭ এএম


নরসিংদীর ১১ ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চতুর্থ ধাপে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া অনেকটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে নরসিংদীর দুই উপজেলা পলাশ ও মনোহরদীর ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণ। পলাশের দুটি ইউনিয়নে কোন প্রকার সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও ১টি ইউনিয়নে অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন তিন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী। অপরদিকে মনোহরদী উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া অনেকটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হলেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে আসেন ভোটাররা। সকাল ৮টা থেকে টানা ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলে। পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অভিযোগ অনুযায়ী পারুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানেরবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পলাশ থানা উচ্চ বিদ্যালয়, বরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্ট পাওয়া যায়নি। এজেন্ট না থাকার সুযোগে নৌকার প্রার্থী কামরুল ইসলাম গাজীর সমর্থক ও বহিরাগত লোকজনকে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সীল মারতে দেখা যায়। সকালের দিকে কোথাও কোথাও ভোটাররা কেন্দ্রে গেলেও নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রতীকে প্রকাশ্যে সীল দিয়ে মেম্বার পদে অন্য প্রতীকে ইচ্ছেমত সীল মারতে বলা হয়। এমন অবস্থায় চলতে থাকায় বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর পৌণে ১টার মধ্যে তিন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। অপরদিকে চরসিন্দুর ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হয়।

অপরদিকে মনোহরদী উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণে অনিয়ম, সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভোটের শুরুতে বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারা ও এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। দুপুরে শুকুন্দী ইউ‌নিয়‌নের বালিয়াকান্দা সরকা‌রি প্রাথ‌মিক বিদ‌্যালয় কেন্দ্রে জোরপূর্বক ভোট প্রদান‌ করেন মোরগ প্রতীকের সদস্য প্রার্থী নূরুল হকের কর্মীরা। এনিয়ে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী বাছেদ প্রধানের কর্মী-সমর্থক‌দের ম‌ধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যা‌য়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘ‌টে। জোরপূর্বক জাল ভোট দেওয়ায় বিষয়টি প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে বারবার অভিযোগ করেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে কাচিকাটা ইউনিয়নের মাধুশাল উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। রোববার দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তীব্র শীতের কারণে শুরুতে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের ভিড় বাড়তে থাকে। পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি লক্ষনীয়।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ ধাপের পলাশ উপজেলার জিনারদী ও চরসিন্দুর এবং মনোহরদী উপজেলার লেবুতলা, চালাকচর, চন্দনবাড়ী, বড়চাপা, কাচিকাটা, শুকুন্দি, দৌলতপুর, একদুয়ারিয়া ও গোতাশিয়া ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ হয়। মোট ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪০ জন, সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩৮১ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মোট ১০৬টি ভোট কেন্দ্রের ৫৯১টি স্থায়ী ও ৫১টি অস্থায়ী ভোট কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হয় । পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন। এরমধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪ জন্য পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি ইউনিয়নে দায়িত্বে ছিলেন ১ জন করে ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া র‌্যাবের ১২টি টিম, ৯ প্লাটুন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।  

নরসিংদী জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মেছবাহ উদ্দিন বলেন, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুই উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোন প্রার্থীর পক্ষ থেকে কোনপ্রকার অভিযোগ পাইনি, ভোট কেন্দ্র বন্ধ হয়নি। ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করেছেন। কোথাও কোন সহিংসতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।



এই বিভাগের আরও