নরসিংদীতে উৎসবমুখর ভোটে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ৬০

২৮ নভেম্বর ২০২১, ০৫:৩১ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৪ পিএম


নরসিংদীতে উৎসবমুখর ভোটে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ৬০

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীতে কয়েকটি ইউনিয়নে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া রবিবার ব্যাপক ভোটার উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে তৃতীয় ধাপের ২২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। তৃতীয় ধাপে নরসিংদী সদর উপজেলার ১০টি ও রায়পুরা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।

সদর উপজেলার করিমপুর, নজরপুর, চিনিশপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বিচ্ছিন্ন হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিষ্ফোরন ও গুলিবিদ্ধসজ ৬০ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে অন্তত ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে তিনজনকে আশংকাজনকভাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকতার কার্যালয়, বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও ভোটাররা জানান, সকাল ৮টা থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুই উপজেলার ২২ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে আসেন নারী পুরুষরা। সবগুলো ইউনিয়নে ভোটার উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। সদর উপজেলার পাঁচদোনা ও পাইকারচর ইউনিয়নে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

দুপুরের পর সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে বিচ্ছিন্নভাবে হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিষ্ফোরন ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে দুপুর ১২ টার দিকে সদর উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের শ্রীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়াকে অবরুদ্ধ করে নৌকার প্রার্থী মুমিনুর রহমান আপেলের সমর্থকরা। এই জেরে দুপুর ১২ টার দিকে নৌকার প্রার্থী মুমিনুর রহমান আপেল করিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গেলে তাকে অবরুদ্ধ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা। এ ঘটনায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শর্টগানের রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয় অন্তত ২৫ জন আহত হয়।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে চিনিশপুর ইউনিয়নের চিনিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ককটেল বিষ্ফোরন ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের সহকারি উপপরিদর্শক মো. সাঈদ আনোয়ার ও মেম্বার পদপ্রার্থী সায়েম ভূইয়া আহত হয়। এসময় পুলিশ ৪টি তাজা ককটেল উদ্ধার করে। এছাড়া নজরপুর, আমদিয়া, করিমপুর, চিনিশপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বিক্ষিপ্তভাবে ককটেল বিষ্ফোরণ, হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় আরো ৩৫ জন আহত হয়।

এদিকে রায়পুরায় ১২টি ইউনিয়নে সহিংসতা ছাড়াই  উৎসবমুখর পরিবেশে সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকাল চারটা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ শেষ হয়। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। সকালে শীতের কুয়াশা ভেদ করে প্রত্যন্ত এলাকার ভোটাররা ভিড় এড়াতে কেন্দ্রগুলোতে নির্ধারিত সময়ের আগেই উপস্থিত হন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়তে থাকে। তবে কিছু কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

দুপুরে পলাশতলী ইউনিয়নে ৯নং ওয়ার্ডে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। মহেশপুর ইউনিয়ন ৮নং কেন্দ্রে এবং রায়পুরা ইউনিয়নে ৭,৮,৪ কেন্দ্রেগুলোতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এসব কেন্দ্রগুলোতে অল্প সময় বন্ধ থাকার পর প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় আবারো ভোট গ্রহণ চলে।

বিকেলে মুছাপুর ইউনিয়নে ৪ নং ওয়ার্ডে সানাউল্লাহ ভূইয়ার আনারস প্রতিকের সমর্থকরা নৌকার প্রার্থী মো. হোসেন ভূইয়াকে আধাঘন্টা আটক রাখে। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অপরদিকে মরজাল ইউনিয়নে ৯নং কেন্দ্রে সিল মারার এবং ৪নং কেন্দ্রে কিছুটা দুই মেম্বার সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একই স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা নৌকার অস্থায়ী ক্যাম্পে হামলা ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে।

সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা, মো. আবদুল বাকী বলেন, আমাদের হাসপাতালে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত  ৫০ জন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিন ইউনিয়নে ভোট বর্জন করার ঘোষণা দেন তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এরমধ্যে সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস প্রতীক) নাজিম উদ্দিন ভূইয়া রিপন, কাঁঠালিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জহিরুল ইসলাম হিরন মোল্লা ও করিমপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া।

নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে জানতে পুলিশ সুপারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান ফোনে জানান, আমি রায়পুরা উপজেলার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছি, এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। রায়পুরায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সদর উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি আমি এই মুহুর্তে জানি না।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জায়েদ শাহরিয়ার বলেন, নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। তবে এসব ঘটনায় ঠিক কয়জন আহত হয়েছেন এই মুহুর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। সব কেন্দ্রের তথ্য নেয়া হচ্ছে, পাওয়ার পর বলা যাবে।