নরসিংদীতে হোটেল কক্ষে মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকারের চেষ্টা করায় ছুরিকাঘাত

২২ ডিসেম্বর ২০২০, ০৫:১৪ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ পিএম


নরসিংদীতে হোটেল কক্ষে মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকারের চেষ্টা করায় ছুরিকাঘাত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদী শহরের একটি আবাসিক হোটেলে পালিয়ে আসা এক মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকারের চেষ্টার সময় এনামুল হক (৪৭) নামের এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। বলাৎকারের ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে নরসিংদী মডেল থানায় ওই মাদ্রাসাছাত্র বাদী হয়ে অভিযুক্ত এনামুল হককে আসামী করে মামলা করেছেন।

এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন আবাসিক সায়মা হোটেলের একটি কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১১টার দিকে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ ওই আবাসিক হোটেল থেকে দুজনকে আটক করে। মঙ্গলবার দুপুরে মামলা হওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

১৬ বছর বয়সী ওই মাদ্রাসাছাত্রের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে। সে গাজীপুরের টঙ্গীর মাদ্রাসায়ে নববী নামের একটি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী। একটি মুঠোফোন কেনার জন্য ওই মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে সে নরসিংদী এসেছিল। অন্যদিকে অভিযুক্ত এনামুল হক ময়মনসিংহের গৌরিপুর উপজেলার ষোলগাই গ্রামের আবুল হাসানের ছেলে। একটি অস্ত্র মামলায় নরসিংদী জেলা কারাগারে থাকা ছেলের জামিন করাতে চার-পাঁচ দিনের প্রস্তুতি নিয়ে এনামুল হক নরসিংদী এসেছিলেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের টঙ্গীর একটি মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে আসা ওই মাদ্রাসাছাত্র একটি মুঠোফোন কেনার জন্য নরসিংদীতে আসেন। ওই সন্ধ্যায়ই নরসিংদী রেলস্টেশনের একটি চায়ের দোকানে এনামুল হক নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। যার শুরুটা হয় এনামুলের মুঠোফোন দিয়ে বাড়িতে ফোন করার জন্য সাহায্য চেয়ে। এক পর্যায়ে রাতটা পার করার জন্য এনামুলের কাছে আশ্রয় চায় সে। এর পরেই তাকে সঙ্গে নিয়ে এই হোটেলে আসেন এনামুল হক।

হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় এনামুল হক নামের ওই ব্যক্তি এক কিশোর মাদ্রাসাছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এই হোটেলে আসেন। এখানে চার-পাঁচদিন থাকবেন বলে তিনি ওই সময় আমাদের জানান। তবে সঙ্গে থাকা ওই মাদ্রাসাছাত্র কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে চলে যাবে বলে আমাদের জানানো হয়। পরে তাকে হোটেলটির দুতলার এক নাম্বার কক্ষটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। রাত ৮টার দিকে ওই কিশোরের চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনে অন্যান্য কক্ষের লোকজন সেখানে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায় এনামুল হকের পা থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে আর ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আছে ওই মাদ্রাসাছাত্র। ওই সময় মাদ্রাসাছাত্রটি জানায়, তাকে বলাৎকারের চেষ্টা করায় এনামুল হককে ছুরিকাঘাত করেছে সে।

পার্শ্ববর্তী কক্ষে অবস্থানরত মো. হাসান নামের একজন জানান, কক্ষে প্রবেশের কিছুক্ষণ পরই ওই মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকারের চেষ্টা করতে থাকেন এনামুল হক। কৌশলে এসব দৃশ্য একটি মুঠোফোনে ভিডিও করে রাখে ওই মাদ্রাসাছাত্র। পরে এনামুলকে ব্যাপক মারধর করে সঙ্গে থাকা একটি ছুরি দিয়ে তার পায়ের উরুতে আঘাত করেন তিনি। এর পরেই দুজনের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমরা তার কক্ষের সামনে যাই। আমাদের সামনেই সে নিজের হাতেও ওই ছুরি দিয়েই আঘাত করে। পরে ওই মাদ্রাসাছাত্র ৯৯৯ এ ফোন করেন। কিন্তু সংযোগ না পেয়ে নিজেই পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে তাদের দুজনকেই থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, ওই হোটেল গিয়ে দুজনকেই আটক করি আমরা। এনামুল হকের পায়ের উরুতে দুই ইঞ্চির মত রক্তাক্ত ক্ষত ছিল। তাকে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাঁর পায়ে পাঁচটি সেলাই দেন। পরে দুজনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় ওই মাদ্রাসাছাত্রের সঙ্গে একটি ছুরি, আইফোনসহ দুইটি মুঠোফোন ও সিসা জাতীয় মাদক গ্রহণের সরঞ্জাম পাওয়া যায়। পুলিশের পক্ষ থেকে ওই মাদ্রাসাছাত্রের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা আজ সকালে থানায় এসে মামলার প্রস্তুতি নেন। পরে দুপুরে ওই মাদ্রাসাছাত্র নিজেই বাদী হয়ে এনামুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

নরসিংদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান জানান, বলাৎকারের চেষ্টা করায় এনামুল হককে ছুরিকাঘাত করার কথা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে ওই মাদ্রাসাছাত্র। এই ঘটনার মাদ্রাসাছাত্রের করা একটি ভিডিওচিত্র পেয়েছি। এই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর এনামুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

 



এই বিভাগের আরও