বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অবমাননা প্রকারান্তে সংবিধানের অবমাননা: ওবায়দুল কাদের

০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৪:২২ পিএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫১ এএম


বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অবমাননা প্রকারান্তে সংবিধানের অবমাননা: ওবায়দুল কাদের
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভিডিও কনফারেন্সে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত করা মানে আমাদের জাতির চেতনার মর্ম মূলে আঘাত করা। জাতির পিতার প্রতিকৃতি প্রদর্শন ও সংরক্ষণ সাংবিধানিকভাবে লিপিবদ্ধ। তাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অবমাননা প্রকারান্তে সংবিধানের অবমাননা। কুষ্টিয়ায় যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে। আমি পরিস্কারভাবে বলতে চাই, তারা যে অপকর্ম করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। সেখানে যারা জড়িত, তাদের ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। পুলিশ তদন্ত করছে। অপরাধী যারাই হউক তাদেরকে শাস্তি পেতেই হবে। দেশের লাখ লাখ কর্মী আজ ক্ষুব্ধ।


রবিবার (০৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টায় নরসিংদী পৌরসভার সভাকক্ষে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আক্রমন করে না, কিন্তু আক্রমনের শিকার হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে একবিন্দুও পিছ পা হয় না। আমরা উদ্রবাদী গোষ্ঠিকে স্পষ্ঠভাবে বলতে চাই, আপনারা অনেক করেছেন, এনাফ ইন এনাফ, এবার থামুন। বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু মানে মুক্তিযুদ্ধ, আর বঙ্গবন্ধুকে আঘাত করা মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আক্রান্ত করা। আমি উদ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমি আমাদের কর্মীদের শান্ত রেখেছি, বেশি বাড়াবাড়ি করলে কেউ ঘরে বসে চুপ করে থাকবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কারও স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না।

ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ইতিহাসের স্মারক হিসেবে মধ্য প্রাচ্যের প্রতিটি মুসলিম প্রধান দেশে নানা রকমের ভাস্কর্য রয়েছে। সেখানে কোন দিন কোন প্রশ্ন উঠেনি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আলেমরা, ইসলামী চিন্তাবিদরা কোনদিন প্রতিবাদ করেনি। সেখানে বাংলাদেশে হঠাৎ করে কেন এত দ্বন্দ্ব। একটা শ্রেণীর লোকজন উদ্দেশ্যমূলক ভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা করছে। এর পেছনে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি রয়েছে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর এই রাজনৈতিক দূরভিসন্ধির বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অর্ধশতক যুগের বেশি সময় ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুদার ভাস্কর্য রয়েছে। সেই মধুদার ভাস্কর্যও ভাঙচুর করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদেরও একটা ধৈর্য্যরে সীমা আছে। ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙে যেতে দিবেন না। একটা মীমাংসীত বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করবেন না।

তিনি বলেন, আমরা সবাই ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর দিন শুরু হয় তাহাজ্জুদ আর ফজরের নামাজের মাধ্যমে। কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে। এই দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মডেল মসজিদ নির্মাণ, কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি শেখ হাসিনার অবদান। তাই যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন তাদেরকেও আমরা সতর্ক করছি। যদি কেউ রাষ্ট্র, জনগণ এবং ধর্মকে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র লিপ্ত হন যদি মানুষের ভাস্কর্য আর দেবতার ভাস্কর্য এ দুটির মধ্যে যারা ঘুলিয়ে ফেলেছেন সেটা কোন মুসলিম দেশে তার কোন দৃষ্টান্ত নেই। তাদেরও আমি করি বিবেক দিয়ে অন্তর দিয়ে বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে পথ চলা উচিত। কোন প্রকার উস্কানিতে, বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ করছি।

নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ নিয়ে ওবাদুল কাদের বলেন, নরসিংদী জেলা বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্বে চলছে। আমরা সেটা কখনো আশা করিনি। সেখানে নির্বাচিত কাউন্সিলদের দ্বারা নির্বাচিত কমিটি এতদিন নেতৃত্বে ছিলেন। আপনারা নেতাকর্মীরা সাক্ষী, নরসিংদীতে হয়ত আমরা দুই নেতার সংঘর্ষের খবর কখনো পাইনি। তবে তাদের দুজন দুই মেরুতে অবস্থান করছিলেন। যা দলের সংগঠনিক ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছিল, সংগঠনকে চলার পথে বাঁধাগ্রস্ত করছিল। সে অবস্থায় আমরা সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সভাপতি ও সেক্রেটারি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তারা দুজন একসঙ্গে চলতে পারবে না। আমরা অনেক পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তারা মানেন নি। তাই দলকে গতিশীল করতে, দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তাদের অব্যাহতি দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে যে সকল জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেসব জেলাকে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলে নিজের অবস্থান ভারী করার জন্য নিজের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করা যাবে না। করা যাবে না কোন পকেট কমিটি। দলকে শক্তিশালী করতে হলে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, দলে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, চিহ্নিত দখলদার, চিহ্নিত মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ী, চিহ্নিত বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলে ঢুকানো যাবে না। নরসিংদীর একজন ব্যক্তির জন্য সারাদেশে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আমি জানি না তাদেরকে দলে কারা ঢুকিয়েছে। একটা খারাপ কাজ অনেক ভাল কাজকেও ঢেকে দিতে পারে। আজকে দুয়েকজনের জন্য পুরো দল বিতর্কিত হতে পারে না। যাদের জন্য বিতর্ক তৈরি হবে তাদেরকে বহিস্কার করতে হবে। আওয়ামী লীগে কর্মীর অভাব নেই। আমরা এতটা সংকটে পড়িনি যে বিতর্কিতদের ডেকে এনে জায়গা করে দিতে হবে। যুব মহিলা লীগ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। তাদেরকে দূরে রাখাই ভাল। তারা দলের ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি করে। কার শেল্টারে যুবমহিলা লীগের একটা শীর্ষ পদে পাপিয়ার মত একটা মেয়ে জায়গা পায়? সেখানে দলের কিছু শীর্ষ নেতাদের সাপোর্ট না থাকলে কি করে হয়? এইসব ব্যাপারে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ইতিপূর্বে যারা দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তারা যদি বিজয়ী কিংবা পরাজিত হয়ে থাকেন। তাদেরকে আমরা মনোনয়ন দিব না। এই বিদ্রোহের পিছনে যেসব নেতাদের বা জনপ্রতিনিধিদের মদদ বা উস্কানি আছে তাদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যেন অপকর্ম না করতে পারেন সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিএম তালেবের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) ফারুক খান এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজম এমপি, এবিএম রিয়াজুল কবির কাউছার। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মো. আলীর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, জহিরুল হক ভূঞা মোহন, নজরুল ইসলাম হিরু, নরসিংদী পৌর মেয়র মো. কামরুজ্জামান কামরুলসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।



এই বিভাগের আরও