বেলাবতে মাদক ব্যবসায়ী আটককে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ

২৯ ডিসেম্বর ২০২০, ০৬:৫৬ পিএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০০ পিএম


বেলাবতে মাদক ব্যবসায়ী আটককে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ

বেলাব প্রতিনিধি:
নরসিংদীর বেলাবতে পুলিশ কর্তৃক খলিল মিয়া নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে উভয় পক্ষের ১০ জন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের ঢাকা সহ কুলিয়ারচর ও বেলাব উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।


সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলাব থানার চর কাশিমনগর গ্রাম ও পাশের কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর থানার লক্ষ্মীপুর নামাহাটি গ্রামের শতাধিক লোকের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।


এ ঘটনার জেরে ফের সংঘর্ষের আশংকায় ঘটনাস্থলে বেলাব ও কুলিয়ারচর থানার পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কোন মামলা দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে বেলাব উপজেলার চরকাশিম নগর গ্রামের খলিল মিয়ার সাথে ইয়াবা থাকার অপরাধে লক্ষ্মিপুর নামাহাটি গ্রামের লোকদের সহযোগিতায় আটক করেন কুলিয়ারচর থানার এস আই আব্দুল গাফফার। এসময় আটককৃত খলিল মিয়া চিৎকার শুরু করলে চরকাশিম নগর গ্রামের খলিলের স্বজনসহ এলাকার কিছু লোক জোরপূর্বক পুলিশের কাছ থেকে আসামী খলিলকে ছাড়িয়ে নেয়। এসময় লক্ষ্মীপুর নামাহাটির লোকদের সাথে চরকাশিম নগর গ্রামের লোকদের কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। পরদিন শনিবার চর কাশিমনগর গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক নূরচাঁন মিয়া ও আঃ রেজেক তাদের সবজির ক্ষেতে গেলে লক্ষ্মীপুর নামাহাটি গ্রামের কিছু লোক নুরচাঁন মিয়ার উপর হামলা করে তার হাত ভেঙ্গে দেয় এবং অপর কৃষক আঃ রেজেককে ধরে নিয়ে যায়। পরে বেলাব থানার পুলিশ ও উভয় ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আঃ রেজেককে লক্ষ্মীপুরের একটি বাড়ি হতে বন্দী অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ ঘটনার জের ধরে সোমবার দুই গ্রামের লোকজন আবারও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।


এতে চর কাশিনগর গ্রামের নূরচাঁন মিয়া (৬৫), জীবন মিয়া (৩০), ইকবাল (২৫), আক্কাস আলী (৩৫), জুয়েল (৩০), ফুল মিয়া (৫০) এবং লক্ষীপুর নামাহাটি গ্রামের আঃ বাতেন (৪৫), কাউছার (৩০), বাদশা (৪০), আঙ্গুল মিয়া (৫০) গুরুতর আহত হয়। আহতদের মধ্যে চরকাশিম নগর গ্রামের ইকবাল মিয়া ও জুয়েল মিয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও লক্ষ্মীপুর নামাহাটি গ্রামের আহত ৪ জনকে ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘটনাস্থল গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের এক পাঁড়ে চর কাশিমনগর গ্রামের প্রায় কয়েকশ মানুষ পূণরায় হামলা হতে পারে এমন আশংকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে আছেন। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের আরেক পাঁড়ে লক্ষ্মীপুর নামাহাটি গ্রামের কয়েকশ মানুষ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূণরায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এমন পরিস্থিতি এড়াতে ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়েই দুই থানার পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।


কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্বাস বলেন, শুনেছি কুলিয়ারচর থানার পুলিশ কর্তৃক আসামী আটক ও চর কাশিমনগর গ্রামের একজন কৃষককে লক্ষ্মীপুর নামাহাটির গ্রামের কিছু লোক ধরে আনার কারণে উভয় গ্রামের মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তবে আমরা উভয় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চেষ্টাা চালিয়ে যাচ্ছি।

বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম মোস্তুফা গোলাপ বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত একটা কাজে ব্যস্ত থাকায় ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি।

ঘটনাস্থলে থাকা কুলিয়ারচর থানার এস আই মোঃ আকবর বলেন, যাতে পুণরায় সংঘর্ষ না হতে পারে সেজন্য আমরা লক্ষ্মীপুর নামাহাটি গ্রামে অবস্থান করছি। বর্তমানে পরিবেশ অনেকটাই শান্ত রয়েছে। আশা করছি আর কোন সমস্যা হবে না।


বেলাব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শাফায়েত হোসেন পলাশ বলেন, পুণরায় যাতে সংঘর্ষ না হয় সেজন্য আমরা চর কাশিমনগর গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করছি। পূর্বের তুলনায় এখন পরিবেশ অনেকটা শান্ত।



এই বিভাগের আরও