অপরাধী যে দলেরই হোক, তাদের অপরাধী হিসেবেই দেখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

২৬ নভেম্বর ২০২০, ০৭:২২ পিএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৯ পিএম


অপরাধী যে দলেরই হোক, তাদের অপরাধী হিসেবেই দেখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধী যে দলেরই হোক, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। কারো মুখের দিকে চেয়ে নয় বরং মাদক, জঙ্গি, নারী নির্যাতন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারদের ১১৬, ১১৭, ১১৮ তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী ও সনদ প্রদান অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে তিনি বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে যুক্ত হন। ১১৬ জন প্রশিক্ষণার্থী এই প্রশিক্ষণে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কতগুলো সমস্যা দেখা দেয় যেমন হঠাৎ এই যে ধর্ষণ, তারপর নারী নির্যাতন, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হলো। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেখানে কারও মুখ চেয়ে না…যারাই অপরাধী, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখবেন, এটাই আমার কথা। সে যে দলের হোক, যে কেউ হোক, অপরাধী অপরাধীই। কাজেই অপরাধী হিসেবে দেখে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সমাজটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে এবং সেটাই আপনারা করবেন।

সরকারি কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশটাকে উন্নত করতে হলে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মতো উপযুক্ত কর্মচারী আমরা গড়ে তুলতে চাই, যেন মানুষ তার সেবাটা পায়। সেটাই আপনারা দেবেন। এটাই আপনাদের কাজ।

১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতার দেওয়া ভাষণের একটি অংশ উদ্ধৃত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন আপনার মাইনে দেয় গরীব কৃষক, আপনার মাইনে দেয় ওই গরীব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ওই টাকায়, আমি গাড়ি চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন। ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক’। অর্থাৎ কোন মানুষকে অবহেলার চোখে দেখবেন না বা তাদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না। মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে হবে।

নিজের শৈশবের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে এটা শিখেছি। আমাদের বাড়ির ড্রাইভারকেও ড্রাইভার সাহেব বলতে হত, আপনি বলতে হত। আমাদের বাড়ির কাজের লোক কখনও চাকর-বাকর বলে বা হুকুম দিতে পারতাম না। এটা নিষিদ্ধ ছিল। আমার বাবা-মা আমাদেরকে দিতে দেননি, আমরা দেইনি। আমরা তাদেরকে বলতে গেলে.. কিছু চাইলে বলতে হবে এটা কি একটু দিতে পারবে? এখনও তাই করি। সেটাই আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে, আমরা সেটাই করি।

সবাই যেন ন্যায়বিচার পায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার পাশপাশি জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দিয়ে তাদের জীবনমান উন্নত করতে কাজ করারও নির্দেশ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের এটাই থাকবে আপনাদের কাছে আকাঙ্ক্ষা, আপনাদের যে মেধা, আপনাদের জ্ঞান, আপনাদের বুদ্ধি, মনন সেগুলো আপনারা কাজে লাগাবেন দেশ ও জাতির সেবায়। এদেশের মানুষ যেন নিরাপদ থাকতে পারে, উন্নত জীবন পেতে পারে আর বিশ্ব দরবারে আমরা যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারি সম্মানের সাথে।

জাতির পিতার জীবন সম্পর্কে কর্মকর্তাদের জানতে পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কারণ এই দেশটাকে জানতে হলে আর দেশের উন্নয়নটা করতে হলে তার চিন্তা ভাবনাটাও জানা একান্তভাবে প্রয়োজন। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি। মহামারীতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়ার পাশপাশি দেশবাসীকে সতর্ক থাকতেও নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন কেনার জন্য ইতিমধ্যে আমরা বুক করে ফেলেছি। ইনশাল্লাহ যখনই শুরু হবে আমরা তখনই বাংলাদেশ আনতে পারবে। তার প্রস্তুতিও আমাদের নিতে হবে। ইতিমধ্যে সেই বিষয়ে আমি নির্দেশনা দিয়েছি যে ভ্যাকসিনটা সংগ্রহ করা, রাখা এবং প্রয়োগ করা। প্রয়োগ করার পর কি কি করনীয় এই বিষয়ে সমস্ত দিকনির্দেশনা আমার দেওয়া আছে। সেটা মেনেই আমাদেরকে এই অবস্থার থেকে উত্তরন ঘটাতে হবে।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমি প্রান্তে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর বদরুন নেছাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন স্বাগত বক্তব্য দেন এবং বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর বদরুন নেছা এই কোর্সগুলোর ওপর প্রতিবেদন উত্থাপন করেন।

৭০ পুরুষ এবং ৪৬ নারী, মোট ১১৬ জন ক্যাডার ৩-৫ মাসব্যাপী ট্রেনিং কোর্সে অংশ নেন। করোনা মহামারির কারণে অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে কোর্স সম্পন্ন হয় এবং অংশগ্রহণ করা সবাই এতে উত্তীর্ণ হন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ফরহাদ হোসেন ১১৬ তম, ১১৭ তম ও ১১৮ তম প্রশিক্ষণ কোর্সের যথাক্রমে জিসান বিন মাজেদ, হাফিজুল হক ও তরিকুল ইসলামকে সেরা পারফরম্যান্সের জন্য রেক্টর ‍পুরস্কার হস্তান্তর করেন।

তিন প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে বক্তব্য দেন তিন নতুন কর্মকর্তা- জিসান বিন মাজেদ, হাফিজুল হক এবং নুসরাত জাহান (১১৬তম কোর্স)।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও