করোনাভাইরাস: কুপোকাত আমেরিকা, আগামী দিনের বিশ্বমোড়ল চীন!

০৭ এপ্রিল ২০২০, ১১:৫৪ পিএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৬ পিএম


করোনাভাইরাস: কুপোকাত আমেরিকা, আগামী দিনের বিশ্বমোড়ল চীন!
ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

নোভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) কি সত্যিই প্রকৃতি থেকে সৃষ্টি, না-কি এটাকে চীনের ল্যাবে তৈরি করা হয়েছে? এমন বিতর্ক বিশ্বজুড়ে তুলে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিজ্ঞানীদের দাবি 'করোনা' কোন ভাইরাস নয়, এটা চীনের উহানের ল্যাবে তৈরি মারাত্মক জৈব রাসায়নিক বোমা। আমেরিকাকে হটিয়ে বিশ্বের নেতৃত্ব নিতে চায় চীন, আর এ কারণেই মারণ এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলিতে করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করায় এই তত্ত্ব কিছুটা হলেও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে অনেকের কাছে। তবে চীন জোর গলায় তাদের এই দাবিকে 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' আখ্যা দিয়ে এটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বেইজিং বলেছে আমেরিকার ভূমিকা নেওয়ার কোন ইচ্ছা চীনের নেই।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মহামারিটির ভয়াবহ বিস্তারে চীনও হতাশ হয়েছে দাবি করে বেইজিং বলেছে, চীন নিজেও কোভিড-১৯ এর সাথে লড়াই করছে এবং অন্য দেশগুলিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন অভিযোগের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে অপমান করা হচ্ছে।

করোনার উৎপত্তি চীনে হলেও সেখানে নাটকীয়ভাবে এটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। বর্তমানে ভাইরাসটির এপিসেন্টার হয়ে উঠেছে আমেরিকা ও তার মিত্র ইউরোপীয় দেশগুলি। এমন পরিস্থিতিতে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের এমন অভিযোগ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গ্লোবাল আধিপত্যে ওয়াশিংটনকে পিছনে ফেলতে চীন এই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে বিশ্বাস করেন পশ্চিমা গবেষকরা। স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্ব নেতৃত্ব সৃষ্টিতে করোনা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে চলেছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

গত কয়েক দিন ধরে কিছু পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ এবং মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য সংকট চীনকে আন্তর্জাতিক শক্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ও প্রদর্শনের শতাব্দীর সেরা সুযোগ এনে দিয়েছে করোনাভাইরাস। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব গ্রহণে তৎপর হয়েছে চীন।

এমনকি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সাবেক সহকারী এবং মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট অফ হেনরি কিসিঞ্জার শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে 'করোনাভাইরাস মহামারিটি বিশ্ব ব্যবস্থাকে চিরতরে বদলে দেবে' শীর্ষক একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, তিনি কমবেশি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আমেরিকার উচিত তার বিশ্ব নেতৃত্বকে রুপোর থালায় চীন যাতে হাতে দিতে না পারে সে বিষয়ে এখুনি সতর্ক হওয়া।

ব্রাজিলের শিক্ষামন্ত্রী আব্রাহাম ওয়েইনট্রাব এই টুইট বার্তায় সরাসরি বলেছেন, মহামারিটি চীনকে বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করতে সহায়তা করবে। যা পরে তিনি রবিবার মুছে ফেলেছেন। ব্রাজিলের চীনা দূতাবাস ওয়েইনট্রাবের এই দাবিটিকে 'অযৌক্তিক' বলে অভিহিত করেছে।

ওয়াশিংটনের দখল থেকে বিশ্বনেতৃত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছুদিন ধরেই স্বীকার করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার মিত্রদের আস্থা ও প্রত্যাশা বেশ কিছু বছর ধরে হ্রাস পাচ্ছিল। করোনা সংকট সেই পরিস্থিতিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে বলে জোর গলায় দাবি করেছেন বিশ্লেষকরা। করোনা সংকটে নিজেই সবচেয়ে বেশি বিপদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির প্রতি তার সহযোগীদের প্রত্যাশা একেবারেই তলানিতে। মহামারিটি বিশ্ব নেতৃত্ব বদলে চীনের সামনে শতাব্দির সেরা সুযোগ এনে দিয়েছে। করোনা পরবর্তী বিশ্বে নেতৃত্ব যে চীনই দেবে সেটা এখনই অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এর আগে করোনাকে জৈব অস্ত্র দাবি করে বক্তব্য রেখেছিলেন ইসরায়েলি ও মার্কিন বিজ্ঞানীরা। 'জেনেটিক্যালি মডিফায়েড' এই করোনাভাইরাসের জন্মদাতা চীনের উহানের বায়োসেফটি ল্যাবোরেটরি লেভেল ফোর বলে দাবি করেছিলেন মার্কিন আইনজীবী ও রাসায়নিক মারণাস্ত্র বিরোধী সংগঠনের অন্যতম সদস্য ড. ফ্রান্সিস বয়েল। বলেছিলেন শক্তিশালী রাসায়নিক মারণাস্ত্র করোনাভাইরাস, ছড়িয়েছে উহানের ল্যাব থেকেই।

ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েস কলেজের আইনের অধ্যাপক ড. ফ্রান্সিস বয়েল। রাসায়নিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ সংগঠনেরও অন্যতম মাথা তিনি। তাঁর উদ্যোগেই ১৯৮৯ সালে 'বায়োলজিক্যাল ওয়েপনস অ্যান্টি-টেররিজম অ্যাক্ট' বিল পাশ হয়। নোভেল করোনাভাইরাস যে নিছকই কোনও ভাইরাসের সংক্রমণ নয়, সে বিষয়ে আগেও মুখ খুলেছিলেন ড. ফ্রান্সিস।

ইজরায়েলি গোয়েন্দা ও মাইক্রোবায়োলজিস্টদের দাবির সমর্থন জানিয়েই ড. ফ্রান্সিস বয়েল বলেন, উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বায়োসেফটি লেভেল ফোর ল্যাবোরেটরিতে অতি গোপনে রাসায়নিক মারণাস্ত্র বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। সেখান থেকেই ছড়িয়েছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। সি-ফুড মার্কেটের ব্যাপারটা নেহাতই চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা। আর এই কথা বিলক্ষণ জানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সব জেনেও গোটা বিষয়টাকে ধামাচাপা দেওয়ার কৌশলী চেষ্টা চলছে।

ড. ফ্রান্সিস বয়েল আরও বলেছিলেন, উহানের এই বায়োসেফটি লেভেল ফোর ল্যাবোরেটরিকে সুপার ল্যাবোরেটরির তকমা দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বলা হয়েছিল, এই ল্যাবে ভাইরাস নিয়ে কাজ হলেও তা অনেক বেশি সুরক্ষিত ও নিরাপদ। ল্যাবোরেটরির জন্যই রয়েছে আলাদা উইং যার বাইরের পরিবেশের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই।

ড. ফ্রান্সিস বলেন, সার্স ও ইবোলা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার পরে অভিযোগের আঙুল ওঠে এই গবেষণাগারের দিকেই। রোগ প্রতিরোধ নয়, বরং প্রাণঘাতী জৈব অস্ত্র বানাতেই মত্ত গবেষকরা। যারই পরিণতি হাজার হাজার মৃত্যু। নোভেল করোনাভাইরাসের জিনগত বদল ঘটানো হয়েছে এবং উহানের এই ল্যাবোরেটরি থেকেই যে ভাইরাস ছড়িয়েছে সেটাও জানেন ডব্লিউএইচও'র অনেক গবেষকই।

নোভেল করোনাভাইরাসকে রাসায়নিক মারণাস্ত্র দাবি করেছিলেন মার্কিন সিনেটর টম কটনও। তাঁর দাবি, চীন জীবাণুযুদ্ধের জন্য বানাচ্ছিল ওই ভাইরাস। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কথাটা লুকোতে চাইছেন কারণ আন্তর্জাতিক আইনে জীবাণুযুদ্ধ নিষিদ্ধ। তাঁরা ওই নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছিলেন জানাজানি হলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। (সূত্র- গ্লোবাল টাইমস)


বিভাগ : বিশ্ব


এই বিভাগের আরও