ট্রি কোয়ারেন্টিনে ভারতের ৭ যুবক!

২৮ মার্চ ২০২০, ০৬:৫৯ পিএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৫ পিএম


ট্রি কোয়ারেন্টিনে ভারতের ৭ যুবক!
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

প্রাণঘাতী মহামারি করোনার (কোভিড-১৯) প্রকোপে লকডাউন হয়ে গেছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও অঞ্চল। গৃহবন্দি হয়েপড়েছে ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষ। অনেকেই আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনে আছেন। যারা বাইরে থেকে আসছেন তাদের জন্য ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক। তবে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ তাদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকার মতো বাড়তি ঘর কোথায়? বাধ্য হয়ে গাছের মাচায় কোয়ারেন্টিনে থাকছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার ৭ যুবক!

পেটের টানে ভিনরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন ওই ৭ যুবক। করোনার দাপট বাড়তেই বাড়িতে ফিরতে বাধ্য হন তারা। কিন্তু এলাকার মাটির বাড়িতে অতিরিক্ত ঘর তো নেই। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকবেন কোথায়? ওই যে কথায় আছে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। তাই ৭ জনের বাড়ির কাছে গাছের ডালে মাচা খাটিয়ে কোয়ারেন্টিন সেন্টার বানানো হয়েছে। অর্থাৎ হোম কোয়ারেন্টিনের বদলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে 'ট্রি কোয়ারেন্টিন' রয়েছেন তারা।

অযোধ্যা পাহাড় সংলগ্ন জঙ্গলমহলের ৭ যুবকের নজিরবিহীন এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তাদের কথায়, যখন মানুষ নিয়ম মানতে চাইছেন না, কোয়ারেন্টিনে থাকার ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন তখন এ এক অনন্য নজির। তবে দ্রুত তাদের সরকারি কোয়ারেন্টিনে থাকার সুব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

জানা গেছে, কর্মসূত্রে কয়েক মাস আগে চেন্নাই গিয়েছিলেন বলরামপুর ব্লকের গেঁড়ুযা অঞ্চলের ভাঙিডি গ্রামের ওই ৭ যুবক। সংক্রমণ ছড়াতে থাকায় তারা কাজ ছেড়ে ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরে আসেন। রবিবার জনতা কারফিউয়ের দিন খড়গপুর স্টেশনে নেমে গাড়ি করে রাতে গ্রামে ফেরেন তারা। তার আগে অবশ্য স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়েছিলেন। তবে কোনও সমস্যা ধরা পড়েনি। তারপরেও সচেতনতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ওই ৭ যুবক কোয়ারেন্টিনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

এদিকে তাদের বাড়িতে অতিরিক্ত কোনও ঘর নেই। তাই ওই ৭ যুবকের জন্য এমন অভিনব ব্যবস্থা করেন গ্রামের বাসিন্দারা। একটি বড় গাছের বিভিন্ন ডালে খাটিয়া চাপিয়ে মাচা বানিয়ে দেন। মশারি খাটিয়ে ওখানেই সারাদিন থাকছেন ওই যুবকেরা। দিনের বেলা গাছ থেকে নেমে নিচে রান্না করে খেয়ে আবার গাছে উঠে যাচ্ছেন। ওদের বাড়ির লোকজন চাল-ডাল গাছের তলায় রেখে দিয়ে আসছেন।

গ্রামে ফেরা বিজয় সিং লায়া, বিমল সিং সরদার, দীনবন্ধু সিং সরদাররা জানান, বাড়িতে ঘর কম। তাই একটি গাছের বিভিন্ন ডালে মাচা বেঁধে খাটিয়া চাপিয়ে ৭ জনের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করে নিয়েছি। নলকূপ থেকে পানি নিয়ে গ্রাম থেকে দূরে গোসল, শৌচকর্ম সারছি।

কিন্তু এমন ভাবনা এলো কীভাবে? ওই গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আমাদের এলাকায় হাতি মাঝেমধ্যেই হামলা চালায়। তারা যাতে ফসলের খেতে ঢুকে ক্ষতি করতে না পারে তার জন্য এমন করে গাছে মাচা করে রাতভর শুয়ে নজর রাখি আমরা। সেখান থেকেই এই ভাবনা।

জানা গেছে, গাছের উপর মাচা করে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রয়েছেন ওই যুবকরা। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কানে এই খবর পৌঁছে গেছে। জেলা প্রশাসক রাহুল মজুমদার জানান, ওই সাত যুবককে গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। সেখানে এখনও বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এদিকে চরম সংকটকালীন পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার ৭ যুবকের এই কীর্তিকে কুর্নিস জানাচ্ছেন অনেকেই। এই ঘটনা কোয়ারেন্টিন থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়ানো শহরবাসীকে লজ্জায় ফেলে দিল বলেই মনে করছেন অনেকেই।


বিভাগ : বিশ্ব


এই বিভাগের আরও