একজন সৎ ভূমি কর্মকর্তার বিদায়

০১ জুলাই ২০২১, ০২:০৩ পিএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৪ পিএম


একজন সৎ ভূমি কর্মকর্তার বিদায়

 

                                          {শামীমা সুলতানা}

বদলীজনিত কারণে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বিদায় নিলেন বরিশাল বিভাগের উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার (ডিএলআরসি) তরফদার মোঃ আক্তার জামীল। ৩0 জুন ২০২১ বুধবার বরিশাল বিভাগীয় উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে বিদায় জানান। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল বরিশাল বিভাগের  উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। উল্লেখ্য, আট বিভাগে আটজন কর্মকর্তা উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার (ডিএলআরসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তারা সাধারণতঃ বিভাগের সকল জেলার প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিদর্শন করেন এবং বিদ্যমান সমস্যা তুলে ধরে সমাধানের সুপারিশ করে থাকেন।

যোগদানের পর হতেই ডিএলআরসি জামীল এই অপরিচিত পদটিকে নিজ মুন্সিয়ানায় বিভাগব্যাপী পরিচিত করাতে সক্ষম হন। ডিএলআরসি হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তিনি সরকার ঘোষিত শতভাগ ই-নামজারি বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৪২টি উপজেলা ভূমি অফিস এবং ২৫৪ টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্বুদ্ধ করেন এবং তাদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করেন।  অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ ও আদায় এর নিমিত্ত বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে চলমান এলডি ট্যাক্স সফটওয়ারে ডাটা এন্ট্রির কাজটিও তিনি এতদিন নিবিড়ভাবে মনিটরিং করছিলেন। নদীভাঙন কবলিত বরিশাল বিভাগে সিকস্তি ও পয়স্তি জমির এডি লাইন টানা, চান্দিনা ভিটি লীজ নবায়ন মেলা প্রভৃতি ভিন্নধর্মী কাজগুলো তার উৎসাহে এ বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় বাস্তবায়িত হয়। এছাড়া, প্রতিনিয়ত ভূমি অফিসগুলো ভিজিট করে তিনি স্বচ্ছতা ও সততার সাথে ভূমি সেবা প্রদানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসাহ প্রদান করেন। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা, ভূমি অফিসগুলোতে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালনসহ করোনাকালে বিভাগীয় পর্যায়ে ডিএলআরসিদের মধ্যে তাকে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা ও বিস্তার রোধকল্পে গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং তদারকির দায়িত্ব প্রদান করা হলে তিনি নিবিড়ভাবে তদারকির কাজটি সম্পন্ন করেন।

বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার একাধিক ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপে জানা যায়, ডিএলআরসি জামীলের কারণে বরিশাল বিভাগের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করতে তাদের অনেকটা সহজ হয়েছে। ভূমিকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে সরকার যে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সেগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে তিনি সহায়তা করেছেন। পদ নয়, বরং ব্যক্তিই যে গুরুত্বপূর্ণ তিনি সেটি প্রমাণ করেছেন। পুরো বিভাগের প্রতিটি উপজেলায় ছিলো তার পদচারণা। প্রতিটি উপজেলা এবং বেশীরভাগ ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিদর্শন করে সেখানকার সমস্যাগুলো তিনি সামনে আনতেন এবং কিভাবে সমাধান করা যায় তাও সংশ্লিষ্টদের বলে দিতেন। তিনি সত্যিকার অর্থেই পুরো বিভাগের এসিল্যান্ডদের অভিভাবক হিসেবে কাজ করেছেন। তার সাথে নির্দ্বিধায় তারাতাদের সমস্যাগুলো শেয়ার করতে পারতেন।  ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা জানান, তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই একজন ভালো মানুষ। তার মতো সৎ কর্মকর্তা বিরল। পরিদর্শনকালে তার জন্য প্রটোকল বা বাড়তি কোনো কিছু তাদের কখনোই করতে হয়নি।  এছাড়া ট্রেনিং সেশনে তার ক্লাসগুলি ছিলো উপভোগ্য। ক্লাসে প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থীকে না শিখিয়ে তিনি ক্লাস হতে বের হতেন না। উল্লেখ্য, বরিশাল বিভাগের দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে আট মাস খুলনা বিভাগের এবং দুই মাস ঢাকা বিভাগেরও  অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এখন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব হিসেবে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিবেন।

লেখক পরিচিতি: কবি ও সম্পাদক, পুষ্পকলি কথা।


বিভাগ : মতামত


এই বিভাগের আরও