নরসিংদীতে স্বামী হত্যার দায়ে স্ত্রীর যাবজ্জীবন

০৬ জুন ২০২৩, ০৫:২১ পিএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম


নরসিংদীতে স্বামী হত্যার দায়ে স্ত্রীর যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীর শিবপুরে পারিবারিক কলহের জেরে শাবল দিয়ে আঘাত করে স্বামীকে হত্যার পর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করা ঝুনু বেগম (৩৩) নামের এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়াও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আ ন ম ইলিয়াস এই রায় ঘোষণা করেন।


যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত ঝুনু বেগম (৩৩) শিবপুরের মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে। তার নিহত স্বামী মোফাজ্জল প্রধান (৩৮) একই এলাকার মৃত ওয়াজউদ্দিন প্রধানের ছেলে। মোফাজ্জল রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন, অন্যদিকে ঝুনু বেগম স্থানীয় একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন।

মামলার বাদী-বিবাদী পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোফাজ্জল ও ঝুনু প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ২১ বছর আগে বিয়ে করেন। এর আগে ঝুনু বেগমকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর মা–বাবা। কিন্তু বিয়ের দুই দিনের মাথায় ওই স্বামীকে ছেড়ে প্রেমিক মোফাজ্জলের কাছে চলে আসেন তিনি। এই দম্পতির ১৮ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে।


আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে পারিবারিক কলহের জেরে শাবল দিয়ে মাথায় পরপর তিনটি আঘাত করে মোফাজ্জলকে হত্যা করেন ঝুনু বেগম। সারা রাত লাশের পাশে বসে থেকে পরদিন সকাল ১০টার দিকে ঘর তালাবদ্ধ রেখে শিবপুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন ঝুনু। পরে ওই বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্বামীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের বড়ভাই আলী হোসেন বাদী হয়ে ঝুনু বেগমকে একমাত্র আসামী করে মামলা করেন। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকায় করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন ঝুনু বেগম।

আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দীতে ঝুনু বেগমের ভাষ্য, হত্যাকাণ্ডের রাতে জুয়া খেলার জন্য ঘরের আলমারিতে জমানো কিছু টাকা তার কাছে চেয়েছিলেন মোফাজ্জল। তিনি ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে ঘরে থাকা একটি শাবল নিয়ে আসেন মোফাজ্জল। ওই শাবল দিয়ে আলমারি ভাঙতে গেলে মোফাজ্জলকে বাধা দেন ঝুনু। পরে ওই শাবল নিয়ে স্ত্রী ঝুনু বেগমের ওপর আক্রমণ করতে আসেন তিনি। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তাঁর হাত থেকে শাবলটি ছিনিয়ে নেন ঝুনু। উত্তেজিত অবস্থায় ওই শাবল দিয়ে স্বামীর মাথায় পরপর তিনটি আঘাত করে বসেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মোফাজ্জলের।

বাদীপক্ষের আইনজীবি খন্দকার হালিম জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ১০ মাস ১৪ দিনের মাথায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত ছিল। ১৫ কার্যদিবসে ঝুনু বেগমের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামীর উপস্থিতিতে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন বিচারক। এ ছাড়াও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। এই রায়ে মামলার বাদী খুশি, আমরা আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞ।

অন্যদিকে আসামীপক্ষের আইনজীবি আরিফুল ইসলাম জানান, এই মামলায় আমরা সুবিচার পাইনি। আমরা উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।



এই বিভাগের আরও