বেলাবতে বিদ্যালয় ফান্ডে ১০ লাখ টাকার ভুয়া রশিদ জমার অভিযোগ

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:৩১ পিএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩১ এএম


বেলাবতে বিদ্যালয় ফান্ডে ১০ লাখ টাকার ভুয়া রশিদ জমার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীর বেলাবতে বিদ্যালয় ফান্ডে কোন প্রকার টাকা জমা না করেই ১০ লাখ টাকার ভুয়া রশিদ জমা দেয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে। এই ঘটনা ঘটেছে বেলাব উপজেলার ভাবলা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই ঘটনায় বিদ্যালয়ের সাবেক অফিস সহকারী নুরুল আলম আফ্রাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ দুদক চেয়ারম্যানের নিকট পৃথক লিখিত অভিযোগ করেছেন।

স্বাক্ষর জাল করে এই ভুয়া রশিদ জমা দেয়া অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের সাবেক পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহবুবুর হাসান আফ্রাদের বিরুদ্ধে। তিনি দুদকের একজন কর্মচারী ও ভাবলা গ্রামের মৃত বশির উদ্দিন আফ্রাদের ছেলে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়ের আজীবন দাতা সদস্য হওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও দুদকের কর্মচারী মাহবুবুল হাসান আফ্রাদ টাকা না দিয়েই বিদ্যালয়ের সাবেক অফিস সহকারী নুরুল আলম আফ্রাদের স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন সময়ে টাকা জমার রশিদ জমা করেন শিক্ষা বোর্ডে।


ভাবলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বেতন আদায়ের রশিদে ২০০৬ সালের ২৪ নভেম্বর দেড় লাখ টাকা, একই বছরের ৫ ডিসেম্বর ৮০ হাজার টাকা এবং ১৫ তারিখে ৭০ হাজার টাকা, ২০০৭ সালের ১০ অক্টোবর দুই লক্ষ ১০ হাজার টাকা, ২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ৫ লাখ টাকা ৫ টি রশিদের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে জমা দিয়েছেন বলে শিক্ষা বোর্ডে ভুয়া রশিদ জমা দেন মাহবুবুল হাসান আফ্রাদ। ৫টি আদায় রশিদে আদায়কারী হিসাবে স্বাক্ষর দেয়া হয় বিদ্যালয়ের সাবেক অফিস সহকারী নুরুল আলম আফ্রাদের। কিন্তু নুরুল আলম আফ্রাদ এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।


গত বছরের ১১ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা হতে বিদ্যালয়ের নামে বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন এস,আর,ও নং-৯৯ আইন/২০০৯ এর প্রবিধান ৭ এবং ৮ মোতাবেক গঠিত কমিটি প্রদান সংক্রান্ত একটি চিঠি আসে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত চিঠির মাধ্যমে জানতে পারেন মাহবুবুল হাসান আফ্রাদ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে বিদ্যালয়ের ফান্ডে ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা করেছেন।


এতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে যাবতীয় খাতাপত্র ও বিল ভাউচার যাচাই করেন। এসময় উল্লেখিত অর্থ প্রদানের কোন লিখিত প্রমাণ না পাওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে জানতে পারেন মাহবুবুল হাসান আফ্রাদ অনেক আগেই বিদ্যালয়ে উল্লেখিত অর্থ জমা দিয়েছেন। এমন ৫ টি ভুয়া রশিদ শিক্ষা বোর্ডে জমা দেয়া আছে। পরে উল্লেখিত রশিদে আদায়কারীর স্বাক্ষর দেখে বিদ্যালয়ের সাবেক অফিস সহকারী নুরুল আলম আফ্রাদকে জিজ্ঞেস করা হলে জানা যায় রশিদে আদায়কারীর স্বাক্ষর সম্পূর্ণ ভুয়া।


শুধু বিদ্যালয়ে ভুয়া রশিদে টাকা জমা দেয়ার অভিযোগ নয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক হিসাবে পরিচয় দেয়া এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে এলাকায় রয়েছে নানা অভিযোগ।


সরেজমিনে ভাবলা গ্রামের শিক্ষক, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকাবাসী মাহবুবুল হাসান আফ্রাদকে চেনেন ‘রুশন আলী’ নামে। এলাকায় দুদকের সহকারী পরিচালক হিসাবে পরিচয় দিলেও তার অফিসিয়াল পদবী অফিস সহকারী। তিনি ভাবলা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক তিন বারের সভাপতি ও দুদকের কর্মচারী।


বর্তমানে তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক কর্মচারী ও এলাকাবাসী জানান, এর আগেও দুদকের কর্মকর্তা পরিচয়ে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, বিদ্যালয়ের ছোটখাট অনুদানের টাকা আত্মাসাৎ, একই পদে একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম করেছেন। সবশেষ জালিয়াতি করেন বিদ্যালয়ের সাবেক অফিস সহকারী নুরুল আলম আফ্রাদের স্বাক্ষর জাল করে ১০ লাখ ১০ হাজার টাকার ভুয়া রশিদ তৈরির মাধ্যমে।
এই জালিয়াতির প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী নুুরুল আলম আফ্রাদ ২৮ আগস্ট দুদক চেয়ারম্যানের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ করার এক মাসেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় গত রোববার বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন।


অভিযোগকারী মো. নূরুল আলম আফ্রাদ বলেন, রশিদে স্বাক্ষর দেওয়া তো দূরের কথা, আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না। আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। আমি এই অপকর্মের প্রতিকার চেয়ে দুদক চেয়ারম্যান ও ইউএনও বরাবর আবেদন করেছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাপ আফ্রাদ জানান, শিক্ষা বোর্ডে টাকা জমা দেয়ার রশিদ সম্পূর্ণ ভূয়া। রশিদে আদায়কারীর স্বাক্ষরও জাল। রশিদে উল্লেখিত ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা বিদ্যালয় ফান্ডে নাই।


বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি ও অভিযুক্ত মাহবুবুল হাসানের বড় ভাই বাদল আফ্রাদ সব বলেন, এটা সম্পূর্ণ ভুয়া অভিযোগ। এ বিদ্যালয়টি আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের পরিবারের শক্ত একটা প্রতিপক্ষ আছে। তারা চাচ্ছেন বিদ্যালয়টি যাতে ধ্বংস হয়ে যায়। অভিযোগকারী নুরুল আলম কোনদিন এই বিদ্যালয়ে অফিস সহকারীর চাকরি করেনি। বোর্ডে ভুয়া রশিদ জমা দেয়া হয়ে থাকলে তদন্তে বের হবে।


ফোনে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত দুদক কর্মচারী ও ভাবলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল হাসান আফ্রাদ তার বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা ও ভুয়া বলে জানান। এসময় তাকে রশিদে স্বাক্ষর জালের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি, তার অফিসের কাজে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন।


বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আক্তার হোসেন শাহিন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।


মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মতিউর রহমানকে অফিসে না পেয়ে মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন করার পরও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।



এই বিভাগের আরও