নরসিংদী-৫ (রায়পুরা): ধানের শীষের প্রচারে বাধার অভিযোগ

২০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৪৩ এএম | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:৩১ এএম


নরসিংদী-৫ (রায়পুরা):  ধানের শীষের প্রচারে বাধার অভিযোগ
রায়পুরা_বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে বিএনপির প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন বকুল তার ধানের শীষ প্রতিকের পক্ষে প্রচারনা চালাতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর সমর্থক নেতাকর্মীদের দ্বারা তিনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান তিনি। তার অভিযোগ, পুলিশের উপস্থিতিতে ধানের শীষের প্রচারে বাধার পাশাপাশি হামলা, ভাঙচুর চালাচ্ছে ক্ষমতাসীনেরা।
 
দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১১ ডিসেম্বর থেকে প্রচার প্রচারণা শুরু করা হয়। এরপর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা ও হামলা চলছে। ১১ তারিখের পর থেকে পুলিশের করা ৩টি মামলায় আসামী করা হয়েছে ১২৯ জন নেতা-কর্মীকে। অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে অসংখ্য। গণসংযোগ চলাকালে মিঠু নামের এক ছাত্রদল নেতাকে তুলে নিয়ে হাতে ককটেল ধরিয়ে দিয়ে মামলা দিয়েছে পুলিশ।
 
এছাড়াও ধানের শীষের সক্রিয় কর্মী চান্দেরকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম, অলিপুরা ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রচার সম্পাদক বুলবুল আহমেদ খান, মহেশপুর ইউনিয়নের যুবদল সদস্য আমির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিদিনই বাঁধা দেওয়া হচ্ছে প্রচারনা ও গণসংযোগে। সাটানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, কেড়ে নেওয়া হচ্ছে লিফলেট। কোনভাবে প্রচার প্রচারণা চালানো যাচ্ছে না। নির্বাচনের মাত্র কয়েকটা দিন বাকী থাকলেও মাঠেই নামা যাচ্ছে না বলে জানান বিএনপি নেতাকর্মীরা ।
 
বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রায়পুরা উপজেলার চর মরজাল গ্রামে বিএনপি প্রার্থী আশরাফ উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী তার বাড়ির উঠোনে পাতানো চেয়ারে বসে আছেন। তারা রায়পুরার নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে পরষ্পর কথা বলছেন। তারা এই প্রতিবেদককে বলেন, কোথায় এখন সবাই মিলে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করব তা না, অলস বসে আছি প্রার্থীর বাড়িতে! এভাবে কি নির্বাচন হয়?
 
বিএনপি প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন বকুল বলেন, পুলিশ ও ছাত্রলীগের হুমকি পেয়ে আজ আমি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করতে যাইনি। তারা হুমকি দিয়ে বলেছে, যদি গণসংযোগে বের হই তবে হামলা ও ভাংচুর করা হবে। সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা হামলা শিকার হবে তাই আজ ঘরে বসে আছি।
 
আজ চরসুবুদ্ধি, ডৌকারচর, হাইরমারা, মির্জানগর ও আদিয়াবাদ ইউনিয়নে গণসংযোগ করতে যাওয়ার কথা ছিল অাামার। কর্মী-সমর্থকরা গণসংযোগের উদ্দেশ্যে আসলেও তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি। আমার নিজের এলাকা বাদে বাকী সব জায়গার পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়েছে। লিফলেট বিতরণ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
 
গণসংযোগ করতে গেলে উৎ পেতে থাকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। পুলিশ শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। এমন পরিস্থিতিতে খুবই অসহায় লাগছে। প্রায়ই পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকছে, বাঁধা দিচ্ছে বলেন বকুল।
তিনি আরও বলেন, এরপরও আমরা মাটি কামড়ে নির্বাচনের মাঠে থাকব। মামলা, হামলা করে আমাদের ঠেকানো যাবে না।
 
জেলা বিএনপির ৩ জন নেতার সাথে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তারা জানান, তফসিল ঘোষণার পরপরই বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পরে নির্বাচনী ক্যাম্প, প্রচারের মাইক, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। ভোটারদেরও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
 
এসব বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে রায়পুরায় বিএনপি প্রার্থী আশরাফ উদ্দিনের গ্রহণযোগ্যতা ভালো। কিন্তু নির্বাচনী মাঠে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে এই প্রার্থীকে। 
 
রায়পুরার মরজাল গ্রামের আমির হোসেন নামের একজন ভোটার বলেন, মাঠে শুধু আওয়ামী লীগই আছে। বিএনপির কোন প্রচার প্রচারণা সেভাবে চোখে পড়ছে না। নির্বাচনকে ঘিরে একটা আতঙ্কজনক অবস্থা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে কেউ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে!
 
রায়পুরার হাসনাবাদ, হাইরমারা, হাঁটুভাঙ্গাসহ আরও কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নৌকার প্রতীকের পোস্টারে ছেয়ে গেছে সে সব এলাকা। অল্প কিছু পোস্টার দেখা গেছে ধানের শীষের। আবার রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেছে ধানের শীষের পোস্টার। 
 
হাসনাবাদ বাজারের এক চায়ের দোকানদার বলেন, আগের দিন ধানের শীষের পোস্টার লাগানো হলে রাত পোহালেই সেগুলো আর  থাকে না।


এই বিভাগের আরও