রায়পুরার কালিকাপুর লঞ্চঘাটে পন্টুন না থাকায় দুর্ভোগে যাত্রীরা

১৮ আগস্ট ২০২৩, ০৬:২৬ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৪, ১১:৪৭ পিএম


রায়পুরার কালিকাপুর লঞ্চঘাটে পন্টুন না থাকায় দুর্ভোগে যাত্রীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদী রায়পুরা উপজেলার কালিকাপুরে বিআইডব্লিউটিএ এর লঞ্চঘাটে পন্টুন না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্য দিয়ে লঞ্চে উঠানামা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। লঞ্চগুলো ঘাটে ভিড়তে না পারায় যাত্রীদের আলাদা নৌকা করে লঞ্চে উঠতে হচ্ছে। এতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। একইসঙ্গে ঘাট থেকে নৌকায় উঠে আবার নৌকা থেকে লঞ্চে উঠতে ভোগান্তিতে পড়ছে  শিশু, নারী, শিক্ষার্থী ও বয়স্ক যাত্রীরা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চরাঞ্চলের চাঁনপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর, বগডহরিয়া কান্দি, আলীপুরসহ ওই এলাকার হাজারো মানুষের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। সরাসরি সড়কপথের যোগাযোগ না থাকায় বাধ্য হয়ে প্রতিদিন নৌপথে যাতায়াত করতে হয় এলাকাবাসীর। লঞ্চঘাটগুলোতে পন্টুন না থাকায় চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। প্রতিনিয়ত প্রখর রোদে ও ঝড়বৃষ্টিতে পাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে উঠতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্ষাকালে ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েকগুন। 

লঞ্চঘাটের যাত্রীরা জানান, ১০-১২ বছর আগে পন্টুন ছিল, তখন লঞ্চে ওঠানামা করতে দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পন্টুন না থাকায় দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা বেড়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক, নারী ও শিশুদের ভোগান্তির শেষ নেই। স্থানীয় মালেক মিয়া নামে এক মাঝি যাত্রীপ্রতি ৫ টাকা ভাড়া  নিয়ে তাঁর নৌকা দিয়ে লঞ্চে উঠিয়ে দেয়।  আবার যাত্রীরা ফেরার সময় একইভাবে ৫ টাকা ভাড়া নিয়ে নামিয়ে দেয়। এতে করে প্রতি যাত্রীর বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে ১০ টাকা।

স্থানীয় শিক্ষার্থীরা জানায়, এলাকার উচ্চ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী উপজেলা নবীনগর, আশুগঞ্জ, ভৈরব এলাকায়  যাওয়া-আসা করে পড়াশোনা করে। নৌপথ ছাড়া বিকল্প যাতায়াতের কোন পথ নেই। পন্টুন না থাকায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।  লঞ্চগুলো আসার পর ঘাটে ভীড়তে পারে না। ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে উঠতে হয়, লঞ্চের জানালা, পেছনের দরজা দিয়ে ওঠা এবং নামার সময়ে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় পড়তে হয়।  

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক কামাল হোসেন বলেন, পল্টুন না থাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন এলাকার রোগী, রোগীর স্বজন ও বয়স্ক যাত্রীরা। রোগীদের লঞ্চে ওঠাতে হিমশিম খেতে হয় স্বজনদের। পন্টুন থাকলে  এমন ভোগান্তি হতো না।

চাঁনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোমেন সরকার জানান,  ১০-১২ বছর আগে এই ঘাটে পন্টুন আনা হয়েছিল। মানুষ ঠিকঠাক ভাড়া পরিশোধ না করায় এবং তখন যাত্রীও কম থাকায় ইজারাদারের পোষাতো না। পরবর্তীতে ইজারাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে পল্টুন উঠিয়ে নেয়। এখন যাত্রী বেড়েছে এবং এলাকাবাসীর দাবি পল্টুন দেয়ার।

তিনি বলেন, পল্টুন না থাকায় গ্রীষ্মকালে ঘাটে লঞ্চ ভিড়তে গিয়ে নদীর পাড় ভাঙছে, বর্ষা এলে ভিড়তেই পারছে না।  ঘাটে  যাত্রী ভিড় বাড়ছে, কিন্তু এই নৌপথে যাত্রী সেবার মান বাড়েনি। এই এলাকার  সংকট, ভোগান্তি দূর করতে দ্রুত ঘাটে পন্টুন স্থাপন জরুরি।

যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু জানান,  লঞ্চঘাটে পন্টুন এর চাহিদার বিষয়টি আমাকে কেউ অবহিত করেননি। আমার নির্বাচনী এলাকায়  জনগণের এমন দুর্ভোগ, ভোগান্তি হলে আমি অবশ্যই বিষয়টি দেখবো।  

 কিশোরগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ এর ভৈরব-আশুগঞ্জ নদীবন্দর এর উপ- পরিচালক  রেজাউল করিম বলেন, "ওই ঘাটে আমাদের কোন ইজারাদার নেই। একটি ঘাট পরিচালনায় বিনিয়োগ খরচ আছে। ওই ঘাট কেউ দেয়ার উপযোগী কী না পরিদর্শন করে দেখা হবে।  স্থানীয়দের আবেদন এবং ওই এলাকার স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।