নরসিংদীর মাধবদীতে ৭ তলা ভবনে জঙ্গি আস্তানার অভিযান সমাপ্ত, দুই নারী জঙ্গির আত্মসমর্পণ

১৭ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৪১ পিএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০১ পিএম


নরসিংদীর মাধবদীতে ৭ তলা ভবনে জঙ্গি আস্তানার অভিযান সমাপ্ত, দুই নারী জঙ্গির আত্মসমর্পণ
আশিকুর রহমান পিয়াল নরসিংদীর মাধবদীতে ৭ তলা ভবনে ঘিরে রাখা জঙ্গি আস্তানা নিলুফার ভিলা থেকে দুই নারী জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে। ৪২ ঘণ্টার চেষ্টায় আজ দুপুর আড়াইটায় বাড়িটি থেকে একে একে দুই নারীকে বের করে আনা হয়। পরে তাদের বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী জানায়, আত্মসমর্পণ করা মৌসুমী আক্তার মৌ (২৪) এবং খাদিজা আক্তার মেঘলা (২৫) মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০১৬ সালে তারা একবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। বুধবার (১৭ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে তারা আত্মসমর্পণ করে বলে সাংবাদিকদের জানান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। এর আগে রাত থেকে ওই আস্তানায় অবস্থানরত জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করার আহবান জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার সকাল থেকে এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। আত্ম সমর্পণ করার পর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দুই নারীকে দমকল বাহিনীর একটি এম্বুলেন্সে করে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। আত্মসমর্পণকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে মঙ্গলবার অপারেশন গর্ডিয়ান নট-এ নিহত দুই নর-নারীর নাম আব্দুল্লাহ আল বাঙ্গালি ও আকলিমা আক্তার মনি এবং তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী বলে জানা গেছে। বাঙ্গালি নব্য জেএমবির মিডিয়া শাখার প্রধান। এরপর অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম। এসময় মনিরুল বলেন, মাধবদীর এ আস্তানা থেকে দুইজনকে আত্মসমর্পন করানো হয়েছে। যেহেতু তারা নারী সেহেতু তাদের আত্মসমর্পণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত তারা আত্মসমর্পণ করেছে। যদিও তারা আজকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করে এবং ১টি বিস্ফোরণ করেছেও। তবে এতে কেউ আহত হয়নি। আগেও গোয়েন্দা তথ্য ছিল এ আস্তানায় নারী জঙ্গি থাকতে পারে। সে তথ্যই সঠিক হয়েছে। আত্মসমর্পণ করা দুই নারী জঙ্গি আগে থেকেই জঙ্গিবাদে জড়িত। এ অভিযোগে ২০১৬ সালে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৭/৮ মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আবারও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। জেল থেকে বের হওয়ার পর তারা কেউ নিজেদের বাসায় ফিরে যায়নি। জঙ্গি কাজে জড়িয়ে পড়ে তারা নতুন ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছিল। আজকে যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের একজনের স্বামী নব্য জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা বলে আমরা জানতে পেরেছি। এদের মধ্যে খাদিজার স্বামী নব্য জেএমবির শীর্ষ স্থানীয় নেতা এবং প্রস্তুতি চলছিল সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে মৌয়ের বিয়ের। দুটো আস্তানার ৩ নারী মানারাত ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের একজন পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায় বলে জানান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, নরসিংদীর এ দুটি বাড়ি কেন জঙ্গিরা ভাড়া নিয়েছিল তার কারণ এখনও পুলিশ জানতে পারেনি। তবে মাধবদীর এই বাড়িতে আরও অনেকের যাতায়াত ছিল। দুটি বাসাই খুব কাছাকাছি সময়ে এই মাসের তিন তারিখে এবং পাঁচ তারিখে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। এ দুটি বাড়ি জঙ্গিরা কেন ঠিক করেছিল, তাদের লক্ষ্য কি ছিল, উদ্দেশ্য কি ছিল সে বিষয়ে এখনো সুর্নিদিষ্ট তথ্য পাইনি। জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা বের করার চেষ্টা করব। তবে আমরা এতটুকু বুঝতে পারছি পূজার সাথে এর কোনো সম্পর্ক ছিল না। ফলে এলাকাবাসীকে বলতে চাই আমরা তাদের নিস্ক্রিয় করতে পেরেছি সে কারণে আতঙ্কের কোনো কারণ নাই।” জঙ্গিরা যে ভবনে অবস্থান করছিল সেটার কাঠামো দুর্বল থাকায় সেখানে অভিযান চালানো বিপজ্জনক ছিল। সে কারণে তাদের আত্মসমর্পণে রাজি করানোর চেষ্টা ছিল বলে জানান মনিরুল ইসলাম। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা দায়ের করা হবে। মাধবদী পৌর এলাকার ছোট গদাইরচর (গাংপার) মহল্লার হাজী আফজাল হোসেনের মালিকানাধীন সাততলা বাড়িটি সোমবার (১৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টা থেকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


এই বিভাগের আরও