নরসিংদীতে গুলিতে দুই ছাত্রদল নেতা নিহতের ঘটনায় হয়নি মামলা

২৬ মে ২০২৩, ০৬:৪৪ পিএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪১ পিএম


নরসিংদীতে গুলিতে দুই ছাত্রদল নেতা নিহতের ঘটনায় হয়নি মামলা
নিহত সাদেকুর ও আশরাফুল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীতে গুলিতে দুই ছাত্রদল নেতা  নিহত হওয়ার ঘটনায় শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকনের নির্দেশে ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদের নেতৃত্বে ছাত্রদলের সাদেকুর ও আশরাফুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে আসছে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। এদিকে নিজেরাই এসব ঘটনা ঘটিয়ে অন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে বলে দাবী করছেন জেলা বিএনপির আবায়ক খায়রুল কবির খোকন।

নিহতদের স্বজন ও পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জানান, শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেলে ময়না তদন্ত শেষে দুপুরে সাদেকুরের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বিকেলে হাজীপুর ইউনিয়নের বাদুয়ারচর দারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় লোকজন অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে মৃত্যুর পর ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লাশ শহরের সাটিরপাড়ার বাসায় নিয়ে আসা হয় আশরাফুল ইসলাম (২৩) এর লাশ। আশরাফুল অরবিট ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্র ও সাটিরপাড়া সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজমুল ইসলামের ছেলে।

রাত ৯টায় সাটিরপাড়া সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় মাঠে তার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সংঘর্ষের পরপর সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেলে ছাত্রদল নেতা সাদেকুর রহমানের (৩২) মৃত্যু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকালে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ দুই ছাত্রদল নেতার মৃত্যুতে শোকার্ত পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী। তবে এই ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি। জড়িতদের আটক করা গেছে কী না সে বিষয়েও পুলিশের পক্ষ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে সাদেকুরের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন থেকে বের হয়ে বৌয়াকুড় মোড়ে এসে শেষ হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই জেলা বিএনপির সদস্য ও হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়ার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।

সদ্য বহিস্কার হওয়া ছাত্রদল নেতা মাইন উদ্দিন ভূইয়া অভিযোগ করে বলেন, খায়রুল কবির খোকন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সুপারিশ করে নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে চিহ্নিত অস্ত্র ব্যবসায়ী, ইভটিজার ও ছিনতাই মামলার আসামীদের দিয়ে কমিটি গঠন করে জেলা ছাত্রদলকে কলংকিত করেছেন। যা তৃণমূলের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ করে খায়রুল কবির খোকনকে নরসিংদীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। সেই ক্ষোভ থেকে খায়রুল কবির খোকনের নির্দেশে ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদের নেতৃত্বে ছাত্রদলের তৃণমূলের প্রাণ সাদেক ও আশরাফুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ টায় সে তাঁর ফেসবুকে দুটি ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেয়। সেখানে লেখা, ‘২৭ তারিখে বিএনপির সমাবেশ সফল করার জন্য ঢাকা নয়া পল্টনে মহানগর বিএনপির অফিসে নরসিংদী জেলা বিএনপির যৌথ সভা। পল্টনে সভা চলাকালীন সময়ে জানতে পারলাম পূর্বের ন্যায় সরকারের এজেন্টরা ২৭ তারিখের সমাবেশ পন্ড করার জন্য চিনিশপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে গন্ডগোল করেছে। যে কোন মূল্যে কাউরিয়াপাড়া পৌর ঈদগাহ মাঠে সমাবেশ সফল করতে হবে।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে পুলিশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা আমাদের ওপর ও জেলা বিএনপির কার্যালয়ে একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। এখন তারা নিজেরা নিজেরাই এসব ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে।’

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেম ভূইয়ার সরকারি নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে থানার ডিউটি অফিসারের নম্বরে যোগাযোগ করা হলে উপপরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, এখনো পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন মামলা দায়ের হয়নি। এই ঘটনায় গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিনিয়র স্যারেরা বলতে পারবেন।

 

উল্লেখ্য, গত ২৬ জানুয়ারি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদকে সভাপতি, মাইনুদ্দিন ভুইয়াকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের (আংশিক) জেলা কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন পদ না পাওয়া সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এর জেরে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা আহ্বায়ক খায়রুল কবীর খোকনের চিনিশপুরের বাসভবনে একাধিকবার হামলার ঘটনাও ঘটে।

 

 

 

 



এই বিভাগের আরও