মনোহরদীতে কমিটি গঠন নিয়ে মাদ্রাসা সুপারকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ

১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১১ পিএম | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১১ এএম


মনোহরদীতে কমিটি গঠন নিয়ে মাদ্রাসা সুপারকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার পঞ্চাশকুড় দাখিল মাদ্রাসার এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসার সুপারকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকালে মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নীচে এ ঘটনা ঘটে। 
 
এঘটনায় উক্ত মাদ্রাসার সুপার হাদিউল ইসলাম মনোহরদী থানায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
 
অভিযুক্তরা হলেন- মনোহরদী সরদার আছমত আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন মুরাদ, মনোহরদী সরকারি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক খলিলুর রহমান এবং মনোহরদী সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের শিক্ষক লুৎফুর রহমান। 
 
মাদ্রাসা সুপার অভিযোগে উল্লেখ করেন, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার সম্প্রতি সকল মাদ্রাসার এডহক কমিটি বাতিল ঘোষনা করায় নতুন করে এডহক কমিটি গঠন করার জন্য তিনি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করেন। এর মাঝে মনোহরদী সরদার আছমত আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন মুরাদ সরকারি বিধি বিধান তোয়াক্কা না করে পেশিশক্তির বলে মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি হওয়ার পায়তারা করে আসছিলেন। 
 
গত ১০ এপ্রিল মাদ্রাসার এডহক কমিটি গঠনের জন্য মাদ্রাসায় সভা আহবান করা হয়। সভায় অভিযুক্তদের কেউ উপস্থিত হননি। ০১ নং অভিযুক্ত সরদার আছমত আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন মুরাদকে মাদ্রাসার সভাপতি না করা হলে মাদ্রাসা সুপার কিভাবে মাদ্রাসা পরিচালনা করেন তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়া হয়। পরে মাদ্রাসার দাপ্তরিক কাজের জন্য গত রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকাল তিনটার দিকে মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান মাদ্রাসা সুপার হাদিউল ইসলাম। 
দাপ্তরিক কাজ শেষ করে আনুমানিক ৪টার দিকে বাড়িতে যাওয়ার সময় অভিযুক্তরাসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সুপার হাদিউল ইসলামকে  নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নীচে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এসময় মনোহরদী সরদার আছমত আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন মুরাদ তাকে মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি করতে হবে বলে দাবি করেন।
 
মাদ্রাসা সুপার নিয়মতান্ত্রিকভাবে মাদ্রাসার সভাপতি নির্বাচন করা হবে বলে জানালে ফরহাদ হোসেন মুরাদ উত্তেজিত হয়ে সুপারকে কিলঘুষি মেরে আহত করেন। এক পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী এবং আশেপাশের লোকজন এসে মাদ্রাসা সুপার হাদিউলকে তাদের কবল হতে রক্ষা করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে নিয়ে যায়। এসময় অভিযুক্তরা মুরাদকে যেকোন মূল্যে কমিটির সভাপতি না করলে সুপার হাদিউলকে প্রকাশ্য মারধরের হুমকি দেয়।
 
অধ্যক্ষ ফরহাদ হেসেন মুরাদসহ অভিযুক্তরা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ও নরসিংদী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের অনুসারী বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। 
 
অভিযুক্ত মনোহরদী আসমত আলী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন মুরাদ বলেন, "লিখিত অভিযোগের বিষয়ে অবগত আছি, তবে অভিযোগগুলো মিথ্যা। মাদ্রাসার সুপার হাদিউল ইসলাম আওয়ামী ফ্যাসিস্ট মাসুদুর রহমানকে এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করতে চায়, সে বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি, আমি তাকে মারধর করিনি।"
 
তিনি আরও বলেন, "আমি সাবেক সংসদ সদস্য ও নরসিংদী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে উনার সাথে ভালো সম্পর্ক আছে কিন্তু সরাসরি কোনো রাজনীতি করি না।"
 
 
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, "লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। "
 
মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাইমিন আল জিহান বলেন, "উভয়পক্ষ থেকে কমিটির বিষয়ে চিঠি পেয়েছি কিন্তু চিঠিতে কি লিখা হয়েছে, তা জানতে পারিনি। আজকে পহেলা বৈশাখ হওয়ায় ব্যস্ত আগামীকাল অফিসে গিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব। তাদের মধ্যে কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে কী না তাও জানি না এবং মারধর করার বিষয়ে আমি অবগত নই। আগামীকাল কার্যালয়ে এসে চিঠি দেখে কমিটি গঠনের বিষয়ে সভা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


এই বিভাগের আরও