ডিম ও ব্রয়লার মুরগীর দাম বাড়লেও স্বস্তিতে নেই নরসিংদীর খামারীরা

২০ আগস্ট ২০২২, ১২:০০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪০ পিএম


ডিম ও ব্রয়লার মুরগীর দাম বাড়লেও স্বস্তিতে নেই নরসিংদীর খামারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ডিম ও ব্রয়লার মুরগীর দাম বাড়লেও স্বস্তিতে নেই নরসিংদী জেলার খামারীরা। দফায় দফায় দাম বাড়ার পর আবার জ্বালানী তেলের দামের প্রভাবে মুরগী পালনে প্রয়োজনীয় উপকরণসহ খাবার ও ঔষধের দাম বাড়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন খামারীরা। লাভের আশায় পূঁজি বিনিয়োগ করেও স্থায়ীভাবে লাভের মুখ দেখতে না পারায় অনেকে খামার ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন। অনেকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে কোনরকমে ব্যবসা টিকিয়ে রাখলেও অব্যাহত লোকসানের কারণে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগী পালন বন্ধ করে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন।  

সরেজমিন জেলার সদর ও বেলাব উপজেলার খামারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অন্যতম পোল্ট্রি জোন হিসেবে পরিচিত জেলার এসব ব্রয়লার ও লেয়ার পোল্ট্রি খামারকে ঘিরে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে অনেক বেকার যুবকের। এখানকার খামারে উৎপাদিত মুরগী ও ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দখল করেছে রাজধানী ঢাকার বাজারের একটি বড় অংশ। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে অব্যাহতভাবে মুরগীর খাবার, ঔষধ ও একদিনের বাচ্চার দাম বাড়ার কারণে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক খামার। এছাড়া বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানীগুলো কর্তৃক মুরগী পালন ও বিক্রির সময় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। খামারীরা পুঁজি বিনিয়োগ এবং শ্রম দিয়ে বছরের পর বছর লোকসান গুনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। নতুন করে যোগ হয়েছে জ্বালানী তেলের দামের প্রভাব। মুরগী ও ডিমের উৎপাদন খরচ বাড়লেও আশাব্যঞ্জক লাভ না পাওয়ায় হতাশ খামারীরা।

নরসিংদী সদর উপজেলার শীলমান্দি এলাকার কাজী পোল্ট্রি ফার্মের মালিক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগী পালনের জন্য ঔষধ ও খাবারসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। সর্বশেষ জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার প্রভাবেও বেড়েছে। এতে খামারে প্রতি পিছ ডিমের উৎপাদন খরচ হয় ৯ টাকার ওপরে, গরমে মুরগীর ঔষধ খরচ বেশি হওয়ায় ডিম উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার প্রতি পিছ ডিমের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৯টাকা ৩৫ পয়সা।  

তিনি আরও বলেন, খামার থেকে গত ১৫ আগস্ট প্রতি পিছ ডিম বিক্রি করতে পেরেছেন ১১ টাকা ৬০ পয়সায়, ১৬ আগস্ট ১০ টাকা ৮০ পয়সা, ১৭ আগস্ট ৯ টাকা ৬০ পয়সা ও সর্বশেষ ১৮ আগস্ট প্রতি পিছ ডিম বিক্রি হয়েছে ৮ টাকা ৬০ পয়সায়। বৃহস্পতিবার প্রতি পিছ ডিমে ৭৫ পয়সা লোকসান হয়েছে। 

বেলাব উপজেলার হোসেন নগর গ্রামের নাদিম পোল্ট্রি ফার্মের মালিক মোঃ বাচ্চু মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে খামারে ১০০ ডিম বিক্রি করেছি ৯২০ টাকা দরে। ডিম উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা। খাবারের দাম ও ঔষুধের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হচ্ছে।

বেলাব উপজেলার বারৈচা বাজারের পোল্ট্রি ডিলার শফিকুল ইসলাম বলেন, কোম্পানীকে অগ্রিম টাকা দিয়ে বাচ্চা, ফিড ও ঔষধ আনার পর খামারীদের বাকিতে দিতে হয়। অব্যাহতভাবে খাবার ও ঔষধের দাম বাড়ার কারণে খামারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগীর উৎপাদন খরচ পড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। বিক্রি করতে হয় উৎপাদন খরচের চেয়েও কম মূল্যে। এছাড়া নানা রোগে মুরগীর মরক লাগে। সম্প্রতি মুরগীর দাম বাড়লেও সেটাও স্থায়ী হয়নি। বৃহস্পতিবার খামার থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে মুরগী বিক্রি হয়েছে। মুরগীর দাম বাড়ার সাথে সাথে কোম্পানীগুলো বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিতে দেরি করে না।     

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: হাবিবুর রহমান খান বলেন, নরসিংদী জেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের নিবন্ধিত ব্রয়লার মুরগীর খামারের সংখ্যা ৩ হাজার ৪০০ ও লেয়ার খামারের সংখ্যা ১ হাজার ৫০০। এর বাইরেও অনেক খামারী রয়েছেন। খামারীরা মূলত দফায় দফায় খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে সংকটের মধ্য দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সাশ্রয়ী মূল্যে মুরগীর বাচ্চা ও খাবার পেলে খামারীদের লোকসানে পড়তে হতো না।   



এই বিভাগের আরও