পলাশে ঋণের চাপে অস্তিত্ব সংকটে তাঁতশিল্প

২৭ এপ্রিল ২০২০, ০৬:৩২ পিএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫৮ এএম


পলাশে ঋণের চাপে অস্তিত্ব সংকটে তাঁতশিল্প

আল-আমিন মিয়া:
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে ধ্বংসের দাঁরপ্রান্তে হাজারও তাঁতশিল্প। অর্থনৈতিক সংকট, কাঁচামালের অভাব ও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিলুপ্তির পথে চলে এসেছে এ অঞ্চলের তাঁতশিল্প। এছাড়া সুতার দাম বৃদ্ধি ও কারিগরের অভাবে তাঁতশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে এখানকার তাঁতিদের মাঝে।
একদিকে উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজার মূল্য কম হওয়ায় কাপড় তৈরি করে পুষিয়ে উঠতে পারছেন না অধিকাংশ তাঁতিরা। অন্যদিকে মহাজনদের চড়া সুদের টাকা পরিশোধের তাগাদায় মরার ওপর পুড়ার ঘাঁ হয়ে দাড়িয়েছে এখানকার তাঁতিদের মাঝে। তার মধ্যেই দেশে করোনা সংকট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাপড় তৈরির কাজ বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে এখানকার তাঁতিরা।
সরকারি কোনো ঋণ না পেয়ে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেক তাঁতী। কেউ বা আবার বাঁচার তাগিদে বাপদাদার এই পেশাকে জড়িয়ে ধরে কষ্টে দিন-যাপন করে যাচ্ছেন।

উপজেলার ডাঙ্গার ইউনিয়নের কেন্দুয়াব, তালতলা, জয়নগর, হাসানাটাসহ কয়েক গ্রাম জুড়ে রয়েছে হাজারও তাঁত পল্লী। রাত-দিন মেশিনের খটখট শব্দে মুখরিত হয়ে থাকা পুরো গ্রাম চুপচাপ নিঃশব্দে রূপ নিয়েছে। যেখানে প্রায় ২৪ ঘন্টাই ব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করতো এখানকার তাঁতিরা। কথা বলার কোনো ফুরসতও যেনো ছিল না তাদের। সেখানে করোনা সংকটে পড়ে কাজ-কর্ম বন্ধ হয়ে থাকায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। এরমধ্যে আবার দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণের টাকা পরিশোধ করার চাপ ও হুমকির মধ্যেই সময় কাটছে প্রতিনিয়ত। যেনো এসব বিষয়ে দেখার কেউ নেই।


সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে তাঁত পল্লী গুলো ঘুরে দেখা যায়, রাত-দিন মেশিনের খটখট শব্দে মুখরিত হয়ে থাকা পুরো গ্রাম এখন চুপচাপ নিঃশব্দে রূপ নিয়েছে। অথচ ঈদকে সামনে রেখে এখানকার হাজারও তাঁতিরা প্রায় ২৪ ঘন্টাই ব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করতো। ঈদ উপলক্ষে কাপড় তৈরি করে যে আয় হতো, তা থেকেই বছর শেষে মহাজন (দাদন) ব্যবসায়ীদের চড়া সুদের টাকাসহ ঋণ পরিশোধ করা হতো।

এসময় কথা হয় রাজিব মিয়া নামে এক তাঁতির সাথে। তিনি জানান, দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কোনো রকমে টিকে রয়েছেন তাঁতশিল্পে। এক হাজার টাকায় প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে সুদ দিতে হচ্ছে মহাজনদের। সুতার দাম বৃদ্ধি, সব সময় চাদরের চাহিদা না থাকা ও অর্থাভাবে এ পেশা থেকে অনেকেই ছিটকে পড়েছেন। যে কয়জন এ পেশায় রয়েছে তা রেওয়াজ পড়ে কষ্টের মাঝে বাপ-দাদার পেশাকে আঁকড়ে বেঁচে আছে। তারমধ্যে দেশে আবার করোনা সংকট দেখা দেওয়ায় কাপড় তৈরির কাজ-কর্ম বন্ধ। এতে করে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন এখানকার তাঁতিরা।


তিনি আরও জানান, বছর শেষে ঈদকে উপলক্ষে করে তাঁত পল্লীর তাঁতিরা যে আয় করেন। তা থেকে চড়া সুদ সহ মহাজন (দাদন) ব্যবসায়ীদের ঋণের টাকা পরিশোধ করে দায় মুক্ত হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশে করোনা সংকট থাকায় দাদন ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যে কারণে এখানকার তাঁত শিল্প অনেকটা বিলুপ্তির পথে চলে গেছে। এ অবস্থায় সরকারী সহযোগীতা চান সংশ্লিষ্ট তাঁতিরা।


এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবের উল হাই জানান, ইতিমধ্যে তাঁত পল্লীর কর্মহীন ২০ জন তাঁতিদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি তাঁতির মাঝে এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে। আর কোনো দাদন ব্যবসায়ী যদি বর্তমান সংকট মুহুর্তে ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তাঁতিদেরকে চাপ দেয়। তবে অভিযোগ পেলে প্রশাসনকে সাথে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



এই বিভাগের আরও