নরসিংদীর দুই জুটমিলের ৫ সহস্রাধিক শ্রমিকের মানবেতর জীবনযাপন

১৫ মার্চ ২০২১, ০৫:২৪ পিএম | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৪ এএম


নরসিংদীর দুই জুটমিলের ৫ সহস্রাধিক শ্রমিকের মানবেতর জীবনযাপন

আল-আমিন মিয়া:
বকেয়া না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সরকার কর্তৃক বন্ধ ঘোষণা করা নরসিংদীর রাষ্ট্রায়ত্ব দুই জুটমিলের ৫ সহস্রাধিক অস্থায়ী শ্রমিক। নরসিংদীর ইউএমসি ও ঘোড়াশালস্থ বাংলাদেশ জুট মিলের এসব শ্রমিকের পাওনা ৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা মিল বন্ধের ৯ মাস পার হলেও পরিশোধ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা জানান, ২০২০ সালের ৩০ জুন রাতে বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রায়ত্ব দুই জুটমিলের উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মিল বন্ধ ঘোষণা করার সময় বলা হয় দুই মাসের মধ্যে চাকরি হারানো শ্রমিকদের সকল দেনা-পাওনা মজুরি কমিশন-২০১৫ অনুযায়ী ৫০ শতাংশ তাদের ব্যাংক হিসাবে এবং বাকী ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করা হবে। তাছাড়া অচিরেই মিল সংস্কার করে রাষ্ট্রায়ত্ব সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে চালু করা হবে। পরে মিল দুটির স্থায়ী শ্রমিকদের ৫০ শতাংশ টাকা তাদের নিজ নিজ ব্যাংক হিসেবে পরিশোধ করা হলেও বাকী ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র এখনো পরিশোধ করা হয়নি। এদিকে মিল বন্ধের ৯ মাস পার হলেও ৫ সহস্রাধিক অস্থায়ী শ্রমিককের পাওনা ৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন চাকুরি হারানো ৫ হাজারের বেশি শ্রমিক। বকেয়া পাওনাসহ ১০ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন নরসিংদীর ইউএমসি জুটমিলের শ্রমিকরা। সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মিলটির সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন হাজারো শ্রমিক। এর আগে গত ৮ মার্চ একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন ইউএমসি জুটমিলের শ্রমিকরা।

ঘোড়াশালস্থ বাংলাদেশ জুট মিলের শ্রমিক আবুল কালাম বলেন, মিল বন্ধের ৯ মাস চললেও এখনো পর্যন্ত আমরা কোনো টাকা পাইনি। কবে নাগাদ টাকা পাবো তাও অনিশ্চিত। পরিবার পরিজন নিয়ে কত কষ্টে আছি তা আল্লাহ জানেন। অনেক শ্রমিক ভ্যান-রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।

অপর অস্থায়ী শ্রমিক নিতাই বলেন, মিল বন্ধের সময় বলা হয়েছিল আগস্ট মাসের মধ্যে এককালীন সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত খবর নেই। পাওনার বিষয়ে জানতে মিলের কোনো কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায় না। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। কোনো কাজ না পেয়ে এখন একটি সেলুনে কাজ করে অতি কষ্টে জীবনযাপন করছি।

মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বলেন, স্থায়ী শ্রমিকরা পাওনা টাকার ৫০ শতাংশ পেলেও বাকী ৫০ শতাংশ টাকা কবে পাবে তা অনিশ্চিত। এছাড়া অস্থায়ী শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে না।

বাংলাদেশ জুট মিলের প্রকল্প প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মতিউর রহমান মন্ডল জানান, অস্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা টাকার হিসাব বিজেএমসিতে পাঠিয়েছি। সরকার মিলে টাকা পাঠালেই আমরা শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করে দিবো। কবে নাগাদ টাকা পরিশোধ করা হবে এ ব্যাপারে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।