চীন-বাংলাদেশ বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে কৌশল খুঁজছে সরকার

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:০৩ পিএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০০ পিএম


চীন-বাংলাদেশ বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে কৌশল খুঁজছে সরকার
ফাইল ছবি

অর্থনীতি ডেস্ক:

চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সারা বিশ্বে। দেশটির ভেতরে এ সংক্রমণের প্রভাব এত তীব্র যে চীনের অধিকাংশ অফিস ও ব্যাংক নববর্ষের ছুটির পর এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশি আমদানিকারকরা চেষ্টা করেও সেখানে এলসি খুলতে পারছেন না। আবার নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য পাওয়া যাবে কিনা সে আশঙ্কায় দেশের ব্যাংকগুলোও এলসি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে। আর উদ্বেগে আছেন দেশের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। কচ্ছপ ও কুঁচিয়া রফতানিকারকরা আছেন মাসে দুশ’ কোটি টাকার বেশি লোকসানের আশঙ্কায়। এদিকে, চীন থেকে আনা দু’মাস আগের পণ্য কেনার ব্যাপারেও ক্রেতাদের আতঙ্কের কথা জেনে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে দেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যে সংকট তৈরির আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় কৌশল খুঁজছে সরকার।

তবে সরকার চায় যে কোনও উপায়ে চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য অব্যাহতভাবে ধরে রাখতে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয় চীন থেকে। এর বাইরেও কাপড়, আদা, রসুন, বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য সামগ্রী, বিভিন্ন প্রকার মেশিনারি, খুচরা যন্ত্রাংশ, খেলনা, মোবাইল, বৈদুতিক সামগ্রী মিলিয়ে শত শত আইটেমের পণ্য আমদানি করা হয় চীন থেকে। সব মিলিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে বড় বাণিজ্য হচ্ছে তৈরি পোশাক ও এর কাঁচামাল আমদানি। যা চীনের বাইরে প্রত্যাশা করাটাও হবে অন্যায়, এমনটাই মনে করেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। এ কারণেই বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) চলমান বাণিজ্য ধরে রাখতে বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, আমদানি, রফতানি নিয়ন্ত্রকের দফতর, টিসিবি, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর, এফবিসিসিআই, বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, বাংলাদেশ চায়না চেম্বার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক সমিতি, বাংলাদেশ ফুটওয়্যার প্রস্তুতকারক সমিতির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব সেক্টরের বাণিজ্য রয়েছে, সেসব সেক্টরের আমদানিকৃত বা রফতানিকৃত পণ্যের পরিমাণসহ বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে গত কয়েকবছর কী পরিমাণ পণ্যের বাণিজ্য চীনের সঙ্গে হয়েছে তারও তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টদের আগামী ৩ দিনের মধ্যে এসব তথ্য বাণিজ্যমন্ত্রী ও সচিবের কাছে পৌঁছানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, আদা বা রসুন হয়তো আমরা ভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে পারবো, কিন্তু তৈরি পোশাকের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে চীনের বিকল্প কিছুই ভাবছি না। তবে এ মুহূর্তেই কিছু বলা ঠিক হবে না কারণ, তথ্যের অনেক ঘাটতি রয়েছে। আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। কী করবো তা সময় বলে দেবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে এ মহুর্তে কোনও সমস্যা নেই। করোনা ভাইরাস সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে চিন্তা করতে হবে। চীনের সঙ্গে যেগুলো সেক্টরে বাণিজ্য রয়েছে বিশেষ করে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কাজ করছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে বোঝা যাবে। ব্যবসায়ীরাও বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন। যথা সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন জানিয়েছেন, চীন বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ের ওপর নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে এফবিসিসিআই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেবে। এ প্রতিবেদনের ওপর সরকার পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।


বিভাগ : অর্থনীতি


এই বিভাগের আরও