ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার, অস্ত্রসহ জালিয়াতির সরঞ্জামাদি উদ্ধার

৩০ জানুয়ারি ২০২০, ০৪:১৩ পিএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪০ এএম


ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার, অস্ত্রসহ জালিয়াতির সরঞ্জামাদি উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ১১। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে দাউদকান্দি থানাধীন গৌরিপুর বাজার এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো ১) মোঃ ইদ্রিস মিয়া (৪৪), পিতা-আব্দুস ছাত্তার, সাং-চরচারি পাড়া, থানা-দাউদকান্দি, জেলা-কুমিল্লা, ২) ইউপি সদস্য মোঃ মমিনুল ইসলাম (৪৬), পিতা-মৃত আব্দুল হামিদ, সাং-দারোরা, থানা-মুরাদনগর, জেলা-কুমিল্লা, ৩) আবু বক্কর সালাফী (৪৩), পিতা-কারী আবু মুসা, সাং-পালাসুতা, থানা-মুরাদনগর, জেলা-কুমিল্লা এবং ৪) রুবেল (২৪), পিতা-আব্দুল মতিন, সাং-দারোরা বাজার, থানা-মুরাদনগর, জেলা-কুমিল্লা।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের দখল হতে ম্যাগাজিনসহ ০১টি বিদেশী পিস্তল, ০৩ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ০১টি চাপাতি, ০১টি চাকু, ০৪ ধরণের প্রিন্টারের কালিসহ ০১টি রঙ্গিন প্রিন্টার, জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত ভূয়া সীল ২৪টি (যার মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের-০৭ টি, ডাচ বাংলা ব্যাংকের-০৪টি, সোনালী ব্যাংকের-০৩টি, পূবালী ব্যাংকের- ০২টি, ইসলামী ব্যাংকের-০২টি, ফাহিম এন্টারপ্রাইজ আঃ ছাত্তার স্যানেটারী এন্ড টাইলস্ হাইজ, মোঃ রফিকুল ইসলাম, আবু বক্কর সালাফী, Authorised এবং BDT-12657001 নামীয় সীল-০৬টি), ১৬টি সোনালী ব্যাংকের ভুয়া Transaction Voucher, ২৮টি বিভিন্ন ব্যাংকের ভুয়া Express Money Receipt ভাউচার, ০২ পাতা এনসিসি ব্যাংকের ভুয়া Payment Slip, ১১ জনের ভুয়া গলাকাটা এনআইডি এবং ভুয়া এনআইডি তৈরীর ছবি-১৬টি উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ব্যাংক জালিয়াতি চক্র। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ অভিনব কৌশলে ব্যাংকের ভাউচার জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা আত্নসাৎ করে আসছে। গ্রেফতারকৃত মোঃ ইদ্রিস এই জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা। সে ৩ বৎসর পূর্বে হোটেলে কাজ করার সময় এক ভারতীয় সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার পশু ভাই এর সাথে তার বন্ধুত্ব হয় এবং তার কাছ থেকে ব্যাংকের টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্নসাৎ করার বিভিন্ন অভিনব কৌশল শিখে। পশু ভাই দীর্ঘদিন ধরে এটিএম বুথ হ্যাক করে বুথ থেকে টাকা উত্তোলন ও রেমিটেন্স জালিয়াতির সাথে জড়িত ছিল। ইদ্রিস প্রথমে যে ব্যাংকের টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্নসাৎ করবে সেই ব্যাংক নির্বাচন করে। নির্বাচিত ব্যাংক এ প্রথমে বৈধভাবে তার পরিচিত লোক বিদেশ থেকে রেমিটেন্সের মাধ্যমে তার নামে অল্প পরিমাণ টাকা পাঠায়। সেই টাকা উত্তোলনের জন্য তাকে একটি গোপন পিন নম্বর দেয়া হয়।


উক্ত গোপন পিন নাম্বার নিয়ে ব্যাংকে গেলে ব্যাংক টাকা উত্তোলনের জন্য একটি ভাউচার তৈরি করে দেয়। অতঃপর উক্ত ভাউচার দিয়ে টাকা উঠানোর আগে ইদ্রিস তার মোবাইলে ভাউচারের একটি ছবি তুলে রাখে। মোবাইলে ভাউচারের ছবি দিয়ে তার প্রিন্টারে নতুন নতুন ভাউচার তৈরী করে তাতে নতুন রেমিটেন্স নাম্বার বসিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর এবং বিভিন্ন এনআইডি’র স্বাক্ষর নকল পূর্বক গলাকাটা এনআইডি (এনআইডি’র ছবি পরিবর্তন) ব্যাংক এ জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করে। সে এইভাবে অগ্রণী ব্যাংকের চাঁদপুরের সাচার শাখা ও সোনালী ব্যাংকের রহিমা নগর শাখা, অগ্রণী ব্যাংকের কুমিল্লার মুরাদনগর শাখা, বি-বাড়িয়ার মাধবপুর শাখাসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ভাউচার জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করে।


প্রতারক ইদ্রিস মিয়া ২০১৮ সালে ১১ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংকের বুড়িচং শাখায় বিদেশ থেকে পাঠানো গোপন নম্বরের টাকা জালিয়াতি করে তুলতে গিয়ে হাতে নাতে আটক হওয়ার পরে তাকে পুলিশের নিকট সোপর্দ করলে কিছু দিন কারাগারে থেকে জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজে সক্রিয় থাকে। গ্রেফতারকৃত মমিনুল ইসলাম একজন ইউপি সদস্য। সে এই জালিয়াতি চক্রের সাথে গত ১ বছর ধরে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছে। ৪ মাস আগে চাঁদপুর অগ্রণী ব্যাংকের বাবুর হাট শাখায় ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের সময় হাতে নাতে আটক হয়ে জেলে যায়। ১৭ দিন জেল খেটে জামিনে আসার পর পুনরায় জালিয়াতি চক্রের সাথে সক্রিয় হয়। আবু বক্কর সালাফী ও রুবেল এই চক্রের অন্যতম সহযোগী সদস্য। এই চক্রটি ব্যাংকের টাকা জালিয়াতির পাশাপাশি পেশাদার ছিনতাইকারী, ভাড়াটে ক্যাডার ও ডাকাতির সাথে জড়িত বলে প্রাথমিক জিঙ্গাসাবাদে তারা স্বীকার করে।
তাদের প্রতেকের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। এই ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের উপর দীর্ঘদিন যাবৎ র‌্যাব-১১ বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারী চালিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি দিবাগত রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে উক্ত ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের ০৪ জন’কে গ্রেফতার করে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও