রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনে চীন অনন্য ভূমিকা পালন করছে: চীন রাষ্ট্রদূত

২৪ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:৪৬ পিএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম


রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনে চীন অনন্য ভূমিকা পালন করছে: চীন রাষ্ট্রদূত

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত এইচ. ই. লি জিমিং বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর টেকসই সমাধানের জন্য চীন বাংলাদেশের বিস্বস্ত বন্ধ হিসেবে অনন্য ভূমিকা পালন করছে।

রোববার (নভেম্বর) ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবসনের উপায় সন্ধান’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ইংরেজি দৈনিক ‘বাংলাদেশ পোস্ট’ এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

সেমিনারে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেনরোহিঙ্গাদের বিষয়ে চীন একটি নিজস্ব রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করছে। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের বিস্বস্ত বন্ধু হিসেবে চীন এ ব্যাপারে অন্যন্য ভূমিকা পালন করছে। রোহিঙ্গাদেরকে কিভাবে মিয়ানমারে শান্তিপূর্ন প্রত্যাবর্তন করানো যায় এবং তা যেন টেকসই হয় সে ব্যাপারে চীন যথেষ্ট আন্তরিক।

গত জুলাই মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অসহায় রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেয়ার কারনে চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে প্রসংশা করেছেন। আমরা এ ব্যাপারে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনায় যেতে চাই। চায়না কোন দেশের সঙ্গে এক পেশে আচরণ করবে না। এমন একটি সমাধান চাই যাতে দুই পক্ষই লাভবান হবে,’-যোগ করেন তিনি

লি জিমিং বলেনবিগত দুই বছর ধরেই চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যু’র সমাধানের উপায় খুঁজতে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশমিয়ানমার ও চীনের মধ্যে তৃতীয় পক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিভিন্নভাবে চীন ভূমিকা রাখছে। নানা কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রর্ত্যাবসনে চীন আগ্রহ দেখিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে অনুষ্টিত তিন দেশের বৈঠকে দ্রæত রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশচীন ও মিয়ানমার।

সেমিনারে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআর’র স্থানীয় প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস বলেনআমি আমার দীর্ঘ কর্মজীবনে এমন অবর্ণনীয় শরণার্থী শিবির দেখিনিযেটি দেখেছি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে। বাধ্য হয়েই তারা সেখানে বসবাস করছে। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছিতাদের শতকরা ৯৭ জনই স্বদেশে ফিরে যেতে চান যদি তারা সেখানে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পান। আর তাদের এ নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন।

মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে রোহিঙ্গা আর বাংলাদেশে শরনার্থী হয়ে না আসে। এ ব্যাপারে যথাযথ নিশ্চয়তা দিতে হবে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন মোটেও অসম্ভব ব্যাপার নয়। এটা সম্ভব। এজন্য রোহিঙ্গা নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চাই। তারা নিজ দেশে নিজেদের যথাযথ মর্যাদা চাই। এটি নিশ্চিত করা গেলে রোহিঙ্গারা এখনও মিয়ানমারে ফিরে যাবে,’-বলেন তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি বলেনরোহিঙ্গাদের কারণে গত কয়েক দশক যাবৎ বাংলাদেশকে নানারকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ মানবিক আশ্রয় দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে।

আমরা চাই রোহিঙ্গারা সম্মানের সঙ্গে স্বদেশে ফিরে যাক। গত দুই বছর ধরে এ কথা বললেও দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো একজন রোহিঙ্গাও স্বদেশে ফিরে যেতে পারেননি।’

তিনি বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে বলেনজাতিসংঘের মহাসচিবের উচিত, দ্রুত মিয়ানামারে একটি অনুসন্ধানী দল পাঠানো। যারা সেখানকার রোহিঙ্গা নির্যাতনের সঠিক চিত্র তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে জাতিসংঘের তত্ত¡াবধানে মিয়ানমারে একটি নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলতে হবে। যেন রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন ও পরবর্তী সময়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

নিরাপপত্তা বিশ্লষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.) বলেনমানবিক অপরাধের কারণে সারাবিশ্ব মিয়ানমারের বিপক্ষে। মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য সামাজিকপরিবেশগত এবং রাজনৈতিক নানারকম ঝুঁকি তৈরি করছে।

তিনি বলেন ‘শান্তিপূর্ণ রোহিঙ্গা প্রর্ত্যাবসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করা উচিত। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমরা মনে করি আজ না হোক আগামীতে এটা অবশ্যই হবে। মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের নিজ দেশের নাগরিককে ফেরত নিতে হবে।’

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পোস্টের প্রধান সম্পাদক শরীফ শাহাব উদ্দিন বলেনবাংলাদেশ পোস্ট শুধু একটা পত্রিকা নয়। সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে আমরা জড়িত। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্সনে সকল আন্তর্জাতিক সহযোগিদেরকে সাথে নিয়ে টেকসই উপায় বের করতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা ইস্যু বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাই কমিশনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সাবিনা ইয়াসমিন সিদ্দিক।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও