'হার্ড ইমিউনিটি' মডেলে করোনা প্রতিরোধ করতে চায় ভারত!
২৪ এপ্রিল ২০২০, ০৩:০৫ পিএম | আপডেট: ১৭ মে ২০২৫, ০৪:২৬ এএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কঠোর 'লকডাউন' ব্যবস্থার মাধ্যমে ভাইরাসটি থেকে পালিয়ে থাকা নয়, বরং অধিক সংখ্যক জনগণের মাঝে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিয়ে 'হার্ড ইমিউনিটি' অর্জনের মাধ্যমে ভাইরাসটি প্রতিরোধ করার চিন্তা করছে ভারত। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে অনেকটাই সফল সুইডেন।
করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে 'হার্ড ইমিউনিটি' অর্জনের কৌশল হিসেবে যেটি বলা হচ্ছে সেটি হলো, বিস্তৃত আকারে এবং ব্যাপকভাবে একে ছড়াতে দেওয়া। যখন ভাইরাস এভাবে ছড়াতে থাকবে তখন সমাজে প্রচুর মানুষ এর দ্বারা আক্রান্ত হবে। যদি আক্রান্ত মানুষজন কভিড-১৯ হতে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে তাহলে তারা এই রোগ প্রতিরোধী হবে। ফলে ভাইরাস নতুন করে সংক্রমিত করার মতো কোনো মানুষ খুঁজে পাবে না। ফলে সংক্রমণের হার শূন্যে নেমে আসবে। এটাকেই বলা হচ্ছে 'হার্ড ইমিউনিটি' মডেল। সুইডেন এই মডেল প্রয়োগ করে কিছুটা হলেও সফল হয়েছে। তবে ভারতের মতো অধিক জনসংখ্যার দেশে কি 'হার্ড ইমিউনিটি' মডেলে করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব? এটা নিয়ে বিতর্ক আছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছে, সুইডেনের মডেলেই এগোচ্ছিল যুক্তরাজ্য। প্রাথমিক পর্যায়ে লকডাউনের পথে হাঁটেননি প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। কিন্তু তাতে সংক্রমণ বেড়েছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার পরে সেখানে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। অ্যামেরিকা একই ভুল করেছে বলে দাবি তাঁদের। আবার এর উল্টো যুক্তিও আছে। তাঁদের বক্তব্য, করোনা ভাইরাস বিষয়ে বিশদ তথ্য এখনও জানা যায়নি। লকডাউন করলেই যে এর সংক্রমণ বন্ধ করা সম্ভব, এমন কথা বলা যায় না। যদি তা হতো, তাহলে যে দেশগুলি আগে থেকেই লকডাউন করেছিল, সেখানে করোনার সংক্রমণ ছড়াতো না। বাস্তবে তা হয়নি। সংক্রমণ কমানো গেলেও বন্ধ করা যায়নি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো লকডাউনের পথে হাঁটেনি সুইডেন। ভেঙে পড়েনি অর্থনীতি। বরং জনগণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিয়ে অনেকাংশেই সফল দেশটি। দেশটি অত্যন্ত বুদ্ধি করে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারা বহু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও, জীবনযাত্রা একেবারে স্তব্ধ করে দেয়নি। তাতে সংক্রমণ হচ্ছে, মৃত্যুও হচ্ছে, কিন্তু সামাজিক ব্যবস্থা এবং অর্থনীতি পুরোপুরি ধসে পড়েনি। মৃত্যু যে কোনও রোগেই হতে পারে। সেই ভাবনাটিকে তারা গুরুত্ব দিয়েছে। এবং এখনও পর্যন্ত তারা তার ফলও পাচ্ছে। বস্তুত, গত সপ্তাহেই একটি সংস্থার করা গণভোটে সুইডেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ সরকারের পদক্ষেপের পক্ষে মত দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সুইডেনের চিফ এপিডেমিওলজিস্ট বলেছেন যে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানী স্টকহোমে 'গণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা' তৈরি হয়ে যেতে পারে। প্রতিবেশী দেশগুলো যখন তাদের সীমানা, স্কুল, বার, রেস্তোঁরা এবং কারখানাগুলি বন্ধ করে দিয়েছিল, সুইডিশ জনস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান জোহান কার্লসন তখন লোকদের বাড়ির ভিতরে থাকতে বলেননি। বলেছেন, আপনারা বাইরে বেরোন, স্বাভাবিক কাজকর্ম করেন, বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করুন। এটা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
গত এক মাস ধরে, সুইডেনের জীবন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একইরকম। খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। তবে লোকদের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং রেস্তোঁরা, বার, ক্যাফে এবং নাইটক্লাবগুলো কেবল বসার টেবিল পরিষেবা দিচ্ছে। ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য স্কুল উন্মুক্ত রয়েছে।
তবে বয়স্কদের মতো উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোকে রক্ষা করতে সাধারণ জনগণের মধ্যে গণ-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভাইরাসটির ছড়ানোর অনুমতি দেওয়ার কৌশলটি কিছুটা বিতর্কিত হয়েছে। কিছু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ যুক্তি দিয়েছেন যে, এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ।
সুইডেনের জনস্বাস্থ্য সংস্থার চিফ এপিডেমিওলজিস্ট ডা. অ্যান্ডারস টগনেল বলেছেন, 'সুইডেনের বড় শহরগুলোতে, বিশেষ করে স্টকহোম ও এর আশেপাশে এলাকায় আমরা এরই মধ্যে 'হার্ড ইমিউনিটি' অর্জনের পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমরা আরো বেশি সফলতা দেখতে পাবো। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের পরিস্থিতিও স্থিতিশীল।'
টেগনেল বলেছেন, 'স্যাম্পলিং এবং মডেলিংয়ের তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে যে স্টকহোমের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ এরই মধ্যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমরা 'হার্ড ইমিউনিটি'তে পৌঁছাতে পারবো।'
যেহেতু করোনাভাইরাসের ভ্যাক্সিন এখনও আবিষ্কৃত হয়নি, তাই 'হার্ড ইমিউনিটি' অর্জনের জন্য ব্যাপকভাবে একে ছড়াতে দিতে হবে। হিসেব করে দেখা গেছে, করোনার ক্ষেত্রে এটি অর্জনের জন্য মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মানুষকে আক্রান্ত হতে হবে।
একটি গবেষণা দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের ওয়েবসাইটে তাদের কাজ প্রকাশ করেছে, সেখানে অনুমান করা হয়েছে যে 'হার্ড ইমিউনিটি'তে পৌঁছানোর আগেই জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ লোক সংক্রামিত হতে পারে। এটি অবশ্যই বিপর্যয়কর হবে। কেননা সেক্ষেত্রে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ এতে আক্রান্ত হবে। অনেক মানুষ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হবে। ফলে তাদের জন্য হাসপাতাল এবং আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হবে।
এখন কথা হচ্ছে, এখন যে পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে তাদের চিকিৎসা করতেই রাষ্ট্র হিমশিম খাচ্ছে, যখন এর কয়েকগুণ লোকের জন্য হাসপাতাল সেবার প্রয়োজন হবে তখন কীভাবে সামাল দেবে সেটা বোধগম্য নয়। সেই সাথে কয়েক মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুঝুঁকি তো রয়েছেই।
প্রশ্ন হলো, ভারত বা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্য দেশগুলিতে সুইডেন মডেল গ্রহণযোগ্য কি?
সুইডেনের জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২৫। সেখানে ভারতে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করেন ৪৬৪ জন। ফলে বয়স্কদের আইসোলেশনে রেখেও সুইডেন যে ভাবে তরুণ এবং যুবকদের জীবনযাপন স্বাভাবিক রাখতে পারে, ভারতে তা সম্ভব নয়। স্ক্যানডেনেভিয়ার দেশ গুলিতে মানুষ এতই কম যে সেখানে এমনিতেই সামাজিক দূরত্ব রক্ষিত হয়। কিন্তু ভারতে জনঘনত্বের কারণেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা। ফলে এখানে এই মডেল সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। (সূত্র- সিজিটিএন।)
বিভাগ : বিশ্ব
- বেলাবতে ধান আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কৃষক নিহত
- শিবপুরে অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার
- সংস্কার কখনও বটগাছের মত এক জায়গায় দাড়িয়ে থাকে না: রহুল কবির রিজভী
- করিডোরের নামে খাল কেটে কুমির আনা হচ্ছে: নরসিংদীতে নূরুল হক নূর
- ইউপিডিএফ সদস্যদের হাতে অপহৃত রবি'র টেকনিশিয়ান ইসমাইলকে উদ্ধারের দাবি পরিবারের
- নরসিংদীতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ক্রীড়া উৎসব ও পুরস্কার বিতরণ
- পলাশে সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে কুপিয়ে আহত: ৩ ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার
- নরসিংদীতে ফুটবল প্রশিক্ষণের সমাপনী ও সনদ বিতরণ
- শিবপুরে প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় আরও একজন গ্রেপ্তার
- পলিটেকনিক ছাত্র শুভ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
- বেলাবতে ধান আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কৃষক নিহত
- শিবপুরে অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার
- সংস্কার কখনও বটগাছের মত এক জায়গায় দাড়িয়ে থাকে না: রহুল কবির রিজভী
- করিডোরের নামে খাল কেটে কুমির আনা হচ্ছে: নরসিংদীতে নূরুল হক নূর
- ইউপিডিএফ সদস্যদের হাতে অপহৃত রবি'র টেকনিশিয়ান ইসমাইলকে উদ্ধারের দাবি পরিবারের
- নরসিংদীতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ক্রীড়া উৎসব ও পুরস্কার বিতরণ
- পলাশে সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে কুপিয়ে আহত: ৩ ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার
- নরসিংদীতে ফুটবল প্রশিক্ষণের সমাপনী ও সনদ বিতরণ
- শিবপুরে প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় আরও একজন গ্রেপ্তার
- পলিটেকনিক ছাত্র শুভ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন