শিবপুরে শিক্ষার্থীদের সামনেই দুই শিক্ষকের মারামারি! 

০৮ নভেম্বর ২০১৯, ১২:৫৯ এএম | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৩১ পিএম


শিবপুরে শিক্ষার্থীদের সামনেই দুই শিক্ষকের মারামারি! 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর শিবপুরে সহকারী শিক্ষক কর্তৃক সহকারী প্রধান শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর জেরে শিক্ষার্থীদের সামনেই দুই শিক্ষকের মধ্যে মারামারি হয়েছে। উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের কামরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ফরম ফিলাপকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (০৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয়টির শিক্ষক মিলনায়তনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হারুন নামে অভিযুক্ত এক শিক্ষককে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান।

হামলার শিকার মো. রফিকুল ইসলাম নামের ওই সহকারী প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে ৮/১০ জন স্থানীয় লোক এই হামলা চালায়।

মো. রফিকুল ইসলামকে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।পরে তিনি নিজেই বাদী হয়ে শিবপুর মডেল থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামী করে মামলা করেছেন।মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, হারুন অর রশিদ (৪৩), তার ভাই জামাল উদ্দিন (৪৫), তার দুই ভাতিজা রাকিব মিয়া (২৭) ও আজিম মিয়া (২৫)।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের দায়িত্ব দেওয়া হয় শ্রেণি শিক্ষক আবদুস সাত্তার আফ্রাদকে তিনি এ দায়িত্ব নিতে না চাইলে বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামকে ফরম ফিলাপের দায়িত্ব দেন প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান।এই ঘটনায় অর্থনৈতিক স্বার্থে আঘাত লাগায় ক্ষুব্ধ হয়ে এমন অন্যায় কাজ করেছেন বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক হারুনঅর রশিদ। আগামী ১০ নভেম্বর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের শেষ দিন।

হামলার শিকার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রেণিকক্ষে বসে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ করছিলেন তিনি। কেন তিনি ফরম ফিলাপের কাজ করছেন এই নিয়ে শিক্ষক হারুন অর রশিদ উচ্চবাচ্য শুরু করেন। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সামনেই তার শার্টের কলার জাপটে ধরেন হারুন। পরে তিনিও পাল্টা  হারুনের শার্টের কলার চেপে ধরেন। এর ১০ মিনিটের মধ্যেই ক্ষুব্ধ হারুন তার বাড়ি থেকে ৮/১০জন স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে এসে সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুলের গলা চেপে ধরেন।সাথে থাকা যুবকরাও ইট ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে।এ সময় ৯ জন শিক্ষার্থীর ফরম ফিলাপের ১৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে চেয়ার, গ্লাস ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর করা হয়। পরে ব্যবস্থাপনা কমিটির ৩ সদস্য ও শিক্ষকরা মিলে তাদের থামান।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, ঘটনাটি এত বড় কিছু না, সামান্য কথা কাটাকাটির বিষয়।আরও কিছু জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হিসেবে তার (হারুন) নিয়োগ ছিল, টাকা খরচ করে অবৈধভাবে সহকারী শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়েছেন।খোঁজ নিলে আপনারা দেখবেন, তার বিএড সার্টিফিকেট ও নিয়োগ প্রক্রিয়াও অবৈধ। তার স্থানীয় প্রভাব ও টাকার কাছে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান বলেন, সহকারী শিক্ষক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের সহকারী

প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের ওপর এই ন্যাক্কারজনক হামলায় আমরা বিষ্মিত।স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিদ্যালয়ের ভেতরে এসে ৮/১০জন মিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে তাকে মারধর করা হয়েছে। আমার কক্ষে প্রবেশ করেও ভাংচুর করেছে তারা।এমনভাবে তার গলা চেপে ধরা হয়েছিল এতে তার মৃত্যু হতে পারতো।

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক হারুন অর রশিদ কে আটক করা হয়েছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



এই বিভাগের আরও