রায়পুরায় ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা: ৪৮ ঘন্টায়ও হয়নি মামলা

০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:২০ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ পিএম


রায়পুরায় ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা: ৪৮ ঘন্টায়ও হয়নি মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর রায়পুরায় দুর্বৃত্তের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মির্জারচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও  মামলা হয়নি। নিহত চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, রাজনৈতিক সহকর্মী ও পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন তারা।

গত শনিবার বিকেল ৪টার দিকে রায়পুরার মির্জারচর ইউনিয়নের শান্তিপুর বাজার এলাকার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে দুর্বৃত্ত্বের গুলিতে বিদ্ধ হন চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল। এ সময় উপস্থিত স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যানকে দ্রুত উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মো. জাফর ইকবাল (৫০) রায়পুরার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল মির্জারচর ইউনিয়ন পরিষদের পরপর দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন।

জানতে চাইলে নিহত চেয়ারম্যানের স্ত্রী মাহফুজা আক্তার বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে ও আধিপত্য বিস্তারের জন্যই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ মিয়ার নির্দেশে তাঁর কর্মী দুলাল আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে। গত ছয় থেকে সাত বছর ধরে আমার স্বামীর সঙ্গে তাঁদের দ্বন্দ্ব চলছিল। এই দ্বন্দ্বের জেরেই আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।

মাহফুজা আক্তার আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরও কারা কারা জড়িত তাদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করছি আমরা। চিহ্নিত জড়িত ব্যক্তিদের আসামী করে মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আজকালের মধ্যেই লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় যাবো আমরা।

স্থানীয়রা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরে চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল ইউনিয়নটির গ্রামরক্ষা বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত ঝামেলা নিস্পত্তি করতে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে শান্তিপুর বাজারে বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠক শেষ করে বিকেল ৪টার দিকে স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন স্থানে অবস্থান করছিলেন তিনি। এ সময় কে বা কারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যান। ওই গুলি তাঁর বুকের বাম পাশে বিদ্ধ হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় সঙ্গে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্পিডবোটে করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে রওনা হন। পৌনে পাঁচটার দিকে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিকেল ৫টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালে মির্জারচর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মিয়ার ছেলে মো. ফারুকুল ইসলাম। ওই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. জাফর ইকবাল। এর পরের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ফিরোজ মিয়া নিজেই। তিনিও জাফর ইকবালের সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে হেরে যান। এরপর থেকে তাঁরা দুজন স্থানীয়ভাবে প্রতিপক্ষ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

গত বছরের নভেম্বরে ইউপি নির্বাচনে পরাজয়ের পর সংঘর্ষ হলে ফিরোজ মিয়ার শতাধিক কর্মী-সমর্থক এলাকা ছাড়া হন। এরপর থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত তারা এলাকার বাইরে ছিলেন। গত শুক্রবার এই বিষয়ের মীমাংসার জন্য এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনায় বসে। তাৎক্ষণিক সমাধান না হওয়ায় পরবর্তী শুক্রবার আবার বসার তারিখ নির্ধারণ করে ফিরোজ মিয়ার কর্মী-সমর্থকেরা সভা ছেড়ে চলে যায়। পরদিন শনিবার বিকেলে শান্তিপুর বাজারের স্কুলমাঠ সংলগ্ন স্থানে চেয়ারম্যান জাফর ইকবালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া নিয়ে যখন কর্মী-সমর্থকেরা ব্যস্ত ছিলেন তখন ফিরোজ মিয়ার এলাকাছাড়া অনুসারীরা যার যার বাড়িতে উঠে পড়েন।

জানতে চাইলে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান জানান, চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর পরিবারের কাছ থেকে আমরা এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, তারা জানিয়েছেন, দ্রুতই থানায় মামলা করতে আসবেন। লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুততম সময়ে সেটি মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। 

 

 



এই বিভাগের আরও