তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত শিক্ষার্থীর

২১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫:১১ পিএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৫ এএম


তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত শিক্ষার্থীর

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে মো: সেলিম ভূঞা (২০) নামে এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর। মো: সেলিম ভূঞা নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আমীরগঞ্জ ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের মো: হজরত আলী ভূঞা ও মাজেদা বেগম দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। পেশায় দিনমজুর পিতা হজরত আলীও সম্প্রতি অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় বেকার দিন পার করছেন।

শিক্ষার্থী সেলিমের পরিবার ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়,  ২০০০ সালের ৬ জুন জন্মের পর থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মো: সেলিম ভূঞা। দিনমজুর পিতার এই সন্তান ছয় বছর বয়সে হাসনাবাদ ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ২০১২ সালে এই স্কুল থেকেই জিপিএ ফাইভ পেয়ে ভর্তি হয় হাসনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০১৬ সালে জিপিএ ফাইভ এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে জেএসসি,  ২০১৮ সালে এসএসসি (মাধ্যমিক) পাঁস করে জিপিএ ৪.২৮ পেয়ে। তারপর ভর্তি হয় নরসিংদী সরকারি কলেজে। সেখান থেকে অটো প্রমোশন পদ্ধতিতে মানবিক বিভাগ থেকে ২০২০ সালে জিপিএ ৪.৭৫  পেয়ে  এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পাস করে।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো: সেলিম ভূঞা জানান, ছোটকাল থেকেই আমার খুব ইচ্ছা আমি মাস্টার্স পাস করে সরকারি চাকুরি করবো। একেক সময় একেক জনের সহায়তায় আমি পড়াশোনা চালিয়ে এসেছি। ২০২০-২১ সেশনের গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় ৩৫.৫ মার্ক পেয়ে আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। এই মার্কে আমি অবশ্যই ভর্তি হতে পারবো। অন্যদিকে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ থেকে ৩ জানুয়ারির মধ্যে মৌখিক এবং কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আমার মার্ক যা আছে তাতে আমি ভর্তি হতে পারবো বলে আশাবাদী । আবার ভর্তি পরীক্ষায় আমার কোটাও রয়েছে। কিন্তু শংকায় আছি আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা নিয়ে। চট্রগাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ১৩ হাজার টাকার মতো দরকার, আমার কাছে এক টাকাও নেই। আমি পড়াশোনা করতে চাই। বাবা আগে দিনমজুরের কাজ করতেন, এখন অসুস্থ্য থাকায় কাজ করতে পারছেন না। ছোট ভাই মাঝে মধ্যে রাজমিস্ত্রীর কাজ করলেও সংসারই চলে না। আগামী দিনগুলোর পড়াশোনা এবং ভর্তির জন্য কেউ যদি আমার পাশে দাড়াতেন আমি পড়াশোনাটা শেষ করতে পারতাম।

সেলিমের স্কুল শিক্ষক হাসনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক দীপক কুমার দাস বলেন, সেলিম ভূঞা সবসময় শ্রুতিলেখক (তার পাশে একজন থাকে তার বলা উত্তর লিখে দেয়ার জন্য) পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে।এবার সে তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। আমরা চাইবো তার বাকি পড়াশোনাটা যাতে ভালোভাবে শেষ হয় এবং তার পাশে যাতে কেউ এসে দাড়ায়। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় থেকে সেলিম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভাতা পায়। এটা দিয়ে পড়াশোনা, খাবার, পোশাক কিছুই হয় না।

আমীরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান কবির আহমেদ ভূঞা বলেন, আমি ওই শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করবো। কতটুকু কি করা যায় সেদিকটা দেখবো।