“ঘোড়াশালে চুরির অপরাধে যুবক পিটিয়ে হত্যা পুলিশের” শীর্ষক সংবাদের প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে পুলিশের বিবৃতি

০৫ মে ২০২০, ০৩:১৩ পিএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম


“ঘোড়াশালে চুরির অপরাধে যুবক পিটিয়ে হত্যা পুলিশের” শীর্ষক সংবাদের প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে পুলিশের বিবৃতি

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

সম্প্রতি নরসিংদীর একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল “দৈনিক গ্রামীণ দর্পণ” এর ফেইসবুক পেইজে “ঘোড়াশালে চুরির অপরাধে যুবক পিটিয়ে হত্যা পুলিশের” শিরোনামে এবং “নরসিংদী প্রতিদিন” নামক একটি ফেইসবুক আইডি হতে “ঘোড়াশাল ফাঁড়িতে নেয়ার পর মৃত্যু, অভিযোগ পিটিয়ে হত্যা করেছে পুলিশ” শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়, যেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শেয়ার করেছেন এবং পড়েছেন।

প্রকাশিত উক্ত সংবাদ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ৩ সাংবাদিক গ্রেফতার বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে নরসিংদী জেলা পুলিশ। জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক ও জেলা পুলিশের মিডিয়া সমন্বয়ক রুপণ কুমার সরকার স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত সংবাদের বিপরীতে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। যা নিম্নরুপ:

 

উক্ত সংবাদ দুটিতেই উল্লেখ করা হয় যে “বিকাল ০৫ ঘটিকার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলা ও পলাশ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার ভাটপাড়া কদমতলা নামক স্থান থেকে ঘোড়াশাল ফাঁড়ির দুই পুলিশ সদস্য মান্নান কে ধরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তার আশপাশের এলাকার সিএনজি চালক ও ইজিবাইক চালক মান্নানকে ঘোড়াশাল ফাঁড়িতে গিয়ে দেখে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় আশপাশের লোকজনের সহায়তায় তাকে ঘোড়াশালের রৌশন জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।” উক্ত সংবাদ দুটিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে “ঘোড়াশাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলম জানিয়েছেন, তাকে একটি চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসলে সে হঠাৎ পড়ে যায়। এই অবস্থায় তাকে ঘোড়াশালের রৌশন জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার ষ্ট্রোকে মারা গেছে বলে জানায়।”

সকলের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, মূল ঘটনার সাথে উক্ত দুটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কোনো প্রকারের মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি উক্ত দুটি পত্রিকার কোন স্টাফ রিপোর্টার বা প্রতিবেদকের সাথে ঘোড়াশাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলমের কোন ধরনের কথাই হয়নি। 

বস্তুত মৃত মান্নান ঐ দিন দুপুরে তার শ্যালক মিলনসহ মাধবদী শেখেরচর বাজার হতে কাপড় নিয়ে গাজীপুর জেলার টঙ্গীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। দুপুর আনুমানিক ০২.৩০ ঘটিকার সময় ঘোড়াশাল চেকপোষ্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দাঁড়া করান। তাদের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের যেতে না দেয়ার কারণে তার শ্যালক মিলন পুলিশের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। এরই একপর্যায়ে মান্নান তার সিএনজি চালিয়ে দ্রুত ঘোড়াশাল ব্রীজের উপর দিয়ে কালীগঞ্জ, গাজীপুরের দিকে পালিয়ে যান। ঘোড়াশাল ব্রীজ পার হওয়ার পর সে মিলনের জন্য সিএনজি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। অনুমান ১৪.৫০ ঘটিকায় কালীগঞ্জের দিক হতে কালীগঞ্জ থানার টহলরত পুলিশের একটি পিকআপ গাড়ী ব্রীজের দিকে আসতে দেখে মান্নান সিএনজি নিয়ে কালীগঞ্জ থানাধীন বাইপাস রোড দিয়ে জামালপুর রোডের দিকে চলে যান। কালীগঞ্জ থানা পুলিশের পিকআপটিও সে সময় ঐ একই পথে টহল দিতে দিতে সিএনজির পিছনে পিছনে জামালপুর রোডের দিকে যেতে থাকলে মান্নান মনে করেন পুলিশ পিকআপটি তাকে ধাওয়া করছে। এতে তিনি কিছুদুর গিয়ে বাম দিকের একটি সরু রাস্তা দিয়ে খলাপাড়া গ্রামের ভিতর দিকে গিয়ে ফিরোজ মিয়া (৫৫), পিতা-মৃত নৈমুদ্দিন এর বাড়ীর সামনে থামেন। ঐ সময় পুলিশ পিকআপটি সোজা জামালপুরের দিকে চলে যায়। তখন ফিরোজ মিয়াসহ স্থানীয় ফরহাদ ভূইয়া (৪৯), পিতা-খবির উদ্দিন ভুইয়া তার নিকট উপস্থিত হয়ে তার নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে তিনি তার নাম ঠিকানা বলেন এবং ঐ গ্রামে মোজাম্মেল হক (৫০), পিতা-মৃত সাদেক শেখ নামে তার বিয়াই আছে বলে জানান।

এতে উপস্থিত লোকজন তার সঙ্গে বেয়াইসুলভ হাস্যরসাত্বক কথাবার্তায় মেতে উঠেন। উক্ত আলাপচারিতার কোনো পর্যায়ে পুলিশ তাকে মেরেছে বলে কোন বক্তব্য তিনি প্রদান করেননি। এভাবে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে মান্নান হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে উপস্থিত লোকজন তার মাথায় পানি ঢালেন এবং তার বিয়াই মোজাম্মেল হককে সংবাদ দেন। তারপর মোজাম্মেল হক দ্রুত সে স্থানে উপস্থিত হয়ে মান্নান এর বাড়ীতে মোবাইল ফোনে সংবাদ দেন। কিছুক্ষনের মধ্যে মিলন মিয়া মান্নানকে ফোন দিলে উপস্থিত ফিরোজ মিয়া ফোনটি রিসিভ করে তার অসুস্থ্যতার সংবাদ জানালে কিছুক্ষন পর মিলনসহ তার নিকট আত্মীয়রা খলাপাড়া গ্রামে উপস্থিত হন এবং মান্নানকে অজ্ঞান অবস্থায় সিএনজি যোগে প্রথমে ঘোড়াশালস্থ রওশন জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। উক্ত হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত নরসিংদী সদর হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বিকাল অনুমান ১৭.২০ ঘটিকায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মান্নানকে মৃত ঘোষণা করেন।

উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ সৃজন, সম্পাদন, প্রকাশ ও প্রচারের অপরাধে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ জহিরুল আলম, ইনচার্জ ঘোড়াশাল পুলিশ ফাঁড়ি বাদি হয়ে দৈনিক গ্রামীণ দর্পণ এর বার্তা সম্পাদক ও স্টাফ রিপোর্টারসহ নরসিংদী প্রতিদিনের প্রকাশক ও সম্পাদককে আসামী করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর অধীনে পলাশ থানায় একটি মামলা রুজু করেন। ইতোমধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লিখিত আসামীদের গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করেছেন।



এই বিভাগের আরও