পলাশে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ফসলি জমি থেকে মাটিকাটার মহোৎসব

০৫ জানুয়ারি ২০২০, ০৫:২৭ পিএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৬:০৫ পিএম


পলাশে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ফসলি জমি থেকে মাটিকাটার মহোৎসব

পলাশ প্রতিনিধি:
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নে চলছে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ফসলি জমিতে মাটি কাটার মহোৎসব। ইউনিয়নের অধিকাংশ ফসলি জমিতে প্রকাশ্যে ভেকু মেশিন বসিয়ে ২৫ থেক ৩০ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতা।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, দুই নেতার নেতৃত্বে রয়েছে একাধিক মাটি কাটার স্পট। আর এসব ফসলি জমির মাটি বিক্রি হচ্ছে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন ইটভাটা গুলোতে। দীর্ঘদিন ধরে এসব মাটি কাটার কাজ চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। এতে করে হুমকীর মুখে পড়েছে ওই ইউনিয়নের অধিকাংশ ফসলি জমি। শুধু ফসলি জমি নয়, অব্যাহত মাটি কাটার ফলে মাটি আনা নেয়ায় ব্যবহৃত ট্রলির বেপরোয়া চলাচলে গ্রামীণ সড়কগুলোতে ধুলাবালি ও কাদামাটিতে ভরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে করে দুর্বিসহ দিন পার করতে হচ্ছে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।

ডাঙ্গা ইউনিয়নের ভিরিন্দা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ওই গ্রামের প্রত্যন্ত ফসলি জমির মাঠে চাষাবাদ না করে ভেকু মেশিন দিয়ে অবাধে মাটি কাটা হচ্ছে। কয়েক মিনিট পরপর ট্রলি ভরে এসব মাটি নেয়া হচ্ছে পাশ্ববর্তী ইটভাটাগুলোতে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চলে এসব মাটি কাটার কাজ।

স্থানীয়রা জানান, ওই গ্রামের অধিকাংশ জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক লাক মিয়া ও ভিরিন্দা ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন। তারা দীর্ঘদিন ধরে এখান থেকে মাটি কাটছেন।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিরিন্দা গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, কৃষকরা এখন জমিতে চাষাবাদ না করে তাদের কাছে কম দামে জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। কেউ মাটি বিক্রি করতে না চাইলে জোর করে তাদের জমির মাটি কেটে নেয়া হয়। তাদের ভয়ে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।


ডাঙ্গার কাজৈর গ্রামের শফিকুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইউনিয়নজুড়ে অর্ধশত অবৈধ ইটভাটা থাকার কারণে শুধু এলাকার ফসলি জমি নষ্ট নয়, চলাচলের সড়কগুলোও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অধিকাংশ ইটভাটার মালিক জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়ায় এসব নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।


মাটি কাটার বিষয়ে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা লাক মিয়া ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা জসিম উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমতি নিয়েই এসব মাটি কাটছেন।


এ ব্যাপারে ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবের উল হাই বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমতি নেয়ার বিষয়টি স¤পূর্ণ ভুয়া। ডাঙ্গায় অধিকহারে ইটভাটার কারণে ফসলি জমির পাশাপাশি রাস্তাঘাটগুলোও ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একাধিকবার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।


এ বিষয়ে পলাশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারহানা আলী জানান, মাটি কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



এই বিভাগের আরও