পলাশে গ্রেপ্তারের পর চিকিৎসাধীন আসামীর মৃত্যু

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৭:১৭ পিএম | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৭ পিএম


পলাশে গ্রেপ্তারের পর চিকিৎসাধীন আসামীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নরসিংদীর পলাশে পুলিশী নির্যাতনে শেরখান মিয়া (২৩) নামে এক আসামীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহত শেরখান পলাশ উপজেলার পাঁচভাগ গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পলাশ উপজেলার বরাব বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।
শেরখান চি‎িহ্নত মাদক ব্যবসায়ী ও তার বিরুদ্ধে ৩টি ডাকাতিসহ ৪টি মামলা রয়েছে দাবী করে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো: নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, গ্রেফতারের পর মোটরসাইকেল থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টার সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিল। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

নিহত শেরখানের বড় ভাই ফারুক মিয়া অভিযোগ করে বলেন, রোববার সন্ধ্যায় পলাশ থানার উপ পরিদর্শক ইফতেখার, সহকারী উপ পরিদর্শক মঞ্জুর, রুবেল, কনস্টেবল দেলোয়ার, মানিকসহ ৬ জনের একদল পুলিশ বরাব বাজার থেকে শেরখানকে আটক করে। এসময় পুলিশ তাকে মোটরসাইকেলযোগে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় সে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ সদস্যরা তাকে বেদম মারপিট করে। আটকের পর রাতে পরিবারের লোকজন থানায় গেলে শেরখানের নিকট থেকে ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে জানায় পুলিশ।
এসময় পরিবারের সদস্যরা শেরখানকে থানার গারদের ভেতরে পড়ে থাকতে দেখেন। জিজ্ঞেস করলে দায়িত্বরত কনস্টেবল জানায়, শেরখান অসুস্থ হওয়ায় তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে, এখন সে ঘুমাচ্ছে। সেইরাতে শেরখানের জ্ঞান না ফিরলে পরিবারের লোকজন কান্নাকাটি শুরু করলে পুলিশ পরিবারের লোকজনসহ সকালে শেরখানকে অচেতন অবস্থায় পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে চিকিৎসক তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়া হলে সাথে সাথে শেরখানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফারুক মিয়া আরও বলেন, পরে সাদা কাগজে সাক্ষর না দেয়ায় ঢাকা মেডিকেল থেকে আমার ভাইয়ের লাশ হস্তান্তর করেনি। আমার ভাই মাছের ব্যবসা করতো, তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই, তবে ৫ বছর আগে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে একটি ডাকাতি মামলায় জড়িয়েছিল, সেই মামলাও নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আর কোন মামলা নেই। পুলিশের বেদম মারপিটের কারণে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমরা এ হত্যার ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করবো।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ আমিরুল হক শামীম কর্তব্যরত চিকিৎসক রোজি সরকারের বরাত দিয়ে বলেন, পুলিশ কর্তৃক হাসপাতালে নিয়ে আসা রোগী শেরখানের শরীরে কোন আঘাতের আলামত পাওয়া যায়নি। এসময় তার জ্ঞান থাকলেও সে কাউকে চিনতে পারছিল না। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল পাঠানো হয়।

পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো: নাসির উদ্দিন বলেন, চি‎িহ্নত মাদক ব্যবসায়ী ও ২০১৩ সালের তিনটি ডাকাতিসহ চার মামলার আসামী শেরখানকে গ্রেফতার করে মোটরবাইকে করে থানায় নিয়ে আসার পথে সে লাফিয়ে পড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় দুই পুলিশ ও গ্রেফতারকৃত আসামী শেরখান আহত হয়। আহতাবস্থায় সাথে সাথে তাকে উপজেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে আবারও সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পলাশ হাসপাতাল ও পরে নরসিংদী হাসপাতাল থেকে সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তাকে কোনপ্রকার মারধর করা হয়নি।



এই বিভাগের আরও