পলাশে জোরপূর্বক ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়

১৩ জানুয়ারি ২০২১, ০৬:৩৯ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩ এএম


পলাশে জোরপূর্বক ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়

আল আমিন মিয়া:
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের মাঠজুড়ে চাষ হয় ধান, গম, ধঞ্চে, ডাটা, সরিষা, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন শস্য। চারপাশে রয়েছে বসতবাড়ি। অদূরে পর পর অন্তত ১৮টি ইটভাটার অবস্থান। নিয়ম নীতি না মেনে অবাধে জোরপূর্বক এসব ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এতে কৃষি জমির উর্বরতা কমে যাওয়াসহ নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ।

সরেজমিন ওই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রায় জমি থেকেই ৩ থেকে ৪টি ভ্যাকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে জমিগুলো পুকুরে পরিনত হবার উপক্রম হয়েছে। কয়েক মিনিট পর পর ট্রাক্টর (ট্রলি) ভরে এসব মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ইটভাটাগুলোতে। ডাঙ্গার কাজৈর গ্রামের বসতবাড়িগুলোর পাশে রয়েছে প্রায় ৪০০ বিঘা ফসলি জমি। এরইমধ্যে প্রায় ৮০ বিঘা জমির মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার যেনো মহোৎসব চলছে। জমির মধ্যখানে খনন করে মাটি কাটার ফলে পাশের জমিগুলোও ভেঙ্গে পড়ছে।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, দিনে-দুপুরে কৃষকদের কৃষি জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। আর সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। প্রতিবাদ করলে মারধর ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে কৃষকদের। আবার অনেকেই এক প্রকার বাধ্য হয়ে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করছেন।

ডাঙ্গার কাজৈর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর কুদ্দুস মিয়া বলেন, বেপরোয়াভাবে ট্রলি দিয়ে ইটভাটার মাটি আনা-নেয়ার ফলে গ্রামের সব রাস্তাই ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এছাড়া ধুলাবালিতে আশেপাশের ঘরবাড়ি, সবজি বাগান, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কিছু বললেই ইটভাটার মালিকরা হুমকি দিয়ে যায়। তাদের কাছে সাধারণ কৃষকরা অনেকটা জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন।

ভ্যাকু চালকদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, এখান থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রলি মাটি নিতে পারছেন। মাটি কাটার বিষয়ে তারা জানান, ইটভাটার মালিক এসব জমি কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। মালিকদের কথায় তারা এখান থেকে মাটি কাটছেন।

কিন্তু আব্দুল রহমান ও শমসের আলীসহ স্থানীয় কৃষকরা জানান, ফসলি জমির মাটি তারা বিক্রি করেননি। জোরপূর্বক মাটি কাটা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করায় মাটিখেকোরা বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা প্রভাশালী বলে কেউ তাদের বাঁধা দিতে সাহস পায় না। জনপ্রতিনিধিরা দেখেও না দেখার ভান করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র ডাঙ্গা ইউনিয়নেই ছোট বড় ১৮ থেকে ২০টি ইটভাটা রয়েছে। যার অধিকাংশই ফসলি জমিতে। এসব ইটভাটাগুলোর অধিকাংশরেই পরিবেশ ও কৃষি অফিসের ছাড়পত্র নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান সাবের উল হাই বলেন, জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অত্যাধিক ইটভাটায় এলাকার ফসলি জমি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতির বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে অনেকবার অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা ইয়াসমিনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।