নরসিংদীতে মারা যাওয়া তিন ব্যক্তির করোনা পজিটিভ, আক্রান্ত ১২ শত ছাড়ালো

২০ জুন ২০২০, ০৫:৪৪ পিএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৭ পিএম


নরসিংদীতে মারা যাওয়া তিন ব্যক্তির করোনা পজিটিভ, আক্রান্ত ১২ শত ছাড়ালো

নিজস্ব প্রতিবেদক: 

নরসিংদীতে উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এক নারীসহ তিন ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে করোনা পজিটিভ এসেছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৩ জন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। জেলার ৬ উপজেলা মিলিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১২০৭ জনে। অন্যদিকে আক্রান্ত হওয়ার পরে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫০০ জন ব্যক্তি।

শনিবার (২০ জুন) এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন নরসিংদীর সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন।

এ নিয়ে ৭০ দিনের মাথায় জেলাজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়েছে। গত ৭ এপ্রিল জেলায় প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের পর ৫৩ দিনে অর্থাৎ গত ৩০ মে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়ায়। অন্যদিকে পরবর্তী ৫০০ ব্যক্তি আক্রান্ত হতে সময় লাগে চারভাগের একভাগ সময়ে অর্থাৎ মাত্র ১৩ দিন। আরও ২০০ ব্যক্তি আক্রান্ত হতে সময় লাগলো ৪ দিন।

এদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর পজেটিভ আসা তিন ব্যক্তি হলেন, সদর উপজেলার খোদেজা বেগম (৬৩), মাধবদীর মো. বাবুল (৫২) ও মনোহরদীর মোজাম্মেল হক (৪৬)। করোনার উপসর্গ নিয়ে নমুনা দেওয়ার সাত দিনের মাথায় তাঁদের পরিবার জানতে পারলেন যে, মৃত্যুর সময় তারা করোনা আক্রান্ত ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার উপসর্গ নিয়ে খোদেজা বেগম গত ১৫ জুন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়বেটিকে ভুগছিলেন। এর আগে ১৩ জুন তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মোজাম্মেল হক জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ১৭ জুন রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে মারা যান। তারও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল গত ১৩ জুন। অন্যদিকে মো. বাবুল নিজ বাড়িতে শ্বাসকষ্টে মারা যান গত ১৮ জুন। গত ১২ জুন তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ জুন শনিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে মোট ৭৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরদিন পরীক্ষার জন্য রাজধানীর মহাখালীর ইন্সটিটিউট অফ পাবলিক হেলথে পাঠানো হয়। এসব নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের তালিকা শুক্রবার (১৯ জুন) রাতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসেছে। ওই তালিকায় নতুন করে আরও ১৩ জনকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলার ৩ জন, মনোহরদী উপজেলার ৪ জন, শিবপুর উপজেলায় ৪ জন এবং রায়পুরা উপজেলা ও বেলাব উপজেলায় একজন করে ব্যক্তি রয়েছেন। এছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স এর আওতায় ১৮ জুন আইসিডিডিআরবিতে পাঠানো ১২টি নমুনার মধ্যে ৬ জনকে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে সদর উপজেলার ৩ জন ও শিবপুর উপজেলার ৩ জন রয়েছেন।

জেলা করোনা প্রতিরোধ জরুরি সেল সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১৯ জুন) পর্যন্ত জেলার ৬টি উপজেলা থেকে মোট ৬৩৭১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তার মধ্যে পরীক্ষা শেষে ৫৫৬০ জনের নমুনার ফলাফল পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১২০৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। জেলাজুড়ে আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৯৬ জন, রায়পুরায় ৮২ জন, পলাশে ১০০ জন, শিবপুরে ১০৭ জন, বেলাবতে ৬৪ জন ও মনোহরদীতে ৫৮ জন ব্যক্তি রয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে ৩২ জন আক্রান্ত ব্যক্তি বিভিন্ন হাসপাতালে এবং ৬৫২ জন হোম আইসোলেশনে আছেন।

এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে জেলার তালিকাভুক্ত ২৪ জন ব্যক্তি মারা গেছেন। জেলাজুড়ে করোনায় মারা যাওয়া এসব ব্যক্তিদের মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ ১৪ জনই সদর উপজেলার বাসিন্দা। এছাড়া বেলাব ও রায়পুরা উপজেলায় ৩ জন করে, মনোহরদী উপজেলায় ২ জন এবং পলাশ ও শিবপুর উপজেলায় একজন করে রয়েছেন। অন্যদিকে পুরো জেলায় উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও অন্তত ৩২ জন।

সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন জানান, করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ওই তিন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত ছিলেন, বিষয়টি গতকাল শুক্রবার রাতে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল হাতে পাওয়ার পর আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তাদের পরিবারের সকল সদস্যের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া নতুন করে আক্রান্তদের পরিবারের সদস্য ও সংস্পর্শে আসা লোকজনের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে ও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য করা হবে।

 



এই বিভাগের আরও