ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে শুরু করেন পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা

২১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:০৭ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ পিএম


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে শুরু করেন পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা
নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে আফজাল হোসেন নামে এক যুবক বেকারের তালিকায় নাম লেখাননি। লিখেছেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের নাম, ‘সোলস এগ্রো লিমিটেড’। চাকরির পেছনে না ছুটে তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিচ্ছেন। তাকে ঘিরে সাবলম্বী হচ্ছে আরও কয়েকটি পরিবার। আফজাল  হোসেনের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার আটিবাজারের হিজলতলী গ্রামে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন। পরিবারে মা-বাবা ছাড়াও আছেন একভাই, দুইবোন। বড় ভাই ব্যাংকার। আফজাল হোসেন জানান ‘সোলস এগ্রো লিমিডেট’ তাদের পারিবারিক ব্যবসা। ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে চাকরির পিছে না ছুটে শুরু করেন পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা। এখন এই ফার্ম শুধু তার না, পরিবারেরও স্বপ্ন। এভাবে চার চারটি ফার্মের মালিক আফজাল হোসেন। এমন একটি ফার্ম আটিবাজারের দাঁড়িপাড়ায়। ৫২ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত পোল্ট্রি ফার্মে কিচির মিচির করছে তিন হাজার দুইশ’টি মুরগীর বাচ্চা। আফজাল হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘ ৬০/৬৫ দিনে বাচ্চাগুলো বিক্রির উপযোগী হয়। প্রতিটি বাচ্চার পেছনে খরচ হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। বিক্রি হয় ১৮০ টাকায়। অসুখ-বিসুখ কম হলে খরচ আরও কম পড়ে। বাড়ে লাভের পরিমাণ।’ স্থানীয় বাজার ছাড়াও বিক্রি হয় রাজধানীর কৃষি মার্কেট, মহাখালী, ধানমণ্ডির বাজারগুলোতে । আগোরা, মিনা বাজারের মতো চেইন শপেও সাপ্লাইয়ের চিন্তা আছে বলে জানান তরুণ উদ্যোক্তা আফজাল হোসেন। পোল্টিফার্ম দিয়ে নিজে যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি স্থানীয়দের কর্মসংস্থান হচ্ছে বলে জানান তিনি। চারটি ফার্মে কাজ করছেন আটজন শ্রমিক। যারা শুরুতে থাকা খাওয়াসহ বেতন পান চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। ছয় সাতমাসের অভিজ্ঞতা হলে বেতন বেড়ে দাঁড়ায় সাত আট হাজারে। সঠিকভাবে চললে প্রতি ৭০/৮০ দিনে দুইজন কর্মচারি খাটিয়ে ফার্ম থেকে লাভ আসবে প্রায় এক লাখ টাকা। এমনটাই জানান আফজাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশুনা করে কেন এই পোল্ট্রি-ফার্ম? এমন প্রশ্নের জবাবে আফজাল হোসেন বলেন, ‘দেশের প্রেক্ষাপটে আমারা খাদ্য ঘাটতিতে আছি। আমাদের খাবারের বড় একটা অংশ আসে দেশের বাইরে থেকে, রপ্তানির মাধ্যমে। অথচ আমাদের যে সম্পদ আছে তার সুষ্ঠু ব্যবহার করলেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি। এছাড়া শিক্ষিত মানুষ কৃষিতে না আসলে কৃষির উন্নয়ন হবে কী করে। সেই ভাবনা থেকে পোল্ট্রিতে আসা। এছাড়া যেহেতু আমাদের পারিবারিক ব্যবসা পোল্ট্রি ফিডের উপর। সেহেতু এই ব্যবসায় আসতে তেমন অসুবিধাও হয়নি।’ পোল্ট্রিফার্মে ব্যবসাকে শিক্ষিত বন্ধু-বান্ধব কোন চোখে দেখে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকেই ভালো চোখে দেখে না। আবার অনেকেই বেশ উৎসাহ দেয়। আমার এক বন্ধু আছে যে পড়াশুনা করা অবস্থায় একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করে। সে চল্লিশ হাজার টাকা বেতন পায় বলে আমাকে এবং আমার চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসায়ী আরেক বন্ধুকে অবহেলা করে কথা বলতো। একদিন তাকে বললাম, “তুমি বেতন পাও চল্লিশ হাজার টাকা। আর আমরা কর্মীদের বেতন দেই সত্তর হাজার টাকা।” এরপর সে চুপসে যায়।’ ব্যবসায় লাভ থাকলে ঝুঁকি থাকবেই। আফজাল হোসেন জানালেন, অনেকসময় অসুখ-বিসুখে অনেক মুরগী মারা যায়।  অতিরিক্ত গরম ও ঠাণ্ডা এরা সইতে পারে না। মারা যায়। এসব ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ব্যবসা করতে হয়। সরকার নির্ধারিত রেটের থেকে বেশি রেটে বাচ্চা কিনতে হয়। ফলে এটাও লাভের পথে বড় একটা বাধা বলে জানান আফজাল হোসেন। শিক্ষিত যুবকের মুরগীর খামার দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন মানুষজন। আফজাল হোসেন নিজের স্বপ্নটাকে তাদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। বিলিয়ে দেন পরিশ্রম ও উদ্যোক্তা হওয়ার বার্তা। আফজাল হোসেনের আরেকটি পরিচয় তিনি ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাহ-সভাপতি। তারকাছে জানতে চাওয়া হলো, ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িতরা বেশিরভাগ সময় নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে খবরের শিরোনাম হন। আপনি দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও  এমন চ্যালেঞ্জিং ও গ্রাম্য পেষা বেছে নিলেন কেন? আফজাল হোসেনের সহজ স্বীকারোক্তি, ‘আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। সেই পারিবারিক চেতনা থেকে রাজনীতি করি। রাজনীতি আমার আয়ের উৎস নয়। ভালোবাসা।’


এই বিভাগের আরও