জেলাজুড়ে ধানের ফলনে খুশি হলেও মূল্য নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা

১১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:১৩ এএম | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:০৪ পিএম


জেলাজুড়ে ধানের ফলনে খুশি হলেও মূল্য নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা
শরীফ ইকবাল রাসেল ॥ নরসিংদীতে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অর্জিত হয়েছে লক্ষ্যমাত্রাও। শুধু তাই নয়, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে বেশী রোপা আমনের আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা। কৃষকরা জানান, অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতেই রোপা আমন ধান কাটা শুরু করেন কৃষকরা। এখন সব এলাকায় পুরোদমে চলছে আমন ধান সংগ্রহের কাজ। কৃষকদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। কৃষকদের পাশাপাশি কৃষাণীরাও সমানতালে ধান সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর ব্রি- ৪৯, ৬২ ও বিনা-৭ জাতের ধানের পাশাপাশি প্রথম বারের মতো ব্রি- ৫২ জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ব্রি- ৫২ জাতের ধান চাষে আগ্রহ বাড়াতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে উপজেলার কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে উফশি ও স্থানীয় জাত মিলে পলাশে ৩৫৪৫ হেক্টর, রায়পুরায় ২৮৫৫০ হেক্টর, শিবপুরে ১০০০০ হেক্টর, বেলাবতে ৫৫৩৬ হেক্টর, মনোহরদীতে ১০৫০০ হেক্টর ও সদর উপজেলায় ৩০৫০ হেক্টরসহ মোট ৪১,১৮১ হেক্টর জমিতে এবার রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিলো ৪০,৫১১ হেক্টর জমি এবং উৎপাদিত ধানের পরিমান ছিলো ১০২৭৯০ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে এবছর আবাদ হয়েছে ৪১,১৮১ হেক্টর রোপা আমন। গত বছরের চেয়ে এবার এক হাজারেরও বেশী জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক দুযোর্গ ও পোকামাকড় থেকে মুক্ত থাকার ফলে কৃষকরা এবছর বিঘা প্রতি ধান পাচ্ছেন ১৮ থেকে ২২ মণ। পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের নোয়াকান্দা গ্রামের কৃষক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। তাছাড়া পোকার আক্রমনও এবার খুববেশী প্রভাব বিস্তার করতে না পারায় এবছর আশাব্যঞ্জক ফলন হয়েছে। এবারের ফলনে খুবই খুশি কৃষকরা। একই উপজেলার সরকারচর গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, এবার এক বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে এবার ধান হয়েছে প্রায় ১৮ মণ। বর্তমান বাজারধরে আটশত টাকা মণ হিসেবে শুধুমাত্র ধানেই বিক্রি আসে প্রায় পনের হাজার টাকা। এছাড়া খড়কুটো বিক্রি করে আরো পাওয়া যাবে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মতো। এভাবে এক বিঘা জমিতে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে আয় আসে প্রায় বিশ হাজার টাকা। তাই এবার ধানের ফলন ভালোই হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। নরসিংদী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হাই জানান, চলতি মৌসুমের রোপা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। নানা কর্মসূচির পাশাপাশি শ্রমিক সংকট নিরসনে কৃষিযন্ত্র ব্যবহারেও তাদের উৎসাহ দেয়া হয় এবং কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. লতাফত হোসেন জানিয়েছেন, নরসিংদী একটি শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে দিনে দিনে কৃষি জমি কমছে, আর বাড়ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তারপরও গত বছরের চেয়ে এবার ১ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। সমস্ত ধান কাটা হলে এবারের উৎপাদনের পরিমানটা জানা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত যা কাটা হয়েছে, সে হিসেবে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। তবে ধানের ন্যায্যমূল্য নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।


এই বিভাগের আরও