নরসিংদীর সরকারি কলেজগুলোর এইচএসসির ফলাফলে ব্যাপক বিপর্যয়

২৬ জুলাই ২০১৮, ০৫:৩৭ পিএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পিএম


নরসিংদীর সরকারি কলেজগুলোর এইচএসসির ফলাফলে ব্যাপক বিপর্যয়
নরসিংদী সরকারি কলেজ। জেলার প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি। এবারের এইচএসসি পরিক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী এসএসসিতে জিপিএ-৫ নিয়ে ভর্তি হলেও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪ জন। আর মোট ২ হাজার ৪ শত শিক্ষার্থীর মধ্যে অনুর্ত্তীণ হয়েছে ৬৭৫ জন। এ নিয়ে শিক্ষকদের গাফিলতি দায়িত্বহীনতাকে দায়ি করেছেন জেলার সচেতন মহল। তবে কলেজের অপ্রতুল অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকটকে ফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে দেখছেন কলেজের শিক্ষকরা। একই অবস্থা নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজ ও সরকারি শিবপুর শহীদ আসাদ কলেজ। সবকটি কলেজেই মানবিক বিভাগে সবচেয়ে বেশি ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। নরসিংদী সরকারি কলেজের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের এইচএসসি পরিক্ষায় ২ হাজার ৪ শত শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে অনুর্ত্তীণ হয়েছেন ৬৭৫ জন। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৪৩০ জন অংশ নিয়ে অনুর্ত্তীণ হয়েছে ৩৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৪ জন। মানবিক বিভাগ থেকে ৮৯৭ জন অংশ নিয়ে অনুর্ত্তীণ হয়েছেন ৪০৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ১ হাজার ৭৩ জন অংশ নিয়ে অনুর্ত্তীন হয়েছেন ২৩৩ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ জন। এছাড়া নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ১ হাজার ১৪ জন শিক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১২৪ জন অংশ নিয়ে ৬৮ জন অনুর্ত্তীণ হয়েছেন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২৭১ জন অংশ নিয়ে ১২৯ জন অনুর্ত্তীণ হয়েছেন এবং মানবিক বিভাগ থেকে ৬১৯ জন অংশ নিয়ে ৩০৪ জন অনুর্ত্তীণ হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিতে থেকে কেউ জিপিএ-৫ পায়নি। অপরদিকে জেলার আরেকটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি শিবপুর শহীদ আসাদ কলেজ থেকে তিনটি বিভাগে ১ হাজার ৫২১ জন শিক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশ নেয়। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৭১ জন অংশ নিয়ে অনুর্ত্তীণ হয়েছেন ১৩৬ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৪৯৩ জন অংশ নিয়ে অনুর্ত্তীণ হয়েছেন ৩৩৯ জন এবং মানবিক বিভাগ থেকে ৮৫৭ জন অংশ নিয়ে ৬২২ জন অনুর্ত্তীণ হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নরসিংদী সরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘যেখানে বেশিরভাগ সময় অধ্যক্ষ মহোদয় সপ্তাহে তিন দিন ঢাকা থেকে কলেজে আসেন। নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা করেন না, সেখানে এর চেয়ে ভাল কি আশা করতে পারেন? আমরা তো সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগেই থাকি সবসময়। আর আমাদের কলেজের প্রায় ৬০% শিক্ষক আসেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। যার বেশিরভাগই যাতায়াত করেন ট্রেনে। কলেজেই এসেই তাঁরা থাকেন যাওয়ার ট্রেন ধরার জন্য। এ ব্যাপারে কেউ কোন ভাল পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যার প্রভাব পড়েছে এবারের এইচএসসির ফলাফলে।’ তবে নরসিংদী সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহানারা বেগম বলেন, ‘কলেজের সর্বোচ্চ পাঠদান নিশ্চিত করণে আমরা সর্বাত্তাক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কলেজেটিতে সারা বছর উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি, স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর শ্রেণীরসহ বিভিন্ন পরিক্ষায় থাকায় এবং পরোক্ষ নানা জটিলতায় ক্লাস করানোর সুযোগ হয় না। বছরে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনীর যদি মাত্র ৬০/৭০ ক্লাস করানো হয়, তাহলে কিভাবে ভাল ফলাফল করা সম্ভব? এছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এখানে যার খুব অভাব।’ নরসিংদী প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল পারভেজ বলেন, ‘যতদূর জানতে পেরেছি বর্তমানে নরসিংদী সরকারি কলেজেসহ সকল সরকারি কলেজের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘ছাত্র-শিক্ষক’সম্পর্কটুকু গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন। এখানে শিক্ষকরা তাদের মেধাটুকু কাজে না লাগিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে কোচিং কিংবা প্রাইভেট পড়ানোর দিকে ঝুঁকে দিচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতেই আজকের ফলাফল বিপর্যয়।’ নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটির মূল সমস্যা হচ্ছে অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকট। যার কারনে শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক পাঠদানটি সম্ভব হয় না। ফলাফল বিপর্যয়ে শিক্ষক হিসেবে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। আমাদেরও কিছুটা গাফিলতি আছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে যে পরিমান অবকাঠামো ও শিক্ষক আছে তাতে দেড় হাজার শিক্ষার্থীকে ভালভাবে পাঠদান করা সম্ভব। সেখানে আমাদের পাঠদান দিতে হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে। তাই শিক্ষার্থীরা কলেজে ক্লাসমুখী না হয়ে বাইরে কোচিংমুখী হচ্ছে। আর আমি সপ্তাহে ৩ দিন আছি সেটা সত্যি নয়।’ নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা মিয়া বলেন, বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, শিক্ষকদের তদারকি না থাকায় পর্যাপ্ত ক্লাস হচ্ছে না। তাই শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষকরাই নিয়মিত কলেজমুখী না হওয়ায় দিনে দিনে বিপর্যয় হচ্ছে। যা আমাদের সময় এতটা ছিল না। বর্তমানে সরকারি কলেজগুলোতে গর্ব নিয়ে ভর্তি হলেও, লজ্জা নিয়ে বের হতে হচ্ছে।’


এই বিভাগের আরও