নরসিংদীতে উৎপাদন হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি

০৬ মার্চ ২০১৮, ০৭:০৬ এএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৮ এএম


নরসিংদীতে উৎপাদন হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি
অনলাইন ডেস্ক [caption id="attachment_1863" align="alignnone" width="400"] ছবিঃসংগৃহীত[/caption] নরসিংদীতে ফেরোমন ফাঁদ (ট্র্যাপ পদ্ধতি) ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে সবজি ক্ষেতে একদিকে কমছে কীটনাশকের ব্যবহার, অপরদিকে উৎপাদিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত সবজি। এতে কম খরচে উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজি বিদেশে রপ্তানী হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নরসিংদীর বিভিন্ন উপজেলার সবজির ক্ষেতগুলোতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে বসানো হয়েছে প্লাস্টিকের কৌটায় ফেরোমন ফাঁদ (ট্র্যাপ পদ্ধতি)। ঝুলানো এসব ফাঁদের কৌটায় কম খরচে মেশানো হয় বিভিন্ন জাতের ক্ষতিকর স্ত্রী পোকার ঘ্রান সমৃদ্ধ ঔষধ। এতে ছুটে এসে ফাঁদের পানিতে পড়ে মারা পড়ছে ক্ষতিকর পুরুষ পোকা। এ পদ্ধতিতে ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকা দমন হওয়ায়, বাড়তি খরচ করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে না কৃষককে। চলতি বছর ফেরোমিন ফাঁদের ব্যবহারে লাভবান হয়েছেন অনেক বেগুন চাষী। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়ায় বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। শুধু বেগুন নয় কাকরুল, শসা, চিচিংগা, বরবটি, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বিষমুক্তভাবে উৎপাদনে ব্যবহার হচ্ছে এই ফেরোমন ফাঁদ। একদিকে কীটনাশকের ব্যয় কম ও অন্যদিকে উৎপাদিত বেগুন স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় রপ্তানী হচ্ছে দেশের বাইরে। এতে ন্যায্য দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। শিবপুর উপজেলার খড়কমারা গ্রামের কৃষক মো. রমিজ উদ্দিন বলেন, ফেরোমন পদ্ধতিতে সবজি চাষে বিঘাপ্রতি ১ থেকে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকার ওষধ খরচ হয়ে থাকে। এর আগে কীটনাশক প্রয়োগে বিঘাপ্রতি খরচ পড়তো ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যেতো। একই এলাকার অপর কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ফেরোমিন বা জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহারে শুধু উৎপাদন খরচই কমে না, বাজারে বিষমুক্ত সবজির কদরও বেশি। তাই বাজারে বাড়তি দামও পাওয়া যায়। একইভাবে ফেরোমিন পদ্ধতিতে সবজি চাষে নানামুখী উপকার ও লাভজনক হওয়ার কথা জানান, এই এলাকার কৃষক, মনির হোসেন, রকিবুল আলমসহ অন্যান্য কৃষকরা। শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন জানান, ইউরোপ থেকে প্রতিনিধি দল কয়েক বছর পরপর এলাকার বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখতে আসেন। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সন্তুষ্ট হওয়ায় এই এলাকার সবজি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানী হয়ে থাকে। এতে ভোক্তারা যেমন স্বাস্থ্যসম্মত সবজি পেয়ে থাকেন তেমনি কৃষকরা বাড়তি দাম পেয়ে লাভবান হয়ে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নরসিংদীর উপ-পরিচালক লতাফত হোসেন বলেন, বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে ফেরোমিন ফাঁদসহ জৈব বালাইনাশক বিভিন্ন পদ্ধতি জেলার কৃষকের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব, উৎপাদন খরচ কম হওয়াসহ নানাবিদ সুবিধার কারনে এসব পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন সচেতন কৃষকরা। সারাদেশ থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন সবজি বিদেশে রপ্তানী হয়ে থাকে। এরমধ্যে নরসিংদী থেকেই যায় ৬ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর জেলার সাতশত হেক্টর জমিতে ফেরোমিন ফাঁদের ব্যবহার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।